গুরুকে জীবনের কেন্দ্র বিন্দু করনের মাধ্যমে প্রকৃত সুখী হওয়া যায়। গুরুদেব লিখেছেন গুরুকে তিনবার প্রদক্ষিন করে দক্ষিন হাত দিয়ে পা স্পর্শ করে, আরেকবার প্রদক্ষিন করে প্রনাম করতে।এই আচরণ ভক্তি বৃদ্ধির সহায়ক।
সত্য ধর্ম্মে দীক্ষা একবারই হয়,যে বীজে আমরা পরমেশ্বর থেকে বিচ্যুত হই,যার মধ্যে আমাদের গুণ লুকায়িত থাকে,গুরু পাপগ্রহণ এবং অভেদ জ্ঞান পূর্বক সেই মুক্তি বীজ প্রদান করেন।আমাদের সেই বন্ধনে তিনি টেনে রাখেন।তাকে ঘিরে যদি জীবনের সকল বিষয় আবর্তিত হয় তবে গুরুকে প্রদক্ষিণ করার সার্থকতা কিছুটা সম্পাদিত হবে। আমাদের প্রবর্তক গুরু সেই ভক্তির পথ আমাদের দেখালেন।তার করুনার গুণে আমরা এই মহান কার্যে প্রবর্তিত হলাম।নতুবা সম্ভব হতো না।তাই সত্য ধর্ম্মে আদীষ্টের গুরুত্ব অনস্বীকার্য।
গুরুদেব তো বলে গেছেন যখন যিনি আদীষ্ট হবেন তাঁর বাক্য অক্ষরে অক্ষরে পালন করতে,নইলে সত্য অনুকূলে থাকা সম্ভব না, কিঞ্চিৎ যদি পারতো তারা এই সুখ থেকে বঞ্চিত হতো না।
আমাদের প্রবর্তক গুরু আমাদের শিখিয়েছেন প্রথমবার গুরুদেব এঁর চরন স্পর্শ করে শেষের প্রদক্ষিন এর পর ষষ্টাঙ্গে প্রণাম করতে।এভাবে প্রণামের দ্বারা নিজ ভার গুরুর কাছে নিবেদন অর্থাৎ সমর্পন এর বাসনা হৃদয়ে উদিত হয়।আমরা পার্থিব ভাবে মাথা নত করি কারন ভক্তি মার্গে মাথা নত করেই প্রবেশ করতে হয়।নিজের আত্মোন্নতির স্বার্থে গুরুর প্রতি নির্ভরতা তৈরী না হলে সাধন জীবন বৃথা।
" গুরুদেব,না যদি হয় তোমায় পাওয়া, বৃথা যে মোর সকল চাওয়া, জীবন তরী বৃথাই বাওয়া সাধন পারাবারে" । যাঁতার মধ্যে শস্য পেসাইয়ের সময় কীলক ধরে থাকা শস্য গুলো ভিন্ন বাকি সব ঘুর্ণিত চুর্ণিত হয়ে যায়।
সত্য ধর্ম্মে গুরু হওয়ার উপযুক্ত গুনাবলী সম্পন্ন আদীষ্ট যিনি দীক্ষা রূপ পরম জন্ম দানের যোগ্যতা অর্জন করেন,জগতের মঙ্গলের জন্য, আমাদের উদ্ধারের পথ দেখান তাকে পার্থিব ভাবে প।প্রদক্ষিণ করার তাৎপর্য ভীষণই গুরুত্বপূর্ণ।
ভক্তি বৃদ্ধির সহায়ক এই প্রয়োজনীয় কার্য গুরুদেব লিপিবদ্ধ করা শর্তেও জ্ঞানের অভাবে সবার চোখ এড়িয়ে গেছে।জানার পরও বহু ব্যাক্তি উপেক্ষা করছে কারন তারা গুরুদেব কে মানতে পারে না,বরং। বর্তমান আদীষ্ট সাধকের সান্নিধ্য থেকেও তারা বঞ্চিত। আমাদের গৌরব এবং লজ্জা উভয় প্রকার অনুভূতি হয় কারন আমরা এমন রত্ন পেয়েও যেভাবে যত্ন করতে হয় সেভাবে সমর্থ হচ্ছি না।
প্রেমের সংজ্ঞা:
সৃষ্টের সর্ব্ব শ্রেষ্ট গুণ যাহা প্রেম জননী। ভালোবাসাই অঙ্কুর অপর ভালবাসার উন্নত পরিণতিকে প্রেম কহে অর্থাৎ অপরকে আত্মায় সংলগ্ন করাকে বা অপরের সুখ-দুঃখাদি অবস্থাতে আপনাকে উপনীত করাকে প্রেম কহে। যে গুণ থাকিলে মরিয়াও বাঁচে, আত্মাতে যাহার অভাব কখনও হয় নাও হইতেও পারে না, যাহা দুঃখকেও সুখে পরিণত করে, সুতরাং যাহা সুখদুঃখ চায় না, লাভালাভের অপেক্ষা করে না, কেবল অভীষ্টকে পাইবার জন্য প্রবর্তিত করে, তাহাকে প্রেম কহে। যে গুণ থাকিলে ঐ গুণের অজনকে পাইলে প্রাণ শীতল হয়, আত্মা তৃপ্তিলাভ করে, মন অভিনব আনন্দরসময় ভাবের উদয় হয়, হৃদয় নবভাবে কার্য্যে প্রবৃত্ত হয়, ও পরমাত্মার প্রকৃত কার্য্য করা হয়; আর না পাইলে প্রাণ কিছুতেই শীতল হয় না হৃদয় নীরস হয়, মন ভাবশূন্য প্রায় হইয়া পড়ে, জীবাত্মার ক্লেশের ইয়ত্তা থাকে না, এবং পরমাত্মার উৎকর্ষ ও শান্তি হয় না। মূল কথা যে গুণে ঐ পরম গুণের ভাজনের দোষ গুণে আসিয়া পড়ে, দোষ দেখিতে বাসনা হয় না, কেবল গুণই লক্ষ্য হয়, কথা শুনিলে প্রাণ জুড়ায়, না শুনিলে জগৎ অন্ধকারময় ৰোধ হয়, অভাবে জীবস্মৃত থাকিতে হয়, ভাবে সকল অশান্তি দূরে যায়, ফলতঃ। ঐ গুণের প্রকৃত ভাজনের চিহ্নমাত্র না পাইলে কিছুতেই জীবিত থাকা যায় না, তাহাকে প্রেম কহে। প্রেমে সকল গুণের গুণত্ব (সংস্কার) হয়, এজন্য উহা গুণের গুরু বলিয়া কথিত হইতে পারে। যেমন কান্তিহীন দেহের কমনীয়তা কাঞ্চনযোগে বাড়ে না, সেইরূপ প্রেমসাধনাহীন আত্মার উন্নতি অন্য গুণে তত হয় না, ইহার সাধনা সর্ব্বপ্রথমে আরম্ভ হইলে ও সর্ব্বশেষেও শেষ হয় না, সুতরাং ইহা অসীম কাল সাধনের ধন। সর্ব্ব ভূমণ্ডলের সকল লোকের হৃদয়েই প্রেম আছে, (বা প্রেমাঙ্কুর আছে), সকলেই উহার জন্য পাগল, সকলেই ঐ ধনের ভিখারী। ঐ সুধাময় রসের স্বাদ পাইলে মোহিত না হয়, এমন কেহই নাই, তথাপি উহার স্বরূপ নির্দেশ করা বোধ করি কাহারও সাধ্য নহে, কেন না যাহার অন্ত পাওয়া যায় না, তাহার প্রকৃত স্বরূপ কিরূপে নিদ্দিষ্ট হইবে? দুঃখময় সংসারে সুখের চন্দ্র প্রেম, ভালবাসা জীবনের বন্ধন, জীবন উহাতেই উৎপন্ন, উহাতেই স্থিত এবং উহার ব্যতিক্রমেই ধ্বংস প্রাপ্ত হয়। বিষময় বিষয়-ধনে প্রেমসুধা-ব্যতীত কিছুতেই শান্তি নাই। এ ধন আঁধারে আলোক, দুঃখে অশান্তিনাশক ও বর্দ্ধনশীল, সুখে সুখ-বর্দ্ধক, যৌবনে বৃদ্ধত্ব ও বার্দ্ধক্যে তারুণ্য সম্পাদক এবং জীবনের চিরসম্বল। এই অসীম গুণের বর্ণন, অসীম কালেও শেষ হইবার নহে। কোন মহাত্মা এ বিষয়ে যাহা বলিয়াছেন তাহা এই- ভালোবাসাকে প্রেম কহে।
---ঈশ্বর বিশ্বময়ী দেবী।
0 মন্তব্যসমূহ