ওঁং
সত্য-ধর্ম্ম
কলুষানল দগ্ধানাং শান্তয়েঽমৃতবারিভিঃ।
প্রকাশ্যতে সত্যধর্ম্মো মুক্তয়ে মুক্তিকাঙ্ক্ষিণাম্।।
সংবিধান
সত্যধর্ম্ম সম্প্রদায়ের জীবন ধারা
সত্যধর্ম্ম আত্মোন্নতির ধর্ম্ম অর্থাৎ গুণান্বিত হইবার পথ যেমন সত্য পথালম্বী হওয়া।
বিষয়
ক) বসবাসস্থল।
খ) বস্ত্র পরিধান।
গ) খাদ্য।
ঘ) সামাজিক অবস্থানে নারী ও পুরুষের তুল্য ভুমিকা।
ঙ) সামাজিক প্রথা।
চ) সামাজিক বিচার পদ্ধতি ।
ছ) শিক্ষা।
২। বৈবাহিক বিধি
ক) কাহাদের সহিত বিবাহ সম্পর্কে আবদ্ধ হইবে।
খ) বিবাহ রীতিনীতি।
গ) বৈবাহিক অনুষ্ঠান ও সামাজিক রীতি (কিরূপে জাঁকজমকপূর্ণ অনুষ্ঠান)।
৩। সামাজিক ধর্ম্মীয় অনুষ্ঠান।
ক) পূজা পার্ব্বণ।
খ) উৎসবাদি।
গ) আনন্দ উৎসব অনুষ্ঠান ( বিশেষ দিনক্ষণ)।
৪। পরলোকগত
ক) সৎকার।
খ) শ্রাদ্ধ।
ওঁং
সত্য-ধর্ম্ম
সংবিধান
সামাজিক রীতিনীতি
১/(ক) বসবাসস্থল:-
১/ গৃহকে আশ্রমে পরিনত করাই সত্যধর্ম্মীদের একমাত্র মূল উদ্দেশ্য।
২/ পরশ্রীকাতরতা দূর করিয়া নিজের সামর্থ অনুসারে গৃহ নির্মাণ করিতে হইবে।
৩/ অর্থ থাকিলেও পরিবারের সদস্য হিসাবে গৃহ নির্মাণ করিতে হইবে। অযথা অট্টালিকা নির্মাণের প্রয়োজন নাই।
৪/ গৃহ নির্ম্মাণে সত্যনিষ্ঠা পালনই প্রধান ভূমিকা হওয়া প্রয়োজন। ভবিষ্যতের চিন্তা করিয়াই গৃহ নির্মাণের পরিকল্পনা নির্ণয় করাই কর্ত্তব্য।
৫/ সরকারের অনুমতি লইয়া পৈত্রিক বা নিজস্বকৃত জমিতে গৃহ নির্মাণ করিতে হইবে।
৬/ কোন দানকৃত জমিতে গৃহ নির্মাণ করা যাইবে না। যদি সরকার বসতি বাবদ কোনও জমি প্রদান করে তাহার উপর গৃহনির্মাণ করিতে পারে।
৭/ ঋণ লইয়া গৃহাদি নির্মাণ সম্ভব কিন্তু ঋণ পরিশোধ করিবার মত ক্ষমতা অবশ্যই থাকিতে হইবে। ঋণের কিস্তি পরিশোধের পরিমাণ এমন হইতে হইবে যে যাতে সরকার অথবা প্রেরকের উপর আর্থিক চাপ না আইসে।
৮/ জোর করিয়া জমি অধিকার করিয়া গৃহ নির্মাণ করা যাইবে না।
৯/ সত্যনিষ্ঠা পালনের মাধ্যমে কারণ দর্শাইয়া সরকারের অনুমতি পত্র লইয়া গৃহনির্মাণ করিতে পারে।
১০/ ভাড়া থাকলে কেহ ঐ বাড়ি অধিকার করিতে পারিবে না। যতদিন থাকবে ততদিন ভাড়া দিয়া যাইতে হইবে চুক্তি অনুরূপ।
১১/ গৃহ নির্মাণে প্রকৃতিক ভারসাম্য বজায় রাখিয়া করিতে হইবে এবং গৃহ নির্মাণের নীতি বজায় রাখিয়া সমস্ত কার্য করিতে হইবে।
১২/ গৃহের নামকরণ ‘গুরু ভবন’ বা ‘গুরুনাথ ভবন’ এবং "সত্য ভবন" রাখা হইলে গৃহের প্রত্যেক সদস্যকে উপাসক হইতেই হইবে অন্যথায় নামকরণ পরিবর্ত্তন করিতে হইবে।
১৩/ গৃহ নির্মাণে কোনও রূপ মিথ্যার আশ্রয় লইয়া কোনও কার্য করা যাইবে না।
১৪/ গৃহের বাহিরে ও ভিতরে প্রণব রাখিতে হইবে।
১৫/ যে কোনো দিকে মুখ করিয়া গৃহ নির্মাণ করিতে পারে, দেখিতে হইবে গৃহ খোলামেলা যেন হয়।
১/খ) বস্ত্র পরিধান :-
যে পোশাক মার্জিত উহাই ধর্ম্মার্থীর পরিধান হওয়াই কর্তব্য।
১/ ভারতীয় বিবাহিত নারীদের শাড়ি প্রধান পরিধান, উহাই সত্যধর্ম্মী সতীদের পরিতে হইবে।
২/ বাড়িতে বিবাহিত নারীদের শাড়ি পরিয়া থাকিতে হইবে।
৩/ বাড়িতে পুরুষেরা কখনই খালিগায় থাকিতে পারিবে না।
৪/ অবিবাহিত মহিলারা সাধারণ জামা অথবা চুরিদার (মার্জিত হওয়া প্রয়োজন) পরিধান করিয়া থাকিতে হইবে।
৫/ উপাসনা চলাকালীন সময় বিবাহিত সতীগণকে সাদা লাল পার শাড়ি পরিধান করিতে হইবে।
৬/ যৌবন অতিক্রান্ত মহিলাদের চুড়িদার পরিধান করিতে হইবে।
৭/ উপাসনা চলাকালীন সময় পুরুষদের সাদা পাঞ্জাবি পায়জামা পরিতে হইবে।
৮/ সত্যধর্ম্মীদের গৃহে মহিলারা শয়নকালে আপন পছন্দ অনুরূপ পোশাক পরিধান করিতে পারে কিন্তু উহা যেন বাটিস্ত অন্য কোনো সদস্য না দেখে।
৭/ উপাসনা চলাকালীন সময় পুরুষদের সাদা পাঞ্জাবি পায়জামা পরিতে হইবে।
৮/ সত্যধর্ম্মীদের গৃহে মহিলারা শয়নকালে আপন পছন্দ অনুরূপ পোশাক পরিধান করিতে পারে কিন্তু উহা যেন বাটিস্ত অন্য কোনো সদস্য না দেখে।
৯/ সত্যধর্ম্মীদের গৃহে পুরুষেরা একমাত্র পায়জামা ও হালকা জামা বা পাঞ্জাবি পরিধান করিবে, খালি গায়ে থাকিতে পারিবে না।
১০/ সত্যধর্ম্মী পুরুষেরা কখনই হাঁটুর উপর পায়জামা অথবা প্যান্ট পরিতে পারিবে না একমাত্র যৌবন অতিক্রান্ত নহে এমন শিশুরা হাটুর উপর প্যান্ট পরিতে পারে।
১১/ ভারতীয় উপমহাদেশের বাইরে যাহারা সত্য ধর্ম্ম গ্রহণ করিবে তাহাদের দেশের প্রধান পোশাক পরিধান করতে পারে, কেউ যদি মনে করে ভারতীয় পোশাক অর্থাৎ সত্যধর্ম্মে যে পোশাকের কথা বলা হইয়াছে তাহাও পরিধান করিতে পারে।
১২/ অন্যান্য ধর্মীয় সম্প্রদায় হইতে সত্যধর্ম্মে প্রবেশ করিলে তাহারা তাহাদের পোশাক পরিবর্তন করিবার প্রয়োজন নাই যদি চাহেন পরিবর্তন করিতে পারেন কিন্তু মার্জিত হইতে হইবে।
১/(গ) খাদ্য :-
যে খাদ্য গ্রহণে শরীর রক্ষা হয় কিন্তু ঠান্ডা থাকে অর্থাৎ পাশের উদগ্রেব কম হইবে তদনুরূপ আত্মোন্নতির সহায়ক, দেশের বায়ু মন্ডলের অনুরূপ আহার্য কার্য সাপেক্ষ। উহা গুরু যেমন বলিবেন তদনুরূপ করিতে হইবে।
১/ সাধারণ সত্যধর্ম্মীগণ সকল খাদ্য খাইতে পারে।
২/ দুগ্ধজাত খাদ্য খাইলে আমিষ জাতীয় খাদ্য অর্থাৎ মাছ, মাংস ও ডিম খাইতে পারিবে না সারা জীবনের জন্য।
৩/ যাহারা আমিষ জাত খাদ্য খাইবে তাহাদের বিশেষ করিয়া ডিম পদার্থ না খাওয়াই উচিত।
৪/ সত্যধর্ম্মীরা দেশ-কাল-পাত্র বিবেচনায় খাদ্য নির্ধারিত করিয়া চলিবে।
৫/ যাতে শরীর রক্ষা হয় তদনুরূপ উৎকৃষ্ট নির্দোষ খাদ্যই সত্যধর্ম্মীদের প্রধান খাদ্য উপকরণ।
৬/ সাধনা কাল হইতে যেরূপ খাদ্য আহার করিতে হয় তাহা গুরু মুখে জ্ঞাতব্য।
৭/ সাধনা বিনা সকল শাক সব্জি খাওয়া যাবে।
৮/ পবিত্র শালন্য শষ্য (আতপ চাল)।
৯/ তরকারী = পটল কাঁঠাল মানকচু, কাকরোল, শুকাসান(বদরী) করঞ্জ, ককটী(কাকুড়), রম্ভা(কলা, ডুম্বরী(ডুমুর), কন্টকন্টক(খেজুর), আমরম্ভা(কাঁচাকলা), বালরম্ভা(ঠটেকলা), রম্বারণ্ডক(থোড়), রম্ভার মূল, বার্ত্তাক(বেগুন ), মূলক (মূলা) ও ঋদ্ধি (আলু, মিষ্টি আলু) ।
১০/ যবের ছাতু, ময়দা।
১১/ ডাল= মূগ, মাসকলাই, ছোলা, মটর প্রভৃতি তুষবর্জ্জিত শুভ্র। শস্য।
১২/ শাক = বালশাক, কালশাক, পটোলপত্র, বাস্ত্তক( বেতয়াশাক) ও হিলমোচক(হিঞ্চাশাক)।
১৩/ খাদ্য গ্রহণকালে পূর্ব, পশ্চিম, উত্তর ও দক্ষিণ মুখ করিয়া খাইতে হইবে, কোনাকুনি মুখ করিয়া খাইতে নাই তাহাতে পেটের গোলযোগ দেখা দেয়।
১/(ঘ) সামাজিক অবস্থানে পুরুষ ও মহিলাদের তুল্য ভূমিকা :-
১/ সত্যধর্ম্মের নিয়মে নিখিল বিশ্বের সকল নর-নারিরাই ভ্রাতা ও ভগ্নি এইরূপ জ্ঞান করিতে হয়।
২/ নারি ও পুরুষ সকলেই সমানরূপ কার্য্য করিতে পারেন শক্তি অনুরূপ।
৩/ সৎ সতীগণ দুজন দুজনকেই সম্মান করিয়া চলিতে হয়।
৪/ পরিবারে মেয়েদের প্রতি সম্মান সূলভ আচরণ করিতে সত্যধর্ম্মীরা বাধ্য। তাহাদের উপর বিশেষ রূপে উচ্চশিক্ষা দিবার ব্যবস্থা করিয়া থাকে। নারীদের সম্মানার্থে পুরুষদের বিশেষ শিক্ষায় শিক্ষিত করিতে বাধ্য।
১/(ঙ) সামাজিক প্রথা :-
১/ সৎসতী মিলিত হইলে আমরা “ঈশ্বর গুরু স্মরণম্” বলিয়া উভয় উভয়কে সম্মোধন করিয়া থাকি।
২/ প্রতিদিন মাতা ও পিতা কে প্রণাম করিয়া থাকি।
৩/ সাধনা কালে গুরুদেব ও মাতা পিতা কে প্রণাম করি এবং গুরুর আজ্ঞা লইয়া অন্যান্য গুরুজনকে প্রণাম করিতে হয়।
৪/ সকল সত্যধর্ম্মীরা নিখিল নর-নারীকে ভাতৃ ও ভগ্নী জ্ঞান করিয়া থাকি।
৫/ পরিবারের সকলকে সম্মান সূচক আচরণ করিয়া থাকি।
৬/ সত্যধর্ম কোনও রূপ হিংসা বিদ্বেষ মান্যতা দেয় না।
৭/ পরিবারের গুরুজনদিগের সেবা করিতে সত্যধর্ম্মীরা বাধ্য।
৮/ কোনো স্থানে গমনের পূর্ব্বে অভিভাবকের অনুমতি লইয়া বাহির হইয়া থাকি।
৯/ সত্যধর্ম্মের বিধানে যে সকল উপদেশ আছে তাহা সৎ-মাত্রেই যে সকল উপদেশ এবং সেই সকল রীতি পালন করিতে আমরা বাধ্য থাকিবো।
১০/ জ্ঞান এবং ধর্ম্ম উভয়েরই চর্চা সত্যধর্ম্মীদের করিতে হয়।
১১/ সত্যধর্ম্মীরা সত্যের অবিরোধে অর্থ উপার্জন করিয়া থাকি। অসৎ উপায় কে সত্যধর্ম্ম মান্যতা দেয় না।
১২/ প্রতিটি সৎ-সতী সরল ব্যবহার করিতে অভ্যাস করি। কপটতা মহাপাপের মূল।
১৩/ মনুষ্যের কথা দূরে থাকুক, পশু পক্ষীকেও অকারণ ভয় প্রদর্শন করি না, তাহাদিগকে স্নেহ করি।
১৪/ সত্যধর্ম্মীরা সর্ব্বদা সত্যকথা বলিতে বাধ্য। সত্যধর্ম্মীগণ কখনও মিথ্যাকে মান্যতা দেয়না।
১৫/ পৃথিবীতে যতপ্রকার ধর্ম্ম প্রণালী আছে, সমুদায় ধর্ম্ম প্রণালী আপাততঃ পরস্পর প্রতিয়মান হইলেও বস্তুতঃ পরস্পর বিরুদ্ধ নহে, ইহা সাধারণ জনগণকে পরিজ্ঞাপিত করা সত্যধর্ম্ম প্রচারের প্রথম উদ্দেশ্য।
১৬/ উল্লিখিত ধর্ম্ম প্রণালী সমূহ অবলম্বন করিয়া অনেক অনেক মহাত্মা সিদ্ধ হইয়া গিয়াছেন বটে কিন্তু এই পরিবর্তনশীল জগতে শরীরের ন্যায় মনের অবস্থারও বংশ পরম্পরায় পরিবর্তন সাধন হইতেছে। সম্প্রতি মনুষ্যের দেহের ও অন্ত করণের যেরূপ অবস্থা তাহাতে আর পূর্ব্বানুষ্ঠিত কঠোর সাধনা করিয়া প্রায়শঃ সিদ্ধিলাভে সমর্থ নহে। এজন্য এই বর্ত্তমান সময় আমাদিগের গুরুদেব যেরূপ স্বল্পয়াস-সাধ্য সাধনার উপদেশ দিয়াছেন, তাহা সর্ব্ব সাধারণের ক্লেশ রাশি নিবারণার্থ সর্ব্বত্র প্রকাশিত করা সত্যধর্ম্ম প্রচারের দ্বিতীয় উদ্দেশ্য।
১৭/ দেবদেবীগণ পূর্ব্বেও যেমন ছিলেন, এখনও তেমনি আছেন, পূর্ব্বে তাঁহাদিগের অর্চ্চনা করিয়া যেরূপ ফল পাইত, এখনও প্রকৃত পূজা করিতে পারিলে তদ্রুপ ফলই প্রাপ্ত হওয়া যায়। কিন্তু পূজা পদ্ধতি প্রায় পূর্ব্ববৎ থাকিলেও উহার অন্তর্গত অতি প্রধান ও গুহ্য দুই চারিটি কথা স্থানে স্থানে নাই, বোধ করি পূর্ব্বতন পূজকগণ স্বীয় গৌরব রক্ষার্থ ঐগুলি গ্রন্থ হইতে ফেলাইয়া দিয়াছিলেন, কারণ তাহা হইলে অন্যে ঐ পুস্তক দেখিয়া পূজা করিয়া আর ফল পাইবে না, কিন্তু তাঁহারা গুপ্ত অংশের পরিজ্ঞান সিদ্ধির ফল পাইতে পারিবেন। এইরূপ যে সকল অংশ গুপ্ত হইয়াছে, তাহা পুনঃ প্রচারিত করা সত্যধর্ম্মের তৃতীয় উদ্দেশ্য।
১৮/ কি শাক্ত, শৈব, বৈষ্ণব ধর্ম্ম, কি বৌদ্ধ ধর্ম্ম, কি ইহুদি, খৃষ্টান ও মুসলমান ধর্ম্ম-সকল ধর্ম্মেই ঐরূপ কতকগুলি কথা আছে, যাহার অর্থ আপাততঃ কিছুই বুঝা যায় না, অথবা অতিশয় কুৎসিত বলিয়া জানা যায়, কিন্তু ঐ সমস্তের যে অতি ক্রমশঃ বীত রাগ হইতেছেন, একারণ তাহাদিগকে দৃঢ় রাখা এবং উল্লিখিত অসত্য সংকলনের অপসরণ পূর্ব্বক সত্য প্রকাশ সত্যধর্ম্মের চতুর্থ উদ্দেশ্য।
১৯/ কোন একজন প্রকৃত ধর্ম্মার্থী কখনই হিন্দু, মুসলমান, খৃষ্টান প্রভৃতি সকল ধর্ম্মাবলম্বী বলিয়া পরিচিত হইতে পারেন না, অথচ যিনি প্রকৃতরূপে ধর্ম্মানুষ্ঠান করেন, তিনি ঐ সকল ধর্ম্মের কোনটীরই বিরোধী নহেন। সুতরাং তাঁহাকে যদি জিজ্ঞাসা করা যায় যে, আপনি কোন ধর্ম্মাবলম্বী, তবে তিনি কোনও প্রচলিত ধর্ম্মের নাম করিতে পারেন না, কেননা তৎসমুদয়ই বর্ত্তমান সময়ে সম্প্রদায় বিশেষের মধ্যে নিবদ্ধ হইয়াছে বলিয়া সর্ব্বধর্ম্ম মর্ম্মভাব অপূরিত, একারণ তাঁহাকে বলিতে বাধা হইতে হয়, যে যে ধর্ম্ম সত্য অর্থাৎ যথার্থ বিষয় সমূহে পরিপূর্ণ, যে ধর্ম্ম সত্য অর্থাৎ নিত্যকাল অনন্তকাল বিদ্যমান ছিল, আছে ও থাকিবে, এবং যে ধর্ম্ম সত্য অর্থাৎ সত্য স্বরূপ পরমপিতার একমাত্র অভিপ্রেত, আমি সেই ধর্ম্ম অবলম্বন করিয়াছি। এক্ষণে বিবেচনা করিয়া দেখ উল্লিখিত ধর্ম্মের কোনও একটি নাম হইতে পারে না। কিন্তু যেমন জগদীশ্বর নিরুপাধি হইলেও ভক্তগণ তাঁহাকে নানাবিধ নামে আখ্যায়িত করিয়াছেন তদ্রূপ উল্লিখিত ধর্ম্মেরও নানারূপ নামকরণ হইয়াছে। কিন্তু ততগুলো নাম জগতে প্রচালিত হইয়াছে কোনটাই ব্যাপক নহে, সকল গুলি ব্যাপ্য, কেবল “ব্রাহ্মধর্ম্ম” এই নামটি ব্যাপক, কিন্তু উক্ত নামটি ধর্ম্মের মর্ম্ম প্রকাশ না হইয়া কেবল ধর্ম্মানুষ্ঠানের লক্ষ্যার্থের প্রকাশক হইয়াছে, এজন্য ঐ নামটিকেও সর্ব্বাঙ্গ সম্পন্ন বলিয়া নির্দ্দেশ করা যায় না। মনে কর, একজন জিজ্ঞাসা করিলেন যে মহাভারতের রচয়িতা কে, ইহাতে যদি কেহ বলে যে “পরাশরের পূত্র” তবে উহা অসঙ্গত হইল না বটে, কিন্তু প্রণেতার প্রকৃত নাম জানা গেল না, কেবল তৎপরিবর্ত্তে তাঁহার একটি মাত্র বিষয়ের পরিচয় প্রাপ্ত হওয়া গেল। এইরকম ব্রহ্মধর্ম্ম বলিলে বুঝা যায় যে উহা ঈশ্বরবাদপূর্ণ ধর্ম্ম, এই মাত্র, কিন্তু অত্যাবশ্যক পূর্ব্বোক্ত ত্রিবিধ অর্থ বুঝায় না। এই সমস্ত পর্যালোচনা করিয়া পারলৌকিক মহাত্মারা এই বিশ্বব্যাপী-সর্ব্বধর্ম্ম গর্ভ সর্ব্বাপেক্ষা ব্যাপকতম “সত্যধর্ম্ম” এই নাম নির্দ্দেশ করিয়াছেন। তাঁহারা বলেন, সংস্কৃত ভাষা পার্থিব সমস্ত ভাষা অপেক্ষা ব্যাপক বলিয়া ইহার, “সত্য” শব্দ যাদৃশ ভাব প্রকাশক, অন্য সমস্ত ভাষায় যাহা আছে তাহা অবলম্বন করিলে পূর্ব্বে পূর্ব্বেও এইরূপ নামই প্রদত্ত হইয়াছিল যথা — খৃষ্ট প্রচারিত ধর্ম্ম “ট্রুরিলিজেন” অর্থাৎ সত্যধর্ম্ম নামে বিখ্যাত।
২০/ সত্যধর্ম্মীদের জাতি বর্ণনির্ব্বিশেষে শুধুমাত্র গুণী ব্যক্তিকে শ্রদ্ধা করিতে হয়।
২১/ রাজার প্রতি ভক্তি (দেশের প্রধান) ও বিশ্বাস করিবে। রাজভক্তি না থাকিলে অনন্ত জগতের রাজা পরমেশ্বরের প্রতি ভক্তি–বিশ্বাস করা দুঃসাধ্য।
২২/ সাবধান! সাবধান! সত্যধর্ম্মীরা কদাচ দোষকর কার্য্যে প্রবৃত্ত হই না।
২৩/ সত্যধর্ম্মীরা ক্রোধ সংজম করিতে বাধ্য। কদাচ ক্রুদ্ধ হইয়া কোন কার্য্য করিতে পারিবে না।
২৪/ পিতা–মাতা সন্তানদের যত্ন সহকারে প্রতিপালন করে।
২৫/ সত্যধর্ম্মীদের সন্তানেরা পিতা–মাতার সেবা যত্ন করিয়া থাকে।
২৬/ পিতা ও মাতা ছেলে ও মেয়ের বয়ঃসন্ধিকালে ব্রহ্মচর্য্যের মাধ্যমে অতিমূল্যবান যৌন শিক্ষা প্রদান করিয়া থাকে।
২৭/ শিশু জন্ম গ্রহণ করিলে তাহাকে পরিস্কার পরিচ্ছন্ন করিয়া রাখিতে হয়।অন্য কেহ শিশু কে ধরিতে গেলে সাবান দিয়া হাত, পা ও মুখ ধৌত করিয়া কাছে যাইতে হইবে, কোনওরূপ মিথ্যাসংস্কার করা যাবেনা, গুরুর আজ্ঞানুরূপ কার্য্য করিতে হইবে।
২৮/ শিশু জন্ম গ্রহণ করিলে অবৈজ্ঞানিক প্রথা প্রচলিত রূপ পরামানিকের ব্যবহার, উহা নিষিদ্ধ।
২৯/ বাড়িতে কোনওরূপ সামাজিক কুপ্রথা প্রচলিত-সংস্কার নিষিদ্ধ যেযন কিন্নর নিত্য।
৩০/ সমাজে অবৈজ্ঞানিক প্রথা প্রচলিত যেমন চন্দ্র গ্রহণ অথবা সূর্য্য গ্রহণ হইলে যে সব ভ্রান্তি আছে তাহা কিছুই করা যাইবে না।
৩১/ সতধর্ম্মীরা কাহাকেও ঘৃনা করে না সকলেই সত্যের সন্তান অর্থাৎ সৃষ্টি কর্ত্তা হইতে সকলেই আসিয়াছি বলিয়াই আপন করিয়া লই।
৩২/ সত্যধর্ম্মীরা কোনওরূপ অপচয় বিরোধী যেমন জল ও খাদ্য ও অন্যান্য বিষয়, যতটাই প্রয়োজন তাহাই ব্যবহার করিতে হয়।
৩৩/ সৎ-সতীদের শয়ন কালে পূর্ব্ব ও দক্ষিণ মুখে মাথা রাখিয়া শয়ন করিতে হয়। যদি পশ্চিম দিকে মাথা দিয়া শয়ন করিতে হয় তাহা হইলে সূর্য্য উঠিবার পূর্ব্বেই শয়ন ত্যাগ করিতে হইবে। ইহার বৈজ্ঞানিক কারণ আছে।
৩৪/ কৃতজ্ঞতা পরম ধন। যিনি তোমার অনুমাত্র উপকার করিয়াছেন, চিরকাল তাহার নিকট কৃতজ্ঞ থাকিবে। একারণ, পিতা–মাতা শিক্ষক প্রভৃতি এক গুরুর শিষ্যগণের মধ্যে পূর্ব্ববর্তিগণ কৃতজ্ঞতার পাত্র। অন্যান্য বিষয় বিবেচনা পূর্ব্বক কার্য্য করিবে।
৩৫/ ধর্ম্মের নামে ভিক্ষা করিতে আসিলে, তাহাকে ভিক্ষা দেওয়া যাবে না।
১/(চ) সামাজিক বিচার পদ্ধতি :-
১/ সত্যধর্ম্মে প্রাণ দন্ডের বিধি নাই।
২/ গুণের মাধ্যমে সকল অপরাধ হইতে নিবৃতি করাই মূল পদ্ধতি অবলম্বীত হইবে।
৩/ অপরাধিদের উপাসনা ও সাধনার মধ্যে নিমগ্ন রাখিয়া চলিবার কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করাই মূল উদ্দেশ্য।
৪/ সত্যধর্ম্মাবলম্বীদের যে অপরাধই হোক না কেন, তাহাদের গুণের মাধ্যমে বোঝাইয়া স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরাইয়া আনিতে হইবে।
৫/ যদি কেহ কোনওরূপ অপরাধ করিয়া থাকে তাহা হইলে সত্যধর্ম্ম অনুরূপ বিচার পদ্ধতি সম্মুখে রাখিয়াই দেশীয় দন্ডবিধির পর্যালোচনা পূর্ব্বক কার্য্য অর্থাৎ দন্ড বিধি নির্ধারিত করিতে হইবে।
১/ছ) শিক্ষা ব্যাবস্থা।
শিক্ষা দুই প্রকার যেমন ১) পরাবিদ্যা ও ২) অপরাবিদ্যা।
১/ছ) ১) পরাবিদ্যা অর্থাৎ আধ্যাত্মিক বিদ্যা। স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় নিয়মে সত্যধর্ম্ম ও অন্যান্য সমস্ত ধর্ম্মের শিক্ষা প্রদানের ব্যাবস্থা ও গবেষণার ব্যাবস্থা।
১) শিশু কাল হইতেই আধ্যাত্মিক শিক্ষার মাধ্যমে বড়ো করে তোলা।
২) প্রতিদিন ভক্তি শিক্ষার মাধ্যমে গড়ে তুলতে হবে।
৩) স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় নিয়মে সত্যধর্ম্মের শিক্ষার রূপ গঠন পরিকাঠামো গড়ে তুলিতে হবে।
৪) মাধ্যমিক নিয়মে সমদর্শন সাধনার নিয়মে গঠন পরিকাঠামো গড়া।
৫) গ্র্যাজুয়েট নিয়মে গুণের বৃদ্ধি এবং সাধন বিভাগ গঠন তৈরী করিয়া শিক্ষা দেওয়া।
৬) ডক্টরেট নিয়মে সাধন জীবনে প্রবেশ করাইয়া একত্ত্ব লাভে প্রতিস্থাপন করা।
৭) সাধন জীবনে বয়সের সীমা বদ্ধ নাই।
৮) সাধনায় নারী ও পুরুষের সমান অধিকার।
৯) ছাত্র ও ছাত্রীদের থাকার ব্যাবস্থা পৃথক পৃথক করিতে হইবে।
১০) ছাত্রছাত্রীদের থাকার ব্যাবস্থা পৃথক হইলেও সাধনা যেমন শিক্ষা ব্যাবস্থা পড়াশোনা একই সঙ্গে হইবে।
১/ছ) ২) অপরাবিদ্যা অর্থাৎ সাধারণ নিয়মে যে যে শিক্ষা পরিকাঠামো আছে তাহাই অবলম্বনে জীবন গঠন করিতে হইবে।
২/(ক) কাহাদের সহিত কাহাদের বিবাহ সম্পর্ক হইতে পারে :-
১/ নিখিল ব্রহ্মাণ্ডের সমস্ত নরনারীই প্রেমের পাত্র সুতরাং যে কোনও সম্প্রদায় হউক না কেন বা পৃথিবীর যেকোনও দেশের হউক না কেন তাহারা বিবাহ সূত্রে আবদ্ধ হইতে পারে।
২/ যদি দুই বা তদধিক অবিবাহিত রমণী কোনও এক পুরুষের প্রতি প্রেমাসক্ত হন, সেখানে যে রমণীর সহিত তাঁহার অধিক প্রেম হইয়াছে তাহাকেই তিনি বিবাহ করিবেন।
ক) অপর রমণীদিগকে বিবাহ না করায় অপরাধ হইবে।
খ) কোন এক ব্যক্তির অভিষ্ট (প্রকৃত বাঞ্ছা) পূরণ না করিলে যে অপরাধ হয়, তাঁহার তাহাই হইবে। (যথা, একটি গোহত্যা করিলে যে অপরাধ হয়) যত জনের অভিষ্ট ভঙ্গ করা হইবে, ততটী গোহত্যা করার অপরাধ হইবে।
৩/ যদি অন্য কাহারও সহিত তাঁহার (ঐ পুরুষের) প্রকৃত প্রেম হইয়া থাকে, তবে উহাদিগের কাহাকেও বিবাহ করা যাবেনা।
ক) কেননা বিবাহ না করিলে অভীষ্ট পূরণ না করার অপরাধ (গোহত্যা অপরাধ) হইবে,
খ) কিন্তু বিবাহ করিলে প্রকৃত প্রেম ভঙ্গের অপরাধ (মাতৃহত্যার দশগুণ অপরাধ) হইবে,
গ) পরন্তু কামক্রোধাদিবিহীন সাধকেরা উক্ত রমণীদিগের সকলকেই বিবাহ করিতে পারেন। তাহাতে তাঁহাদের অনুমাত্র অপরাধ হইবে না,
ঘ) না করিলে পূর্ব্ব অপরাধ হইবে(অর্থাৎ গোহত্যা অপরাধ হইবে)।
এক্ষণে বক্তব্য প্রকৃত প্রেম কি এবং কাহাকে কহে ?
প্রেমময়ের প্রেমরাজ্যে যত কিছু গুণ আছে, তন্মধ্যে প্রেম সর্ব্বপ্রকারে সর্ব্বাংশে সর্ব্বাপেক্ষা প্রধান। ভালবাসা যাহার অঙ্কুর, তাহাকে প্রেম কহে, অথবা ভালবাসার উন্নত পরিনতিকে প্রেম কহে অর্থাৎ অপরকে আত্মার সংলগ্ন করাকে বা অপরের সুখ-দুঃখাদি অবস্থাতে আপনাকে উপনীত করাকে প্রেম কহে। যে গুণ থাকিলে মরিয়াও বাঁচে, আত্মাতে যাহার অভাব কখনও হয় না ও হইতেও পারে না, যাহা দুঃখকেও সুখে পরিণত করে, সুতরাং যাহা সুখদুঃখ চায় না, লাভালাভের অপেক্ষা করে না, কেবল অভীষ্টকে পাইবার জন্য প্রবর্ত্তিত করে, তাহাকে প্রেম কহে। যে গুণ থাকিলে ঐ গুণের ভাজনকে পাইলে প্রাণ শীতল হয়, আত্মা তৃপ্তিলাভ করে, মন অভিনব আনন্দরসময় ভাবের উদয় হয়, হৃদয় নবভাবে কার্য্যে প্রবৃত্ত হয়, ও পরমাত্মার প্রকৃত কার্য্য করা হয়, আর না পাইলে প্রাণ কিছুতেই শীতল হয় না হৃদয় নীরস হয়, মন ভাবশূন্য প্রায় হইয়া পড়ে, জীবাত্মার ক্লেশের ইয়ত্তা থাকে না, এবং পরমাত্মার উৎকর্ষ ও শান্তি হয় না। মূল কথা যে গুণে ঐ পরম গুণের ভাজনের দোষ গুণে আসিয়া পড়ে, দোষ দেখিতে বাসনা হয় না, কেবল গুণই লক্ষ্য হয়, কথা শুনিলে প্রান জুড়ায়, না শুনিলে জগৎ অন্ধকারময় বোধ হয়, অভাবে জীবন্মৃত থাকিতে হয়, ভাবে সকল অশান্তি দূরে যায়, ফলতঃ। ঐ গুণের প্রকৃত ভাজনের চিহ্নমাত্র না পাইলে কিছুতেই জীবিত থাকা যায় না, তাহাকে প্রেম কহে। প্রেমে সকল গুণের গুণত্ব (সংস্কার) হয়, এজন্য উহা গুণের গুরু বলীয়া কথিত হইতে পারে। যেমন কান্তিহীন দেহের কমনীয়তা কাঞ্চনযোগে বাড়ে না, সেইরূপ প্রেমসাধনাহীন আত্মার উন্নতি অন্য গুণে তত হয় না, ইহার সাধনা সর্ব্বপ্রথমে আরম্ভ হইলেও সর্ব্বশেষেও শেষ হয় না, সুতরাং ইহা অসীম কাল সাধনের ধন। সর্ব্ব ভূমণ্ডলের সকল লোকের হৃদয়েই প্রেম আছে, ( বা প্রেমাঙ্কুর আছে), সকলেই উহার জন্য পাগল, সকলেই ঐ ধনের ভিখারী। ঐ সুধাময় রসের স্বাদ পাইলে মোহিত না হয়, এমন কেহই নাই, তথাপি উহার স্বরূপ নির্দ্দেশ করা বোধ করি কাহারও সাধ্য নহে, কেন না যাহার অন্ত পাওয়া যায় না, তাহার প্রকৃত স্বরূপ কিরূপে নির্দ্দিষ্ট হইবে ? দুঃখময় সংসারে সুখের চন্দ্র প্রেম, ভালবাসা জীবনের বন্ধন, জীবন উহাতেই উৎপন্ন, উহাতেই স্থিত এবং উহার ব্যতিক্রমেই ধংস প্রাপ্ত হয়। বিষময় বিষয়-ধনে প্রেমসুধা-ব্যতীত কিছুতেই শান্তি নাই। এ ধন আঁধারে আলোক, দুঃখে অশান্তিনাশক ও বর্দ্ধনশীল, সুখে সুখ-বর্দ্ধক, যৌবনে বৃদ্ধত্ব ও বার্দ্ধক্যে তারুণ্য সম্পাদক এবং জীবনের চিরসম্বল। এই অসীম গুণের বর্ণনা, অসীম কালেও শেষ হইবার নহে। কোন মহাত্মা এ বিষয়ে যাহা বলিয়াছেন তাহা এই- ভালবাসাকে প্রেম কহে। যে সৃষ্ট আত্মার দর্শন আমার নিকট সৎতই চারু ও মনোহর, যাহাকে নিয়ত দেখিলেই দৃষ্টি তৃপ্তি বোধ করে না, যাহার কথা চির মধুময়, অমৃতময় ও কর্ণকুহরে প্রবেশ করিবা মাত্রেই হৃদয় নাচিতে থাকে বদনে যাহার গুণব্যখ্যা করিয়া শেষ করিতে পারে না, যাহার দোষরাশি কখনই ইন্দ্রিয়গোচর হয় না, দোষ বলিয়া প্রতীয়মান হয় না, অপরের মুখে নিন্দা বা কুৎসা শুনিলে হৃদয়ে বিরক্তির উদয় হয়, যাহার সুখে সুখী ও দুঃখে দুঃখী হওয়া যায়, যে পীড়িত হইলে পীড়িত ও প্রফুল্ল হইলে আমোদিত হই, যাহার অদর্শনে সমস্ত শূন্য দেখী, সুখশান্তীবিহীন হই, আমাতে আর আমি থাকি না, কি হইয়াছে, কিসের অভাব হইয়াছে, অনুভব করিতে পারি না, প্রত্যুত কেবল জীবন্মৃত হইয়া থাকি, যাহার মঙ্গল ভিন্ন অমঙ্গল কামনা হৃদয় কখনই স্থান পায় না, যাহার সামান্য তাচ্ছিল্যভাব বা অনাদরে মরমে মরিয়া যাই, যাহাকে নিঃস্বার্থভাবে আমার বলিয়া অঙ্গীকার করি, জীবনসৰ্ব্বস্ব সমৰ্পণ করিয়াও যাহার কিঞ্চিৎ সাহায্য করিতে পারিলে হৃদয় কৃতার্থ বােধ করে, যাহাকে নিজের অনন্ত দুঃখরাশির কণামাত্র জানাইয়াও দুঃখিত করিতে বাসনা হয়, আবার যাহার দর্শনে কেমন হইয়া পড়ি, কিছু বলিতে পারি না, কিছু বুঝিতে পারি না, কেবল পুতুলের মত হইয়া পড়ি ইত্যাদি ইত্যাদি, তাহাকেই আমি ভালবাসি, তাহাকেই আমি প্রেমকরি ও এরূপ ভালবাসাকেই প্রেমকহে।
৪/ যদি কোন পুরুষের সহিত দুইটী রমণীর প্রকৃত প্রেম হয়, তবে তিনি কাহাকে বিবাহ করিবেন ? ইহার উত্তরে এই বলা যায় যে, সাধক ভিন্ন অপর কাহারও একাধিক রমণীর সহিত প্রকৃত প্রেম হইতে পারে না। আর সাধকদিগের মধ্যে যাহাদিগের পূৰ্ব্ববৎ ক্ষমতা (প্রেমের সংঙ্গা অনুরূপ) নাই, তাহারা একটীকে বিবাহ করিবেন, কারণ একটী বিবাহ করিলে প্রকৃত প্রেম ভঙ্গের অর্ধেক অপরাধ ও দুইটী বিবাহকরিলে প্রকৃত প্রেমভঙ্গের অপরাধ হইবে। কিন্তু পূৰ্ব্ববৎক্ষমতাপ্রাপ্ত সাধকদিগের পক্ষে উভয় বিবাহ করায় কোনও অপরাধ হইবে না। কারণ, তাঁহারা সাধারণ নিয়মের অতীত।
৫/ যদি কোন রমণীর লৌকিক মতে বিবাহাদি হইয়া পাশ্বাচারাদি (শারীরিক সম্পর্ক) হইয়া থাকে, পরে যদি অন্য কোন পুরুষের সহিত তাহার প্রকৃত প্রেম হয় তাহা হইলে পুরুষ তাহাকে বিবাহ করিতে পারেন না।
৬/ যদি কোন রমণীর কোন পুরুষের সহিত পশ্বাচারাদি (শারীরিক সম্পর্ক) হয়, কিন্তু প্রকৃত প্রেম না হয়, এবং তদনন্তর যদি ঐ পুরুষ লােকান্তরে গমন (পরলােকে গমন) করেন, আর অপর পুরুষের সহিত উক্ত রমণীর প্রকৃত প্রেম হয়, তাহা হইলে উক্ত রমণী ও পুরুষের বিবাহ হইতে পারে, কিন্তু পশ্বাচারাদি(শারীরিক সম্পর্ক) হইতে পারেনা।
৭। যদি কোন বিধবা স্ত্রীর অপর পুরুষের সহিত প্রকৃত প্রেম হয়, আর তাহার পূর্ব্ব পতির সহিত প্রকৃত প্রেম বা পশ্বাচারাদি না হইয়া থাকে, তবে অপর পুরুষের সহিত তাহার বিবাহ ও পশ্বাচারাদি হইতে পারে।
৮। সহােদর ও সহােদরা (ভাই ও বােন) প্রভৃতি এক রক্তজ বা নিকট সম্পর্কীয় (মাতৃ ও পিতৃকুলজ) দিগের পরস্পরবিবাহ হইলে, সন্তানের শরীরের কিঞ্চিৎ দুৰ্বলতা প্রভৃতি হইতে পারে বটে, কিন্তু প্রকৃত প্রেম হইলে উহাদিগেরও বিবাহ দেওয়া উচিত।
৯। প্রকৃত প্রেম হইলে যে কোন বয়সে এবং বিপরিত বয়সেও পরস্পর বিবাহ হইতে পারে।
১০। পাত্রী বা পাত্র “প্রকৃত প্রেম” হইলে ঐ দম্পতিকে অভিভাবকগণের কর্তব্য বিবাহ দিবার।
১১। এই পবিত্র ধৰ্ম্মের সাধু নিয়মকে সাধুভাবে পরিচালিত করিতে হইলে, পুত্র ও কন্যাকে অপেক্ষাকৃত অল্পবয়সে বিবাহ দিয়া, যাহাতে তাহারা পরস্পরের সহিত সময়ে সময়ে মাত্র ক্ষণকালের জন্য দেখা করিতে পারে, অথচ অধিক কাল একত্র থাকাতে না পারে, এরূপ উপায়, বিশেষ মনােযােগ সহকারে অবলম্বন করা সাধারণের পক্ষে কৰ্ত্তব্য। যদি কেহ ইহাতে বাল্যবিবাহের দোষরাশির আশঙ্কা করেন, তবে তাঁহাদিগের ভ্রান্তি বলিতে হইবে; কারণ যেরূপ উপায় নির্দিষ্ট হইল,তাহাতে বাল্যবিবাহের যাহা দোষ, তাহা হইবার প্রায় সম্ভাবনা নাই। এবং প্রেমবৃদ্ধিরূপ পরম উপকার সাধিত হইবার সবিশেষ সম্ভাবনা আছে, সুতরাং ইহা দূষণীয় হওয়া দূরে থাকুক, অতি প্রশংসনীয় কাৰ্য্য, সন্দেহনাই।(এইবিষয় করাইতে গেলে গুরুরসম্মুখে করাইতে হইবে।)
এই ধর্মে গুরু হইবার উপযুক্ত গুণসমূহঃ-
(১) প্রেম , (২) সরলতা, (৩) পবিত্রতা, (৪) একাগ্রতা, (৫) ভক্তি ও ঈশ্বরজ্ঞান আছে এবং (৬) যাহার মন কুপথে গমন করে না, (৭) সম্পত্তি বিষয়ে নিস্পৃহতা, (৮) নিস্পাপ অবস্থা বা মূর্তিমতী পবিত্রতা, (৯) অন্যদীয় পাপগ্রহণ ক্ষমতা, (১০) লােকের উপকার ভিন্ন অপকার করিব না, এই বিষয়ে দৃঢ়নিশ্চয়তা, (১১) সিদ্ধিসমূহলাভেরউপযুক্ত গুণ, (১২) কাম-ক্রোধহীনতা, (১৩) অন্ততঃ সমস্ত মানুষকে সহােদরবৎ দর্শন ও তদনুরূপ আচরণ করা, ইত্যাদি ইত্যাদি ইত্যাদি।
যদি শাস্ত্রজ্ঞান সম্পন্ন, প্রেমময়াদিঅবস্থা বিশিষ্ট( প্রেমময় অবস্থা, গানময় অবস্থা, দূরদর্শনময় অবস্থা এবং ভাবি-জ্ঞানময় অবস্থা।), কঠোরতর ধর্ম্মকর্মে সুদক্ষ, অভেদজ্ঞান করিতে পারগ, বাকসিদ্ধ, অর্থবিষয়ে নিস্পৃহ, জাতগুণ-সমূহের (৬) লয়-সম্পাদনে কৃতকাৰ্য্য বা সমর্থ, এবং পাপগ্রহণ, গৃহীত পাপ হইতে তৎক্ষণাৎ মুক্তিলাভ, আয়ুঃ প্রদানশক্তি ও আত্মার অসীমত্বসাধনা প্রভৃতি বিষয়ে সিদ্ধ, বিশেষতঃ ভক্তি, প্রেম ও শ্রদ্ধা এই গুণত্রয়সম্পন্ন ব্রহ্মদর্শী বা তদীয় অনুজ্ঞাত মহাপুরুষই গুরু হইবার উপযুক্ত হন। এইরূপ মহা সাধক হইবার পূর্বেই যখন প্রথম সাধনা সমদর্শন করেন তখন ক্ষুধাহীন, তৃষ্ণাহীন ও নিদ্রাহীন অবস্থা লাভ করিয়া থাকেন। সুতরাং বহুদিন যাবত এই অবস্থায় উপাসনা করিবার ক্ষমতা লাভ করিয়া থাকেন। তাঁহার বয়সের পরিমাপ হইতে পারেনা কেননা বৃদ্ধকালেও এই সুমহান তিনটী গুণের অবস্থা থাকিতে পারে।
১২। প্রকৃত প্রেমহইলে পুরুষে পুরুষে ও নারীতে নারীতে প্রণয়ে আবদ্ধ হইতে পারে।
১৩। প্রথমে ব্রহ্মচর্য অবলম্বন পূৰ্ব্বক গুরুর আজ্ঞা লইয়া গৃহাস্রাশ্রমে (বিবাহ বধ্যে
আবদ্ধ) প্রবেশকরিতে হইবে।
১৪। গুরুর আজ্ঞা লইয়া বিবাহ সংক্রান্ত যাবতীয় কর্ম করিতে হইবে।
১৫। অন্য সমাজ হইতে পাত্র বা পাত্রী অনিবার পূৰ্ব্বে সত্যধর্ম্মের নিয়মাবলী জানাইয়া বিবাহবদ্ধে আবদ্ধ করিতে হইবে।
১৬। অন্য সমাজ হইতে পাত্র বা পাত্রী অনিবার পূৰ্বে সম্পর্ক স্থাপনের পূৰ্বে বিশেষ করিয়া ধর্ম্মের মূল বিষয় যেমন এই বিশুদ্ধ ধর্মের মতে সাকার উপাসনা নাই, যােগ-সাধন নাই জাতিভেদ নাই, এবং নিৰ্ব্বাণ (ঈশ্বরে লীন হওয়া) নাই। ইহার মতে গুণসাধন সর্বপ্রধান কাৰ্য্য। নিরাকার অদ্বিতীয় পরমপিতার উপাসনা প্রতিদিন তিন ঘন্টা করিতে হইবে।
১৭। বিবাহের মূল উদ্দেশ্য প্রেম সাধনা অতএব আত্মােন্নতী লাভ করিতে হইলে পাত্র ও পাত্রী উভয়ের একইভাব ধারার প্রয়ােজন।
১৮। পাত্র ও পাত্রীর উপযুক্ততা দেখিতে হইলে শারীরিক ও মানষিক অবস্থা ভেদে বিবেচ্য বিষয়। পাত্রীর রজকাল শুরু হইলেই এবং পাত্রের যৌবন শুরু হইলে এক প্রকার শারীরিক ক্ষমতা হইয়া থাকে কিন্তু পূর্ণ ভাবে শারীরিক বিকাশ লাভ করিতে প্রায় ১৮ বছর বয়সের প্রয়ােজন হয় কার কার ক্ষেত্রে বেশি হইতে পারে। মানষিক দিক হইতে বিচার করিলে কেহ কেহ ১৮ বৎসর কেহ কেহ ২৫ বৎসর হইতে পারে। পাত্রের ক্ষেত্রে ২০বৎসর হইতে ২৫বৎসর পর্যন্ত বিকাশ লাভ করে।
১৯। গুরুর আদেশ মত গুরুর কাছে পাত্র ও পাত্রী উভয়ের বিপরীত শ্রেষ্ঠ গুণাবলী লিখাইয়া জানাইতে হইবে।
২০। পাত্র ও পাত্রীর অমতে বিবাহ দেয়া যাবেনা।
২১। উভয় উভয়কে সম্মান করিতে হইবে তাহা হইলেই বিবাহ দেয়া যাইবে।
২২। উভয় উভয়ের অভিভাবকগণ কে সম্মান করিতে হইবে পাত্র ও পাত্রীকে।
২৩। উভয় উভয়ের কর্মক্ষেত্র কে সম্মান জানাইতে হইবে পাত্র ও পাত্রীকে।
২৪। উভয় উভয়ের কোনও বিষয় গােপনকরা যাইবেনা।
২৫। যদি বিশেষ কিছু বিষয় থাকে তাহা হইলে গুরুর সম্মুখে ব্যক্ত করিতে হইবে। যদি গুরু বলেন বিবাহ করিতে তাহা হইলেই করিতে পারিবে।
২৬। বিশেষ কারণ বসত উভয়ের অভিভাবকবিহিন বিবাহ করিতে চায় তাহা হইলে গুরুরসম্মুখে জানাই তেহইবে।
২৭। বিবাহের পূর্বে পাত্র ও পাত্রীরসমগ্রবিষয় অভিভাবকগণ কেজানাইতেহইবে।
২৮। পাত্র ও পাত্রী যদি পূৰ্বে প্রেমে আবদ্ধ না হয়, তাহা হইলে উভয়ের রক্তের পরিক্ষা করাইয়া লইতে হইবে।
২৯। পূর্বে প্রেম না থাকিলে পাত্র ও পাত্রী উভয়কেই সম্মুখে রাখিয়া কথা বলাইয়া লইতে হইবে।
৩০। পাত্র ও পাত্রী উভয়ের পরিবার যেন তাহাদের রােগের (শারীরিক ও মানসিক) কথা জানাইয়া বিবাহে সম্মতি প্রদান করেন।
৩১। পাত্র ও পাত্রী উভয়ের কোনও একজন সত্যধর্ম্মাবলম্বী না হন। তাহাদের প্রেম প্রবন্ধ পড়িয়া বিবাহ বদ্ধে আবদ্ধ হইতে হইবে। এই পবিত্র ধৰ্ম্মের সাধু নিয়মকে সাধুভাবে পরিচালিত করিতে হইলে, পুত্র ও কন্যাকে অপেক্ষাকৃত অল্পবয়সে বিবাহ দিয়া, যাহাতে তাহারা পরস্পরের সহিত সময়ে সময়ে মাত্র ক্ষণকালের জন্য দেখা করিতে পারে, অথচ অধিককাল একত্র থাকাতে পারে, এরূপউপায়, বিশেষ মনােযােগ সহকারে অবলম্বনকরা সাধারণের পক্ষে কৰ্ত্তব্য। যদি কেহ ইহাতে বাল্যবিবাহের দোষরাশির আশঙ্কা করেন, তবে তাঁহাদিগের ভ্রান্তি বলিতে হইবে; কারণ যেরূপ উপায় নির্দিষ্ট হইল, তাহাতে বাল্যবিবাহের যাহা দোষ, তাহা হইবার প্রায় সম্ভাবনা নাই। এবং প্রেমবৃদ্ধিরূপ পরম উপকার সাধিত হইবার সবিশেষ সম্ভাবনা আছে, সুতরাং ইহা দূষণীয় হওয়া দূরে থাকুক, অতি প্রশংসনীয় কাৰ্য্য, সন্দেহ নাই। (এই বিষয় করাইতে গেলে গুরুর সম্মুখে করিতে হইবে)
৩২। পাত্র ও পাত্রী উভয়ের কোনও একজন কোনও রূপশারীরিক বৈকুল্য থাকিলে তাহা জানাইয়া দুইজনেই সম্মানসূচক আচরণ করিতে হইবে।
৩৩। পারিবারিক অমতে যদি পাত্র ও পাত্রী উভয়েই বিবাহবদ্ধে আবদ্ধ হইতে চাহিলে গুরুর সম্মুখে আসিয়া ব্যক্ত করিলে তিনি সেই পরিস্থিতি অনুরূপ যেমনকরিতে বলিবেন উভয়কেই মানিয়া লইতে হইবে।
৩৪। পাত্র ও পাত্রী উভয়ের যেকোনও একজন সত্যধর্ম্মাবলম্বী হইলে অপর একজনকে যেন প্রকৃত ধৰ্ম্মের নিয়মাবলী জানাইয়া বিবাহ বদ্ধে অবদ্ধ হন। যদি একান্ত অপারক হয় তাহা হইলে গুরুর স্মরণাপন্ন হইতে হইবে। তিনি যেমন বলিবেন তেমনই চলিতে হইবে।
৩৫। হঠাৎ করিয়া পাত্র ও পাত্রীর কোনও বিষয় না জানিয়া বিবাহ বদ্ধে অবদ্ধ করান যাবেনা।যদি গুরু বলেন করিতে পারে।
৩৬। জোর করাইয়া পাত্র ও পাত্রীর বিবাহ দেওয়া যাইবে না।
৩৭। পাত্র ও পাত্রীর বিবাহের পূর্বে গুরু যদি কোনও বিষয়ের উপর সাধনা করিতে বলেন (উভয়কেই) সেই সাধনা করিতে হইবে। উহা একজনার ক্ষেত্রেও হইতে পারে।
৩৮। কোনও কারণে যদি পাত্র ও পাত্রী উভয় সত্যধৰ্ম্মের বিবাহ বিধির বাহিরে বিবাহ করিয়া আইসে, তাহা হইলে তাহাদের গুরু বাক্যানুসারে কাৰ্য্য করিতে হইবে।
৩৯। পাত্র ও পাত্রী যেকোনও একজন কোনও বিশেষ কারণে অবস্থার পরিপেক্ষিতে
বিবাহবন্ধনে অবদ্ধ হইতে চায় তাহা হইলেও ধৰ্ম্মের বিষয় জানাইতে হইবে।
৪০। পাত্র ও পাত্রী কেহই যদি ধর্ম্মের বিষয় অবগত না হইয়া বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়, তাহা হইলে পরিবার হইতে তাহাদের ধর্মের প্রতিটী নিয়ম অবগত করাইতে হইবে।
৪১। পাত্র ও পাত্রী যেন বিবাহের মূল উদ্দেশ্য প্রেম সাধনা, তাহা অবগত হইতে পারে এবং প্রকৃত ধর্মের নিয়ম পালনে তাহা হইলে উন্নতী প্রাপ্তি ঘটে ইহা পরিবারের জানাইতে হইবে।
৪২। পাত্র ও পাত্রী বিবাহের আগে আত্মােন্নতী না করিয়া থাকিলে পরে করিতে হইবে এবং তাহা গুরুর মুখে জানিয়া লইতে হইবে।
৪৩। যদি সত্যধৰ্ম্মের প্রথম ধারা হইতে দশম ধারা অলঙ্ঘনীয় অবস্থায় বিবাহ করিতে চায় তাহা হইলে গুরুর শরণাপন্ন হইয়া সমস্ত বিষয় জানাইতে হইবে।তিনি যেমনই বলিবেন তেমনই করিতে হইবে।
৪৪। পাত্র ও পাত্রী উভয় পক্ষের বিবাহ সংক্রান্ত আলােচনা হইলে দুই পরিবারের সম্ভাষন জানাইতে হইবে।
৪৫। পাত্র ও পাত্রী উভয় পক্ষের বিবাহ সংক্রান্ত আলােচনা হইলে দুই পরিবারের আবেদন স্বরূপ লিখিত জানাইতে হইবে গুরুর কাছে।
৪৬। পাত্র ও পাত্রী উভয়ই এই ধর্ম্মে দীক্ষিত না হইলে দীক্ষা লাভ করিয়াই বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হইতে হইবে।
৪৭। পাত্র ও পাত্রী উভয়ের যেকোনও একজন যদি সত্যধর্ম্মী না হয় তাহা হইলে পরবর্তীতে ধর্মের বিষয় জানাইয়া দীক্ষারূপ পরম জন্ম লাভ করাইতে হইবে। তাহা বিবাহের পরে হইলেও হইবে।
৪৮। পাত্রী যদি সত্যধর্মী হয়, তাহার সহিত অন্য কাহারও প্রেম অথবা বিবাহ নির্ধারিত হয় তাহা হইলে তাদেরকে সত্যধৰ্ম্মের বিষয় জানাইতে হইবে। এই বিশেষ অবস্থায় গুরুর স্মরণাপন্ন হইতে হইবে, তিনি যেমন যেমনটী বলিবেন তেমন ভাবেই করিতে হইবে।
৪৯। পাত্র ও পাত্রী অন্যও কোনও সম্প্রদায় হইতে আসিয়া বিবাহ করিতে বাসনা করে, তাহা হইলে এই ধর্মে প্রবেশ করিতে হইবে।
২/(খ) কিরূপ রীতিতে বিবাহ সম্পন্ন হয় :-
১। মিলনােৎসবেই বিবাহ হইলে সৰ্বোকৃষ্ট, এবং অনান্য উৎসবেও হইতে পারে। উৎসবে প্রেমের অধিবেশনেই বিবাহ হইতে হইবে।
২। বিবাহ আদি গুরুর সম্মুখেই হইতে হইবে।
৩। যে উৎসবে বিবাহ সম্পন্ন হইবে, পাত্র ও পাত্রী উভয়কেই সম্পূর্ণ উৎসবে | থকিতে হইবে।
৪। পাত্র ও পাত্রী উভয়ই তত দেশিয় সর্বোৎকৃষ্ট প্রশাক পরিধান পূর্বক বিবাহের জন্য প্রেমের অধিবেশনে বসিতে হইবে।
৫। উপাসনায় গুরুর ডান পাশে, পাশাপাশী পাত্র ও পাত্রীকে বসিতে হইবে।
৬। যাহারা পাত্র ও পাত্রীকে সম্প্রদান করিবেন তাহারা দুজনারই পাশে বসিতে হইবে।
৭। উপাসনায় গুরু পরমপিতার উদ্দেশ্যে মৌখিক প্রার্থনা করিবার পর বিবাহের কাৰ্য্য শুরু হইবে।
৮। যে মুহুর্তে বিবাহ হইবে সর্বাগ্রে সম্প্রদানের কাজ করিতে হইবে। গুরু যাহা বলিবেন তাহাই অভিভাবক গণকে বলিতে হইবে। যেমন পাত্রীর দুইটি হাত লইয়া পাত্রের দুইটী হাতের উপর রাখিয়া বলিবেন আজ হইতে (পাত্রীর নাম উল্লেখ পূৰ্ব্বক) কে, তােমার হস্তে অৰ্পণ করিলাম। পাত্র বলিবে – আমি পৃত হইলাম।
৯। পাত্র ও পাত্রী দু’জনেই পরমপিতার উদ্দেশে প্রার্থনা করিবে, হে প্রেমময় বিশ্বপিতা, আজ হইতে আমরা প্রেম মিলনে প্রবেশ করিব, তােমার মঙ্গল-ডােরে বেঁধে রেখ, দয়াময় দয়া কর।
১০। পাত্র ও পাত্রী দু’জনেই দু’জনকে আংটি পরাইবে।
১১। পাত্র ও পাত্রীর শপথ বাক্য ঃ- দু’জনেই বলিবে; আমি, (নাম..........)পরমেশ্বর ও গুরুদেবের নামে শপথ করিতেছি যে, আমার পিতৃকুল ও মাতৃকুলকে সাক্ষী রাখিয়া, এই বিবাহিত জীবনের সকল দায়িত্ব পালন করিব, সুখ-দুঃখের অংশ হইব, ভালােবাসাই জীবনের মূলমন্ত্র রূপে মানিয়া চলিব।
১২। পাত্র ও পাত্রী এক এক করিয়া এই বলিবে যে, (শুধু নাম উল্লেখ করিয়া) তােমাকে আমারহৃদয়স্থ করিলাম।
১৩। গুরু পাত্র ও পাত্রীকে উদ্দেশ্য করিয়া বলিবেন আজ হইতে প্রেম প্রবন্ধে যেরূপ | ভাবে প্রেমের ভাব আছে তাহা তােমাদের জীবনে প্রতিফলিত করিতে চেষ্টা করিবে।
১৪। পাত্র ও পাত্রী দু’জনেই মালাবদলকরিবে।
১৫। পাত্র পাত্রীকে সিঁদুর (লাল সিঁদুর শক্তি এবং প্রেমের প্রতিক তাহা কপালে পড়িলে প্রেমে আবদ্ধ করিতে সাহায্য করে) পরাইবে এবং পাত্রী পাত্রকে চন্দনের (চন্দন মাথাকে ঠান্ডা রাখে) ফোঁটা পরাইবে।
১৬। এই সকল বিষয় সবই বসিয়া করিতে হইবে।
১৭। উপাসনা সমাপ্ত হইলে পাত্র ও পাত্রী অভিবাবক গণকে প্রণাম করিয়া আশির্বাদ লইতে হইবে।
১৮। পাত্র ও পাত্রীর হস্তাক্ষর এবং দু’জনারই অভিভাবকগণকে হস্তাক্ষর সম্বলিত সত্যধৰ্ম্ম দম্পতি প্রেম সাধনার অনুমতি পত্র প্রদান করা হইবে।
১৯। উৎসবের শেষে গুরুপূজায় পাত্র ও পাত্রীর উদ্দেশ্যে প্রার্থনা করা হইবে (তাদের দাম্পত্য জীবনশুখের জন্য)।
২/গ) বৈবাহিক অনুষ্ঠান ও সামাজিক রীতি :-
১। উৎসব হইতে প্রথমে পাত্রী পক্ষের বাসস্থানে যাইতে হইবেপাত্রকে।
২। পাত্রী ও পাত্রী উভয়ই গুরুপূজার মাধ্যমেই অনুষ্ঠিত হইবে।
৩। পাত্র ও পাত্রী উভয়ই পাত্রীর পিতা ও মাতাকে প্রণামকরিবে।
৪। পাত্রী পক্ষ হইতে একটী আশির্ব্বাদের নিমিত্য ভােজনানুষ্ঠান আয়জিত হইতে
পারে সাধ্যমত।
৫। এক দিন বাদেপাত্র পাত্রীকে লইয়া নিজ গৃহে যাইবে।
৬। পাত্র ও পাত্রী উভয়ই গৃহে প্রবেশ করিয়া গুরুদেবের উদ্দেশ্যে সষ্টাঙ্গে প্রণাম
করিবে।
৭। পাত্র ও পাত্রী উভয়ই পাত্রের পিতা ও মাতাকে প্রণাম করিবে।
৮। গুরুকে সংসারের স্বার করিতে হয়, এই পবিত্র তম আত্মােন্নতীর পথ প্রদর্শক পূজার মাধ্যমেই সংসার জীবন শুরুকরিতে হইবে।
৯। পাত্রের বাড়িতে আশির্বাদের নিমিত্য ভােজনানুষ্ঠান আয়জিত হইতে পারে, সাধ্যমত।
১০। পাত্র ও পাত্রী উভয়ই আশির্ব্বাদের নিমিত্য আমন্ত্রণ যানাইতে পারে সমস্থ মাধ্যমেই।
১১। পাত্র ও পাত্রী উভয়ের আমন্ত্রণ পত্রে এই লিখিবে যে কোনও উপহার না আনিয়া আমাদের দাম্পত্য জীবন সুখময়ের জন্য আপনাদের কাছে একান্ত ভাবে আশির্বাদ ভিক্ষা মাগী, নচেৎ উপহার গ্রহন হেতু নব দম্পত্য জীবন অমঙ্গলময় আসিয়া পরে।
১২। পাত্র ও পাত্রীর গৃহে আনুষ্ঠানিকভাবে সত্যধর্ম্মের সঙ্গীত ধ্বনিত হইবে।
১৩। পাত্র ও পাত্রী উভয় পক্ষ হইতে কেহই জৌতুক স্বরূপ কিছু গ্রহণ করা যাইবে।
১৪। পাত্র ও পাত্রী উভয় পক্ষ হইতে একমাত্র মাতা ও পিতা সইচ্ছায় আশিৰ্ব্বাদ | স্বরূপ কিছু দিলে গ্রহণ করিতে পারিবে।
৩/(ক) পূজা পাৰ্বণ :-
১। যদি মুক্তিলাভ করিতে ইচ্ছা কর, যদিভগবন্নামামৃত পানে সংসার-বিষজ্বালা হইতে বিমুক্ত হইতে অভিলাষ কর, যদি পরমেশ্বরের প্রেমসুধা পানে অভিলাষী হও এবং যদি মানব জীবনের সফলতা লাভ করিবার ও ব্রহ্মদর্শনজনিত পরমানন্দ প্রাপ্ত হইবার সঙ্কল্প করিয়া থাক, তবে জগদীশ্বরের প্রতি ভক্তি ও প্রেম কর এবং ঐ গুণদ্বয় ও অন্যান্য মহাগুণ লাভ করিবার জন্য এবং সাধনা মার্গে সূচারু রূপে পরিচালিত হইবার নিমিত্ত ব্রহ্মদর্শী মহাত্মাকে গুরুরূপে বরণ করিয়া জীবন সফলকর এবং অভীষ্টলাভে কৃতার্থ হও।
২। যিনি গুরুর প্রতি, মন্ত্রের প্রতি ও ঈশ্বরের প্রতি দৃঢ় ভক্তিসম্পন্ন এবং যিনি আস্তিক অর্থাৎ পরলােকের অস্তিত্বজ্ঞানবিশিষ্ট, তিনিই শিষ্য হইতে পারেন।
৩। ভক্ত শিষ্যের নিকটে গুরুর আদেশ পালনই পুণ্য এবং গুরুর আদেশ লঙ্ঘনই পাপ, ইহা ভিন্ন পাপ-পুণ্য নাই।
৪। একমাত্র অদ্বিতীয় মঙ্গলময় ভিন্ন এবং গুরুদেব ব্যতীত কাহারও পূজা করিবে না।
৫। গুরু স্বীকার না করিলে বহু দোষ সমুৎপন্ন ও প্রকৃত সাধনার ব্যাঘাত সংসাধিত হয়, অতএব গুরুকরণ ধর্ম্মের প্রধান অঙ্গ।
৬। গুরু পূজাই সত্যধর্ম্মীদের একমাত্র পালনীয়। ইহা ভিন্য অন্য কোনও পূজা করিতে পারিবে না।
৭। সুক্ষ্ম ভাবে কেবল মন্ত্র উচ্চারণ দ্বারাই প্রধান কর্তব্য।
১০/ যবের ছাতু, ময়দা।
১১/ ডাল= মূগ, মাসকলাই, ছোলা, মটর প্রভৃতি তুষবর্জ্জিত শুভ্র। শস্য।
১২/ শাক = বালশাক, কালশাক, পটোলপত্র, বাস্ত্তক( বেতয়াশাক) ও হিলমোচক(হিঞ্চাশাক)।
১৩/ খাদ্য গ্রহণকালে পূর্ব, পশ্চিম, উত্তর ও দক্ষিণ মুখ করিয়া খাইতে হইবে, কোনাকুনি মুখ করিয়া খাইতে নাই তাহাতে পেটের গোলযোগ দেখা দেয়।
১/(ঘ) সামাজিক অবস্থানে পুরুষ ও মহিলাদের তুল্য ভূমিকা :-
১/ সত্যধর্ম্মের নিয়মে নিখিল বিশ্বের সকল নর-নারিরাই ভ্রাতা ও ভগ্নি এইরূপ জ্ঞান করিতে হয়।
২/ নারি ও পুরুষ সকলেই সমানরূপ কার্য্য করিতে পারেন শক্তি অনুরূপ।
৩/ সৎ সতীগণ দুজন দুজনকেই সম্মান করিয়া চলিতে হয়।
৪/ পরিবারে মেয়েদের প্রতি সম্মান সূলভ আচরণ করিতে সত্যধর্ম্মীরা বাধ্য। তাহাদের উপর বিশেষ রূপে উচ্চশিক্ষা দিবার ব্যবস্থা করিয়া থাকে। নারীদের সম্মানার্থে পুরুষদের বিশেষ শিক্ষায় শিক্ষিত করিতে বাধ্য।
১/(ঙ) সামাজিক প্রথা :-
১/ সৎসতী মিলিত হইলে আমরা “ঈশ্বর গুরু স্মরণম্” বলিয়া উভয় উভয়কে সম্মোধন করিয়া থাকি।
২/ প্রতিদিন মাতা ও পিতা কে প্রণাম করিয়া থাকি।
৩/ সাধনা কালে গুরুদেব ও মাতা পিতা কে প্রণাম করি এবং গুরুর আজ্ঞা লইয়া অন্যান্য গুরুজনকে প্রণাম করিতে হয়।
৪/ সকল সত্যধর্ম্মীরা নিখিল নর-নারীকে ভাতৃ ও ভগ্নী জ্ঞান করিয়া থাকি।
৫/ পরিবারের সকলকে সম্মান সূচক আচরণ করিয়া থাকি।
৬/ সত্যধর্ম কোনও রূপ হিংসা বিদ্বেষ মান্যতা দেয় না।
৭/ পরিবারের গুরুজনদিগের সেবা করিতে সত্যধর্ম্মীরা বাধ্য।
৮/ কোনো স্থানে গমনের পূর্ব্বে অভিভাবকের অনুমতি লইয়া বাহির হইয়া থাকি।
৯/ সত্যধর্ম্মের বিধানে যে সকল উপদেশ আছে তাহা সৎ-মাত্রেই যে সকল উপদেশ এবং সেই সকল রীতি পালন করিতে আমরা বাধ্য থাকিবো।
১০/ জ্ঞান এবং ধর্ম্ম উভয়েরই চর্চা সত্যধর্ম্মীদের করিতে হয়।
১১/ সত্যধর্ম্মীরা সত্যের অবিরোধে অর্থ উপার্জন করিয়া থাকি। অসৎ উপায় কে সত্যধর্ম্ম মান্যতা দেয় না।
১২/ প্রতিটি সৎ-সতী সরল ব্যবহার করিতে অভ্যাস করি। কপটতা মহাপাপের মূল।
১৩/ মনুষ্যের কথা দূরে থাকুক, পশু পক্ষীকেও অকারণ ভয় প্রদর্শন করি না, তাহাদিগকে স্নেহ করি।
১৪/ সত্যধর্ম্মীরা সর্ব্বদা সত্যকথা বলিতে বাধ্য। সত্যধর্ম্মীগণ কখনও মিথ্যাকে মান্যতা দেয়না।
১৫/ পৃথিবীতে যতপ্রকার ধর্ম্ম প্রণালী আছে, সমুদায় ধর্ম্ম প্রণালী আপাততঃ পরস্পর প্রতিয়মান হইলেও বস্তুতঃ পরস্পর বিরুদ্ধ নহে, ইহা সাধারণ জনগণকে পরিজ্ঞাপিত করা সত্যধর্ম্ম প্রচারের প্রথম উদ্দেশ্য।
১৬/ উল্লিখিত ধর্ম্ম প্রণালী সমূহ অবলম্বন করিয়া অনেক অনেক মহাত্মা সিদ্ধ হইয়া গিয়াছেন বটে কিন্তু এই পরিবর্তনশীল জগতে শরীরের ন্যায় মনের অবস্থারও বংশ পরম্পরায় পরিবর্তন সাধন হইতেছে। সম্প্রতি মনুষ্যের দেহের ও অন্ত করণের যেরূপ অবস্থা তাহাতে আর পূর্ব্বানুষ্ঠিত কঠোর সাধনা করিয়া প্রায়শঃ সিদ্ধিলাভে সমর্থ নহে। এজন্য এই বর্ত্তমান সময় আমাদিগের গুরুদেব যেরূপ স্বল্পয়াস-সাধ্য সাধনার উপদেশ দিয়াছেন, তাহা সর্ব্ব সাধারণের ক্লেশ রাশি নিবারণার্থ সর্ব্বত্র প্রকাশিত করা সত্যধর্ম্ম প্রচারের দ্বিতীয় উদ্দেশ্য।
১৭/ দেবদেবীগণ পূর্ব্বেও যেমন ছিলেন, এখনও তেমনি আছেন, পূর্ব্বে তাঁহাদিগের অর্চ্চনা করিয়া যেরূপ ফল পাইত, এখনও প্রকৃত পূজা করিতে পারিলে তদ্রুপ ফলই প্রাপ্ত হওয়া যায়। কিন্তু পূজা পদ্ধতি প্রায় পূর্ব্ববৎ থাকিলেও উহার অন্তর্গত অতি প্রধান ও গুহ্য দুই চারিটি কথা স্থানে স্থানে নাই, বোধ করি পূর্ব্বতন পূজকগণ স্বীয় গৌরব রক্ষার্থ ঐগুলি গ্রন্থ হইতে ফেলাইয়া দিয়াছিলেন, কারণ তাহা হইলে অন্যে ঐ পুস্তক দেখিয়া পূজা করিয়া আর ফল পাইবে না, কিন্তু তাঁহারা গুপ্ত অংশের পরিজ্ঞান সিদ্ধির ফল পাইতে পারিবেন। এইরূপ যে সকল অংশ গুপ্ত হইয়াছে, তাহা পুনঃ প্রচারিত করা সত্যধর্ম্মের তৃতীয় উদ্দেশ্য।
১৮/ কি শাক্ত, শৈব, বৈষ্ণব ধর্ম্ম, কি বৌদ্ধ ধর্ম্ম, কি ইহুদি, খৃষ্টান ও মুসলমান ধর্ম্ম-সকল ধর্ম্মেই ঐরূপ কতকগুলি কথা আছে, যাহার অর্থ আপাততঃ কিছুই বুঝা যায় না, অথবা অতিশয় কুৎসিত বলিয়া জানা যায়, কিন্তু ঐ সমস্তের যে অতি ক্রমশঃ বীত রাগ হইতেছেন, একারণ তাহাদিগকে দৃঢ় রাখা এবং উল্লিখিত অসত্য সংকলনের অপসরণ পূর্ব্বক সত্য প্রকাশ সত্যধর্ম্মের চতুর্থ উদ্দেশ্য।
১৯/ কোন একজন প্রকৃত ধর্ম্মার্থী কখনই হিন্দু, মুসলমান, খৃষ্টান প্রভৃতি সকল ধর্ম্মাবলম্বী বলিয়া পরিচিত হইতে পারেন না, অথচ যিনি প্রকৃতরূপে ধর্ম্মানুষ্ঠান করেন, তিনি ঐ সকল ধর্ম্মের কোনটীরই বিরোধী নহেন। সুতরাং তাঁহাকে যদি জিজ্ঞাসা করা যায় যে, আপনি কোন ধর্ম্মাবলম্বী, তবে তিনি কোনও প্রচলিত ধর্ম্মের নাম করিতে পারেন না, কেননা তৎসমুদয়ই বর্ত্তমান সময়ে সম্প্রদায় বিশেষের মধ্যে নিবদ্ধ হইয়াছে বলিয়া সর্ব্বধর্ম্ম মর্ম্মভাব অপূরিত, একারণ তাঁহাকে বলিতে বাধা হইতে হয়, যে যে ধর্ম্ম সত্য অর্থাৎ যথার্থ বিষয় সমূহে পরিপূর্ণ, যে ধর্ম্ম সত্য অর্থাৎ নিত্যকাল অনন্তকাল বিদ্যমান ছিল, আছে ও থাকিবে, এবং যে ধর্ম্ম সত্য অর্থাৎ সত্য স্বরূপ পরমপিতার একমাত্র অভিপ্রেত, আমি সেই ধর্ম্ম অবলম্বন করিয়াছি। এক্ষণে বিবেচনা করিয়া দেখ উল্লিখিত ধর্ম্মের কোনও একটি নাম হইতে পারে না। কিন্তু যেমন জগদীশ্বর নিরুপাধি হইলেও ভক্তগণ তাঁহাকে নানাবিধ নামে আখ্যায়িত করিয়াছেন তদ্রূপ উল্লিখিত ধর্ম্মেরও নানারূপ নামকরণ হইয়াছে। কিন্তু ততগুলো নাম জগতে প্রচালিত হইয়াছে কোনটাই ব্যাপক নহে, সকল গুলি ব্যাপ্য, কেবল “ব্রাহ্মধর্ম্ম” এই নামটি ব্যাপক, কিন্তু উক্ত নামটি ধর্ম্মের মর্ম্ম প্রকাশ না হইয়া কেবল ধর্ম্মানুষ্ঠানের লক্ষ্যার্থের প্রকাশক হইয়াছে, এজন্য ঐ নামটিকেও সর্ব্বাঙ্গ সম্পন্ন বলিয়া নির্দ্দেশ করা যায় না। মনে কর, একজন জিজ্ঞাসা করিলেন যে মহাভারতের রচয়িতা কে, ইহাতে যদি কেহ বলে যে “পরাশরের পূত্র” তবে উহা অসঙ্গত হইল না বটে, কিন্তু প্রণেতার প্রকৃত নাম জানা গেল না, কেবল তৎপরিবর্ত্তে তাঁহার একটি মাত্র বিষয়ের পরিচয় প্রাপ্ত হওয়া গেল। এইরকম ব্রহ্মধর্ম্ম বলিলে বুঝা যায় যে উহা ঈশ্বরবাদপূর্ণ ধর্ম্ম, এই মাত্র, কিন্তু অত্যাবশ্যক পূর্ব্বোক্ত ত্রিবিধ অর্থ বুঝায় না। এই সমস্ত পর্যালোচনা করিয়া পারলৌকিক মহাত্মারা এই বিশ্বব্যাপী-সর্ব্বধর্ম্ম গর্ভ সর্ব্বাপেক্ষা ব্যাপকতম “সত্যধর্ম্ম” এই নাম নির্দ্দেশ করিয়াছেন। তাঁহারা বলেন, সংস্কৃত ভাষা পার্থিব সমস্ত ভাষা অপেক্ষা ব্যাপক বলিয়া ইহার, “সত্য” শব্দ যাদৃশ ভাব প্রকাশক, অন্য সমস্ত ভাষায় যাহা আছে তাহা অবলম্বন করিলে পূর্ব্বে পূর্ব্বেও এইরূপ নামই প্রদত্ত হইয়াছিল যথা — খৃষ্ট প্রচারিত ধর্ম্ম “ট্রুরিলিজেন” অর্থাৎ সত্যধর্ম্ম নামে বিখ্যাত।
২০/ সত্যধর্ম্মীদের জাতি বর্ণনির্ব্বিশেষে শুধুমাত্র গুণী ব্যক্তিকে শ্রদ্ধা করিতে হয়।
২১/ রাজার প্রতি ভক্তি (দেশের প্রধান) ও বিশ্বাস করিবে। রাজভক্তি না থাকিলে অনন্ত জগতের রাজা পরমেশ্বরের প্রতি ভক্তি–বিশ্বাস করা দুঃসাধ্য।
২২/ সাবধান! সাবধান! সত্যধর্ম্মীরা কদাচ দোষকর কার্য্যে প্রবৃত্ত হই না।
২৩/ সত্যধর্ম্মীরা ক্রোধ সংজম করিতে বাধ্য। কদাচ ক্রুদ্ধ হইয়া কোন কার্য্য করিতে পারিবে না।
২৪/ পিতা–মাতা সন্তানদের যত্ন সহকারে প্রতিপালন করে।
২৫/ সত্যধর্ম্মীদের সন্তানেরা পিতা–মাতার সেবা যত্ন করিয়া থাকে।
২৬/ পিতা ও মাতা ছেলে ও মেয়ের বয়ঃসন্ধিকালে ব্রহ্মচর্য্যের মাধ্যমে অতিমূল্যবান যৌন শিক্ষা প্রদান করিয়া থাকে।
২৭/ শিশু জন্ম গ্রহণ করিলে তাহাকে পরিস্কার পরিচ্ছন্ন করিয়া রাখিতে হয়।অন্য কেহ শিশু কে ধরিতে গেলে সাবান দিয়া হাত, পা ও মুখ ধৌত করিয়া কাছে যাইতে হইবে, কোনওরূপ মিথ্যাসংস্কার করা যাবেনা, গুরুর আজ্ঞানুরূপ কার্য্য করিতে হইবে।
২৮/ শিশু জন্ম গ্রহণ করিলে অবৈজ্ঞানিক প্রথা প্রচলিত রূপ পরামানিকের ব্যবহার, উহা নিষিদ্ধ।
২৯/ বাড়িতে কোনওরূপ সামাজিক কুপ্রথা প্রচলিত-সংস্কার নিষিদ্ধ যেযন কিন্নর নিত্য।
৩০/ সমাজে অবৈজ্ঞানিক প্রথা প্রচলিত যেমন চন্দ্র গ্রহণ অথবা সূর্য্য গ্রহণ হইলে যে সব ভ্রান্তি আছে তাহা কিছুই করা যাইবে না।
৩১/ সতধর্ম্মীরা কাহাকেও ঘৃনা করে না সকলেই সত্যের সন্তান অর্থাৎ সৃষ্টি কর্ত্তা হইতে সকলেই আসিয়াছি বলিয়াই আপন করিয়া লই।
৩২/ সত্যধর্ম্মীরা কোনওরূপ অপচয় বিরোধী যেমন জল ও খাদ্য ও অন্যান্য বিষয়, যতটাই প্রয়োজন তাহাই ব্যবহার করিতে হয়।
৩৩/ সৎ-সতীদের শয়ন কালে পূর্ব্ব ও দক্ষিণ মুখে মাথা রাখিয়া শয়ন করিতে হয়। যদি পশ্চিম দিকে মাথা দিয়া শয়ন করিতে হয় তাহা হইলে সূর্য্য উঠিবার পূর্ব্বেই শয়ন ত্যাগ করিতে হইবে। ইহার বৈজ্ঞানিক কারণ আছে।
৩৪/ কৃতজ্ঞতা পরম ধন। যিনি তোমার অনুমাত্র উপকার করিয়াছেন, চিরকাল তাহার নিকট কৃতজ্ঞ থাকিবে। একারণ, পিতা–মাতা শিক্ষক প্রভৃতি এক গুরুর শিষ্যগণের মধ্যে পূর্ব্ববর্তিগণ কৃতজ্ঞতার পাত্র। অন্যান্য বিষয় বিবেচনা পূর্ব্বক কার্য্য করিবে।
৩৫/ ধর্ম্মের নামে ভিক্ষা করিতে আসিলে, তাহাকে ভিক্ষা দেওয়া যাবে না।
১/(চ) সামাজিক বিচার পদ্ধতি :-
১/ সত্যধর্ম্মে প্রাণ দন্ডের বিধি নাই।
২/ গুণের মাধ্যমে সকল অপরাধ হইতে নিবৃতি করাই মূল পদ্ধতি অবলম্বীত হইবে।
৩/ অপরাধিদের উপাসনা ও সাধনার মধ্যে নিমগ্ন রাখিয়া চলিবার কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করাই মূল উদ্দেশ্য।
৪/ সত্যধর্ম্মাবলম্বীদের যে অপরাধই হোক না কেন, তাহাদের গুণের মাধ্যমে বোঝাইয়া স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরাইয়া আনিতে হইবে।
৫/ যদি কেহ কোনওরূপ অপরাধ করিয়া থাকে তাহা হইলে সত্যধর্ম্ম অনুরূপ বিচার পদ্ধতি সম্মুখে রাখিয়াই দেশীয় দন্ডবিধির পর্যালোচনা পূর্ব্বক কার্য্য অর্থাৎ দন্ড বিধি নির্ধারিত করিতে হইবে।
১/ছ) শিক্ষা ব্যাবস্থা।
শিক্ষা দুই প্রকার যেমন ১) পরাবিদ্যা ও ২) অপরাবিদ্যা।
১/ছ) ১) পরাবিদ্যা অর্থাৎ আধ্যাত্মিক বিদ্যা। স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় নিয়মে সত্যধর্ম্ম ও অন্যান্য সমস্ত ধর্ম্মের শিক্ষা প্রদানের ব্যাবস্থা ও গবেষণার ব্যাবস্থা।
১) শিশু কাল হইতেই আধ্যাত্মিক শিক্ষার মাধ্যমে বড়ো করে তোলা।
২) প্রতিদিন ভক্তি শিক্ষার মাধ্যমে গড়ে তুলতে হবে।
৩) স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় নিয়মে সত্যধর্ম্মের শিক্ষার রূপ গঠন পরিকাঠামো গড়ে তুলিতে হবে।
৪) মাধ্যমিক নিয়মে সমদর্শন সাধনার নিয়মে গঠন পরিকাঠামো গড়া।
৫) গ্র্যাজুয়েট নিয়মে গুণের বৃদ্ধি এবং সাধন বিভাগ গঠন তৈরী করিয়া শিক্ষা দেওয়া।
৬) ডক্টরেট নিয়মে সাধন জীবনে প্রবেশ করাইয়া একত্ত্ব লাভে প্রতিস্থাপন করা।
৭) সাধন জীবনে বয়সের সীমা বদ্ধ নাই।
৮) সাধনায় নারী ও পুরুষের সমান অধিকার।
৯) ছাত্র ও ছাত্রীদের থাকার ব্যাবস্থা পৃথক পৃথক করিতে হইবে।
১০) ছাত্রছাত্রীদের থাকার ব্যাবস্থা পৃথক হইলেও সাধনা যেমন শিক্ষা ব্যাবস্থা পড়াশোনা একই সঙ্গে হইবে।
১/ছ) ২) অপরাবিদ্যা অর্থাৎ সাধারণ নিয়মে যে যে শিক্ষা পরিকাঠামো আছে তাহাই অবলম্বনে জীবন গঠন করিতে হইবে।
ওঁং
সত্য-ধর্ম্ম
বৈবাহিক বিধি
২/(ক) কাহাদের সহিত কাহাদের বিবাহ সম্পর্ক হইতে পারে :-
১/ নিখিল ব্রহ্মাণ্ডের সমস্ত নরনারীই প্রেমের পাত্র সুতরাং যে কোনও সম্প্রদায় হউক না কেন বা পৃথিবীর যেকোনও দেশের হউক না কেন তাহারা বিবাহ সূত্রে আবদ্ধ হইতে পারে।
২/ যদি দুই বা তদধিক অবিবাহিত রমণী কোনও এক পুরুষের প্রতি প্রেমাসক্ত হন, সেখানে যে রমণীর সহিত তাঁহার অধিক প্রেম হইয়াছে তাহাকেই তিনি বিবাহ করিবেন।
ক) অপর রমণীদিগকে বিবাহ না করায় অপরাধ হইবে।
খ) কোন এক ব্যক্তির অভিষ্ট (প্রকৃত বাঞ্ছা) পূরণ না করিলে যে অপরাধ হয়, তাঁহার তাহাই হইবে। (যথা, একটি গোহত্যা করিলে যে অপরাধ হয়) যত জনের অভিষ্ট ভঙ্গ করা হইবে, ততটী গোহত্যা করার অপরাধ হইবে।
৩/ যদি অন্য কাহারও সহিত তাঁহার (ঐ পুরুষের) প্রকৃত প্রেম হইয়া থাকে, তবে উহাদিগের কাহাকেও বিবাহ করা যাবেনা।
ক) কেননা বিবাহ না করিলে অভীষ্ট পূরণ না করার অপরাধ (গোহত্যা অপরাধ) হইবে,
খ) কিন্তু বিবাহ করিলে প্রকৃত প্রেম ভঙ্গের অপরাধ (মাতৃহত্যার দশগুণ অপরাধ) হইবে,
গ) পরন্তু কামক্রোধাদিবিহীন সাধকেরা উক্ত রমণীদিগের সকলকেই বিবাহ করিতে পারেন। তাহাতে তাঁহাদের অনুমাত্র অপরাধ হইবে না,
ঘ) না করিলে পূর্ব্ব অপরাধ হইবে(অর্থাৎ গোহত্যা অপরাধ হইবে)।
এক্ষণে বক্তব্য প্রকৃত প্রেম কি এবং কাহাকে কহে ?
প্রেমময়ের প্রেমরাজ্যে যত কিছু গুণ আছে, তন্মধ্যে প্রেম সর্ব্বপ্রকারে সর্ব্বাংশে সর্ব্বাপেক্ষা প্রধান। ভালবাসা যাহার অঙ্কুর, তাহাকে প্রেম কহে, অথবা ভালবাসার উন্নত পরিনতিকে প্রেম কহে অর্থাৎ অপরকে আত্মার সংলগ্ন করাকে বা অপরের সুখ-দুঃখাদি অবস্থাতে আপনাকে উপনীত করাকে প্রেম কহে। যে গুণ থাকিলে মরিয়াও বাঁচে, আত্মাতে যাহার অভাব কখনও হয় না ও হইতেও পারে না, যাহা দুঃখকেও সুখে পরিণত করে, সুতরাং যাহা সুখদুঃখ চায় না, লাভালাভের অপেক্ষা করে না, কেবল অভীষ্টকে পাইবার জন্য প্রবর্ত্তিত করে, তাহাকে প্রেম কহে। যে গুণ থাকিলে ঐ গুণের ভাজনকে পাইলে প্রাণ শীতল হয়, আত্মা তৃপ্তিলাভ করে, মন অভিনব আনন্দরসময় ভাবের উদয় হয়, হৃদয় নবভাবে কার্য্যে প্রবৃত্ত হয়, ও পরমাত্মার প্রকৃত কার্য্য করা হয়, আর না পাইলে প্রাণ কিছুতেই শীতল হয় না হৃদয় নীরস হয়, মন ভাবশূন্য প্রায় হইয়া পড়ে, জীবাত্মার ক্লেশের ইয়ত্তা থাকে না, এবং পরমাত্মার উৎকর্ষ ও শান্তি হয় না। মূল কথা যে গুণে ঐ পরম গুণের ভাজনের দোষ গুণে আসিয়া পড়ে, দোষ দেখিতে বাসনা হয় না, কেবল গুণই লক্ষ্য হয়, কথা শুনিলে প্রান জুড়ায়, না শুনিলে জগৎ অন্ধকারময় বোধ হয়, অভাবে জীবন্মৃত থাকিতে হয়, ভাবে সকল অশান্তি দূরে যায়, ফলতঃ। ঐ গুণের প্রকৃত ভাজনের চিহ্নমাত্র না পাইলে কিছুতেই জীবিত থাকা যায় না, তাহাকে প্রেম কহে। প্রেমে সকল গুণের গুণত্ব (সংস্কার) হয়, এজন্য উহা গুণের গুরু বলীয়া কথিত হইতে পারে। যেমন কান্তিহীন দেহের কমনীয়তা কাঞ্চনযোগে বাড়ে না, সেইরূপ প্রেমসাধনাহীন আত্মার উন্নতি অন্য গুণে তত হয় না, ইহার সাধনা সর্ব্বপ্রথমে আরম্ভ হইলেও সর্ব্বশেষেও শেষ হয় না, সুতরাং ইহা অসীম কাল সাধনের ধন। সর্ব্ব ভূমণ্ডলের সকল লোকের হৃদয়েই প্রেম আছে, ( বা প্রেমাঙ্কুর আছে), সকলেই উহার জন্য পাগল, সকলেই ঐ ধনের ভিখারী। ঐ সুধাময় রসের স্বাদ পাইলে মোহিত না হয়, এমন কেহই নাই, তথাপি উহার স্বরূপ নির্দ্দেশ করা বোধ করি কাহারও সাধ্য নহে, কেন না যাহার অন্ত পাওয়া যায় না, তাহার প্রকৃত স্বরূপ কিরূপে নির্দ্দিষ্ট হইবে ? দুঃখময় সংসারে সুখের চন্দ্র প্রেম, ভালবাসা জীবনের বন্ধন, জীবন উহাতেই উৎপন্ন, উহাতেই স্থিত এবং উহার ব্যতিক্রমেই ধংস প্রাপ্ত হয়। বিষময় বিষয়-ধনে প্রেমসুধা-ব্যতীত কিছুতেই শান্তি নাই। এ ধন আঁধারে আলোক, দুঃখে অশান্তিনাশক ও বর্দ্ধনশীল, সুখে সুখ-বর্দ্ধক, যৌবনে বৃদ্ধত্ব ও বার্দ্ধক্যে তারুণ্য সম্পাদক এবং জীবনের চিরসম্বল। এই অসীম গুণের বর্ণনা, অসীম কালেও শেষ হইবার নহে। কোন মহাত্মা এ বিষয়ে যাহা বলিয়াছেন তাহা এই- ভালবাসাকে প্রেম কহে। যে সৃষ্ট আত্মার দর্শন আমার নিকট সৎতই চারু ও মনোহর, যাহাকে নিয়ত দেখিলেই দৃষ্টি তৃপ্তি বোধ করে না, যাহার কথা চির মধুময়, অমৃতময় ও কর্ণকুহরে প্রবেশ করিবা মাত্রেই হৃদয় নাচিতে থাকে বদনে যাহার গুণব্যখ্যা করিয়া শেষ করিতে পারে না, যাহার দোষরাশি কখনই ইন্দ্রিয়গোচর হয় না, দোষ বলিয়া প্রতীয়মান হয় না, অপরের মুখে নিন্দা বা কুৎসা শুনিলে হৃদয়ে বিরক্তির উদয় হয়, যাহার সুখে সুখী ও দুঃখে দুঃখী হওয়া যায়, যে পীড়িত হইলে পীড়িত ও প্রফুল্ল হইলে আমোদিত হই, যাহার অদর্শনে সমস্ত শূন্য দেখী, সুখশান্তীবিহীন হই, আমাতে আর আমি থাকি না, কি হইয়াছে, কিসের অভাব হইয়াছে, অনুভব করিতে পারি না, প্রত্যুত কেবল জীবন্মৃত হইয়া থাকি, যাহার মঙ্গল ভিন্ন অমঙ্গল কামনা হৃদয় কখনই স্থান পায় না, যাহার সামান্য তাচ্ছিল্যভাব বা অনাদরে মরমে মরিয়া যাই, যাহাকে নিঃস্বার্থভাবে আমার বলিয়া অঙ্গীকার করি, জীবনসৰ্ব্বস্ব সমৰ্পণ করিয়াও যাহার কিঞ্চিৎ সাহায্য করিতে পারিলে হৃদয় কৃতার্থ বােধ করে, যাহাকে নিজের অনন্ত দুঃখরাশির কণামাত্র জানাইয়াও দুঃখিত করিতে বাসনা হয়, আবার যাহার দর্শনে কেমন হইয়া পড়ি, কিছু বলিতে পারি না, কিছু বুঝিতে পারি না, কেবল পুতুলের মত হইয়া পড়ি ইত্যাদি ইত্যাদি, তাহাকেই আমি ভালবাসি, তাহাকেই আমি প্রেমকরি ও এরূপ ভালবাসাকেই প্রেমকহে।
৪/ যদি কোন পুরুষের সহিত দুইটী রমণীর প্রকৃত প্রেম হয়, তবে তিনি কাহাকে বিবাহ করিবেন ? ইহার উত্তরে এই বলা যায় যে, সাধক ভিন্ন অপর কাহারও একাধিক রমণীর সহিত প্রকৃত প্রেম হইতে পারে না। আর সাধকদিগের মধ্যে যাহাদিগের পূৰ্ব্ববৎ ক্ষমতা (প্রেমের সংঙ্গা অনুরূপ) নাই, তাহারা একটীকে বিবাহ করিবেন, কারণ একটী বিবাহ করিলে প্রকৃত প্রেম ভঙ্গের অর্ধেক অপরাধ ও দুইটী বিবাহকরিলে প্রকৃত প্রেমভঙ্গের অপরাধ হইবে। কিন্তু পূৰ্ব্ববৎক্ষমতাপ্রাপ্ত সাধকদিগের পক্ষে উভয় বিবাহ করায় কোনও অপরাধ হইবে না। কারণ, তাঁহারা সাধারণ নিয়মের অতীত।
৫/ যদি কোন রমণীর লৌকিক মতে বিবাহাদি হইয়া পাশ্বাচারাদি (শারীরিক সম্পর্ক) হইয়া থাকে, পরে যদি অন্য কোন পুরুষের সহিত তাহার প্রকৃত প্রেম হয় তাহা হইলে পুরুষ তাহাকে বিবাহ করিতে পারেন না।
৬/ যদি কোন রমণীর কোন পুরুষের সহিত পশ্বাচারাদি (শারীরিক সম্পর্ক) হয়, কিন্তু প্রকৃত প্রেম না হয়, এবং তদনন্তর যদি ঐ পুরুষ লােকান্তরে গমন (পরলােকে গমন) করেন, আর অপর পুরুষের সহিত উক্ত রমণীর প্রকৃত প্রেম হয়, তাহা হইলে উক্ত রমণী ও পুরুষের বিবাহ হইতে পারে, কিন্তু পশ্বাচারাদি(শারীরিক সম্পর্ক) হইতে পারেনা।
৭। যদি কোন বিধবা স্ত্রীর অপর পুরুষের সহিত প্রকৃত প্রেম হয়, আর তাহার পূর্ব্ব পতির সহিত প্রকৃত প্রেম বা পশ্বাচারাদি না হইয়া থাকে, তবে অপর পুরুষের সহিত তাহার বিবাহ ও পশ্বাচারাদি হইতে পারে।
৮। সহােদর ও সহােদরা (ভাই ও বােন) প্রভৃতি এক রক্তজ বা নিকট সম্পর্কীয় (মাতৃ ও পিতৃকুলজ) দিগের পরস্পরবিবাহ হইলে, সন্তানের শরীরের কিঞ্চিৎ দুৰ্বলতা প্রভৃতি হইতে পারে বটে, কিন্তু প্রকৃত প্রেম হইলে উহাদিগেরও বিবাহ দেওয়া উচিত।
৯। প্রকৃত প্রেম হইলে যে কোন বয়সে এবং বিপরিত বয়সেও পরস্পর বিবাহ হইতে পারে।
১০। পাত্রী বা পাত্র “প্রকৃত প্রেম” হইলে ঐ দম্পতিকে অভিভাবকগণের কর্তব্য বিবাহ দিবার।
১১। এই পবিত্র ধৰ্ম্মের সাধু নিয়মকে সাধুভাবে পরিচালিত করিতে হইলে, পুত্র ও কন্যাকে অপেক্ষাকৃত অল্পবয়সে বিবাহ দিয়া, যাহাতে তাহারা পরস্পরের সহিত সময়ে সময়ে মাত্র ক্ষণকালের জন্য দেখা করিতে পারে, অথচ অধিক কাল একত্র থাকাতে না পারে, এরূপ উপায়, বিশেষ মনােযােগ সহকারে অবলম্বন করা সাধারণের পক্ষে কৰ্ত্তব্য। যদি কেহ ইহাতে বাল্যবিবাহের দোষরাশির আশঙ্কা করেন, তবে তাঁহাদিগের ভ্রান্তি বলিতে হইবে; কারণ যেরূপ উপায় নির্দিষ্ট হইল,তাহাতে বাল্যবিবাহের যাহা দোষ, তাহা হইবার প্রায় সম্ভাবনা নাই। এবং প্রেমবৃদ্ধিরূপ পরম উপকার সাধিত হইবার সবিশেষ সম্ভাবনা আছে, সুতরাং ইহা দূষণীয় হওয়া দূরে থাকুক, অতি প্রশংসনীয় কাৰ্য্য, সন্দেহনাই।(এইবিষয় করাইতে গেলে গুরুরসম্মুখে করাইতে হইবে।)
এই ধর্মে গুরু হইবার উপযুক্ত গুণসমূহঃ-
(১) প্রেম , (২) সরলতা, (৩) পবিত্রতা, (৪) একাগ্রতা, (৫) ভক্তি ও ঈশ্বরজ্ঞান আছে এবং (৬) যাহার মন কুপথে গমন করে না, (৭) সম্পত্তি বিষয়ে নিস্পৃহতা, (৮) নিস্পাপ অবস্থা বা মূর্তিমতী পবিত্রতা, (৯) অন্যদীয় পাপগ্রহণ ক্ষমতা, (১০) লােকের উপকার ভিন্ন অপকার করিব না, এই বিষয়ে দৃঢ়নিশ্চয়তা, (১১) সিদ্ধিসমূহলাভেরউপযুক্ত গুণ, (১২) কাম-ক্রোধহীনতা, (১৩) অন্ততঃ সমস্ত মানুষকে সহােদরবৎ দর্শন ও তদনুরূপ আচরণ করা, ইত্যাদি ইত্যাদি ইত্যাদি।
যদি শাস্ত্রজ্ঞান সম্পন্ন, প্রেমময়াদিঅবস্থা বিশিষ্ট( প্রেমময় অবস্থা, গানময় অবস্থা, দূরদর্শনময় অবস্থা এবং ভাবি-জ্ঞানময় অবস্থা।), কঠোরতর ধর্ম্মকর্মে সুদক্ষ, অভেদজ্ঞান করিতে পারগ, বাকসিদ্ধ, অর্থবিষয়ে নিস্পৃহ, জাতগুণ-সমূহের (৬) লয়-সম্পাদনে কৃতকাৰ্য্য বা সমর্থ, এবং পাপগ্রহণ, গৃহীত পাপ হইতে তৎক্ষণাৎ মুক্তিলাভ, আয়ুঃ প্রদানশক্তি ও আত্মার অসীমত্বসাধনা প্রভৃতি বিষয়ে সিদ্ধ, বিশেষতঃ ভক্তি, প্রেম ও শ্রদ্ধা এই গুণত্রয়সম্পন্ন ব্রহ্মদর্শী বা তদীয় অনুজ্ঞাত মহাপুরুষই গুরু হইবার উপযুক্ত হন। এইরূপ মহা সাধক হইবার পূর্বেই যখন প্রথম সাধনা সমদর্শন করেন তখন ক্ষুধাহীন, তৃষ্ণাহীন ও নিদ্রাহীন অবস্থা লাভ করিয়া থাকেন। সুতরাং বহুদিন যাবত এই অবস্থায় উপাসনা করিবার ক্ষমতা লাভ করিয়া থাকেন। তাঁহার বয়সের পরিমাপ হইতে পারেনা কেননা বৃদ্ধকালেও এই সুমহান তিনটী গুণের অবস্থা থাকিতে পারে।
১২। প্রকৃত প্রেমহইলে পুরুষে পুরুষে ও নারীতে নারীতে প্রণয়ে আবদ্ধ হইতে পারে।
১৩। প্রথমে ব্রহ্মচর্য অবলম্বন পূৰ্ব্বক গুরুর আজ্ঞা লইয়া গৃহাস্রাশ্রমে (বিবাহ বধ্যে
আবদ্ধ) প্রবেশকরিতে হইবে।
১৪। গুরুর আজ্ঞা লইয়া বিবাহ সংক্রান্ত যাবতীয় কর্ম করিতে হইবে।
১৫। অন্য সমাজ হইতে পাত্র বা পাত্রী অনিবার পূৰ্ব্বে সত্যধর্ম্মের নিয়মাবলী জানাইয়া বিবাহবদ্ধে আবদ্ধ করিতে হইবে।
১৬। অন্য সমাজ হইতে পাত্র বা পাত্রী অনিবার পূৰ্বে সম্পর্ক স্থাপনের পূৰ্বে বিশেষ করিয়া ধর্ম্মের মূল বিষয় যেমন এই বিশুদ্ধ ধর্মের মতে সাকার উপাসনা নাই, যােগ-সাধন নাই জাতিভেদ নাই, এবং নিৰ্ব্বাণ (ঈশ্বরে লীন হওয়া) নাই। ইহার মতে গুণসাধন সর্বপ্রধান কাৰ্য্য। নিরাকার অদ্বিতীয় পরমপিতার উপাসনা প্রতিদিন তিন ঘন্টা করিতে হইবে।
১৭। বিবাহের মূল উদ্দেশ্য প্রেম সাধনা অতএব আত্মােন্নতী লাভ করিতে হইলে পাত্র ও পাত্রী উভয়ের একইভাব ধারার প্রয়ােজন।
১৮। পাত্র ও পাত্রীর উপযুক্ততা দেখিতে হইলে শারীরিক ও মানষিক অবস্থা ভেদে বিবেচ্য বিষয়। পাত্রীর রজকাল শুরু হইলেই এবং পাত্রের যৌবন শুরু হইলে এক প্রকার শারীরিক ক্ষমতা হইয়া থাকে কিন্তু পূর্ণ ভাবে শারীরিক বিকাশ লাভ করিতে প্রায় ১৮ বছর বয়সের প্রয়ােজন হয় কার কার ক্ষেত্রে বেশি হইতে পারে। মানষিক দিক হইতে বিচার করিলে কেহ কেহ ১৮ বৎসর কেহ কেহ ২৫ বৎসর হইতে পারে। পাত্রের ক্ষেত্রে ২০বৎসর হইতে ২৫বৎসর পর্যন্ত বিকাশ লাভ করে।
১৯। গুরুর আদেশ মত গুরুর কাছে পাত্র ও পাত্রী উভয়ের বিপরীত শ্রেষ্ঠ গুণাবলী লিখাইয়া জানাইতে হইবে।
২০। পাত্র ও পাত্রীর অমতে বিবাহ দেয়া যাবেনা।
২১। উভয় উভয়কে সম্মান করিতে হইবে তাহা হইলেই বিবাহ দেয়া যাইবে।
২২। উভয় উভয়ের অভিভাবকগণ কে সম্মান করিতে হইবে পাত্র ও পাত্রীকে।
২৩। উভয় উভয়ের কর্মক্ষেত্র কে সম্মান জানাইতে হইবে পাত্র ও পাত্রীকে।
২৪। উভয় উভয়ের কোনও বিষয় গােপনকরা যাইবেনা।
২৫। যদি বিশেষ কিছু বিষয় থাকে তাহা হইলে গুরুর সম্মুখে ব্যক্ত করিতে হইবে। যদি গুরু বলেন বিবাহ করিতে তাহা হইলেই করিতে পারিবে।
২৬। বিশেষ কারণ বসত উভয়ের অভিভাবকবিহিন বিবাহ করিতে চায় তাহা হইলে গুরুরসম্মুখে জানাই তেহইবে।
২৭। বিবাহের পূর্বে পাত্র ও পাত্রীরসমগ্রবিষয় অভিভাবকগণ কেজানাইতেহইবে।
২৮। পাত্র ও পাত্রী যদি পূৰ্বে প্রেমে আবদ্ধ না হয়, তাহা হইলে উভয়ের রক্তের পরিক্ষা করাইয়া লইতে হইবে।
২৯। পূর্বে প্রেম না থাকিলে পাত্র ও পাত্রী উভয়কেই সম্মুখে রাখিয়া কথা বলাইয়া লইতে হইবে।
৩০। পাত্র ও পাত্রী উভয়ের পরিবার যেন তাহাদের রােগের (শারীরিক ও মানসিক) কথা জানাইয়া বিবাহে সম্মতি প্রদান করেন।
৩১। পাত্র ও পাত্রী উভয়ের কোনও একজন সত্যধর্ম্মাবলম্বী না হন। তাহাদের প্রেম প্রবন্ধ পড়িয়া বিবাহ বদ্ধে আবদ্ধ হইতে হইবে। এই পবিত্র ধৰ্ম্মের সাধু নিয়মকে সাধুভাবে পরিচালিত করিতে হইলে, পুত্র ও কন্যাকে অপেক্ষাকৃত অল্পবয়সে বিবাহ দিয়া, যাহাতে তাহারা পরস্পরের সহিত সময়ে সময়ে মাত্র ক্ষণকালের জন্য দেখা করিতে পারে, অথচ অধিককাল একত্র থাকাতে পারে, এরূপউপায়, বিশেষ মনােযােগ সহকারে অবলম্বনকরা সাধারণের পক্ষে কৰ্ত্তব্য। যদি কেহ ইহাতে বাল্যবিবাহের দোষরাশির আশঙ্কা করেন, তবে তাঁহাদিগের ভ্রান্তি বলিতে হইবে; কারণ যেরূপ উপায় নির্দিষ্ট হইল, তাহাতে বাল্যবিবাহের যাহা দোষ, তাহা হইবার প্রায় সম্ভাবনা নাই। এবং প্রেমবৃদ্ধিরূপ পরম উপকার সাধিত হইবার সবিশেষ সম্ভাবনা আছে, সুতরাং ইহা দূষণীয় হওয়া দূরে থাকুক, অতি প্রশংসনীয় কাৰ্য্য, সন্দেহ নাই। (এই বিষয় করাইতে গেলে গুরুর সম্মুখে করিতে হইবে)
৩২। পাত্র ও পাত্রী উভয়ের কোনও একজন কোনও রূপশারীরিক বৈকুল্য থাকিলে তাহা জানাইয়া দুইজনেই সম্মানসূচক আচরণ করিতে হইবে।
৩৩। পারিবারিক অমতে যদি পাত্র ও পাত্রী উভয়েই বিবাহবদ্ধে আবদ্ধ হইতে চাহিলে গুরুর সম্মুখে আসিয়া ব্যক্ত করিলে তিনি সেই পরিস্থিতি অনুরূপ যেমনকরিতে বলিবেন উভয়কেই মানিয়া লইতে হইবে।
৩৪। পাত্র ও পাত্রী উভয়ের যেকোনও একজন সত্যধর্ম্মাবলম্বী হইলে অপর একজনকে যেন প্রকৃত ধৰ্ম্মের নিয়মাবলী জানাইয়া বিবাহ বদ্ধে অবদ্ধ হন। যদি একান্ত অপারক হয় তাহা হইলে গুরুর স্মরণাপন্ন হইতে হইবে। তিনি যেমন বলিবেন তেমনই চলিতে হইবে।
৩৫। হঠাৎ করিয়া পাত্র ও পাত্রীর কোনও বিষয় না জানিয়া বিবাহ বদ্ধে অবদ্ধ করান যাবেনা।যদি গুরু বলেন করিতে পারে।
৩৬। জোর করাইয়া পাত্র ও পাত্রীর বিবাহ দেওয়া যাইবে না।
৩৭। পাত্র ও পাত্রীর বিবাহের পূর্বে গুরু যদি কোনও বিষয়ের উপর সাধনা করিতে বলেন (উভয়কেই) সেই সাধনা করিতে হইবে। উহা একজনার ক্ষেত্রেও হইতে পারে।
৩৮। কোনও কারণে যদি পাত্র ও পাত্রী উভয় সত্যধৰ্ম্মের বিবাহ বিধির বাহিরে বিবাহ করিয়া আইসে, তাহা হইলে তাহাদের গুরু বাক্যানুসারে কাৰ্য্য করিতে হইবে।
৩৯। পাত্র ও পাত্রী যেকোনও একজন কোনও বিশেষ কারণে অবস্থার পরিপেক্ষিতে
বিবাহবন্ধনে অবদ্ধ হইতে চায় তাহা হইলেও ধৰ্ম্মের বিষয় জানাইতে হইবে।
৪০। পাত্র ও পাত্রী কেহই যদি ধর্ম্মের বিষয় অবগত না হইয়া বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়, তাহা হইলে পরিবার হইতে তাহাদের ধর্মের প্রতিটী নিয়ম অবগত করাইতে হইবে।
৪১। পাত্র ও পাত্রী যেন বিবাহের মূল উদ্দেশ্য প্রেম সাধনা, তাহা অবগত হইতে পারে এবং প্রকৃত ধর্মের নিয়ম পালনে তাহা হইলে উন্নতী প্রাপ্তি ঘটে ইহা পরিবারের জানাইতে হইবে।
৪২। পাত্র ও পাত্রী বিবাহের আগে আত্মােন্নতী না করিয়া থাকিলে পরে করিতে হইবে এবং তাহা গুরুর মুখে জানিয়া লইতে হইবে।
৪৩। যদি সত্যধৰ্ম্মের প্রথম ধারা হইতে দশম ধারা অলঙ্ঘনীয় অবস্থায় বিবাহ করিতে চায় তাহা হইলে গুরুর শরণাপন্ন হইয়া সমস্ত বিষয় জানাইতে হইবে।তিনি যেমনই বলিবেন তেমনই করিতে হইবে।
৪৪। পাত্র ও পাত্রী উভয় পক্ষের বিবাহ সংক্রান্ত আলােচনা হইলে দুই পরিবারের সম্ভাষন জানাইতে হইবে।
৪৫। পাত্র ও পাত্রী উভয় পক্ষের বিবাহ সংক্রান্ত আলােচনা হইলে দুই পরিবারের আবেদন স্বরূপ লিখিত জানাইতে হইবে গুরুর কাছে।
৪৬। পাত্র ও পাত্রী উভয়ই এই ধর্ম্মে দীক্ষিত না হইলে দীক্ষা লাভ করিয়াই বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হইতে হইবে।
৪৭। পাত্র ও পাত্রী উভয়ের যেকোনও একজন যদি সত্যধর্ম্মী না হয় তাহা হইলে পরবর্তীতে ধর্মের বিষয় জানাইয়া দীক্ষারূপ পরম জন্ম লাভ করাইতে হইবে। তাহা বিবাহের পরে হইলেও হইবে।
৪৮। পাত্রী যদি সত্যধর্মী হয়, তাহার সহিত অন্য কাহারও প্রেম অথবা বিবাহ নির্ধারিত হয় তাহা হইলে তাদেরকে সত্যধৰ্ম্মের বিষয় জানাইতে হইবে। এই বিশেষ অবস্থায় গুরুর স্মরণাপন্ন হইতে হইবে, তিনি যেমন যেমনটী বলিবেন তেমন ভাবেই করিতে হইবে।
৪৯। পাত্র ও পাত্রী অন্যও কোনও সম্প্রদায় হইতে আসিয়া বিবাহ করিতে বাসনা করে, তাহা হইলে এই ধর্মে প্রবেশ করিতে হইবে।
২/(খ) কিরূপ রীতিতে বিবাহ সম্পন্ন হয় :-
১। মিলনােৎসবেই বিবাহ হইলে সৰ্বোকৃষ্ট, এবং অনান্য উৎসবেও হইতে পারে। উৎসবে প্রেমের অধিবেশনেই বিবাহ হইতে হইবে।
২। বিবাহ আদি গুরুর সম্মুখেই হইতে হইবে।
৩। যে উৎসবে বিবাহ সম্পন্ন হইবে, পাত্র ও পাত্রী উভয়কেই সম্পূর্ণ উৎসবে | থকিতে হইবে।
৪। পাত্র ও পাত্রী উভয়ই তত দেশিয় সর্বোৎকৃষ্ট প্রশাক পরিধান পূর্বক বিবাহের জন্য প্রেমের অধিবেশনে বসিতে হইবে।
৫। উপাসনায় গুরুর ডান পাশে, পাশাপাশী পাত্র ও পাত্রীকে বসিতে হইবে।
৬। যাহারা পাত্র ও পাত্রীকে সম্প্রদান করিবেন তাহারা দুজনারই পাশে বসিতে হইবে।
৭। উপাসনায় গুরু পরমপিতার উদ্দেশ্যে মৌখিক প্রার্থনা করিবার পর বিবাহের কাৰ্য্য শুরু হইবে।
৮। যে মুহুর্তে বিবাহ হইবে সর্বাগ্রে সম্প্রদানের কাজ করিতে হইবে। গুরু যাহা বলিবেন তাহাই অভিভাবক গণকে বলিতে হইবে। যেমন পাত্রীর দুইটি হাত লইয়া পাত্রের দুইটী হাতের উপর রাখিয়া বলিবেন আজ হইতে (পাত্রীর নাম উল্লেখ পূৰ্ব্বক) কে, তােমার হস্তে অৰ্পণ করিলাম। পাত্র বলিবে – আমি পৃত হইলাম।
৯। পাত্র ও পাত্রী দু’জনেই পরমপিতার উদ্দেশে প্রার্থনা করিবে, হে প্রেমময় বিশ্বপিতা, আজ হইতে আমরা প্রেম মিলনে প্রবেশ করিব, তােমার মঙ্গল-ডােরে বেঁধে রেখ, দয়াময় দয়া কর।
১০। পাত্র ও পাত্রী দু’জনেই দু’জনকে আংটি পরাইবে।
১১। পাত্র ও পাত্রীর শপথ বাক্য ঃ- দু’জনেই বলিবে; আমি, (নাম..........)পরমেশ্বর ও গুরুদেবের নামে শপথ করিতেছি যে, আমার পিতৃকুল ও মাতৃকুলকে সাক্ষী রাখিয়া, এই বিবাহিত জীবনের সকল দায়িত্ব পালন করিব, সুখ-দুঃখের অংশ হইব, ভালােবাসাই জীবনের মূলমন্ত্র রূপে মানিয়া চলিব।
১২। পাত্র ও পাত্রী এক এক করিয়া এই বলিবে যে, (শুধু নাম উল্লেখ করিয়া) তােমাকে আমারহৃদয়স্থ করিলাম।
১৩। গুরু পাত্র ও পাত্রীকে উদ্দেশ্য করিয়া বলিবেন আজ হইতে প্রেম প্রবন্ধে যেরূপ | ভাবে প্রেমের ভাব আছে তাহা তােমাদের জীবনে প্রতিফলিত করিতে চেষ্টা করিবে।
১৪। পাত্র ও পাত্রী দু’জনেই মালাবদলকরিবে।
১৫। পাত্র পাত্রীকে সিঁদুর (লাল সিঁদুর শক্তি এবং প্রেমের প্রতিক তাহা কপালে পড়িলে প্রেমে আবদ্ধ করিতে সাহায্য করে) পরাইবে এবং পাত্রী পাত্রকে চন্দনের (চন্দন মাথাকে ঠান্ডা রাখে) ফোঁটা পরাইবে।
১৬। এই সকল বিষয় সবই বসিয়া করিতে হইবে।
১৭। উপাসনা সমাপ্ত হইলে পাত্র ও পাত্রী অভিবাবক গণকে প্রণাম করিয়া আশির্বাদ লইতে হইবে।
১৮। পাত্র ও পাত্রীর হস্তাক্ষর এবং দু’জনারই অভিভাবকগণকে হস্তাক্ষর সম্বলিত সত্যধৰ্ম্ম দম্পতি প্রেম সাধনার অনুমতি পত্র প্রদান করা হইবে।
১৯। উৎসবের শেষে গুরুপূজায় পাত্র ও পাত্রীর উদ্দেশ্যে প্রার্থনা করা হইবে (তাদের দাম্পত্য জীবনশুখের জন্য)।
২/গ) বৈবাহিক অনুষ্ঠান ও সামাজিক রীতি :-
১। উৎসব হইতে প্রথমে পাত্রী পক্ষের বাসস্থানে যাইতে হইবেপাত্রকে।
২। পাত্রী ও পাত্রী উভয়ই গুরুপূজার মাধ্যমেই অনুষ্ঠিত হইবে।
৩। পাত্র ও পাত্রী উভয়ই পাত্রীর পিতা ও মাতাকে প্রণামকরিবে।
৪। পাত্রী পক্ষ হইতে একটী আশির্ব্বাদের নিমিত্য ভােজনানুষ্ঠান আয়জিত হইতে
পারে সাধ্যমত।
৫। এক দিন বাদেপাত্র পাত্রীকে লইয়া নিজ গৃহে যাইবে।
৬। পাত্র ও পাত্রী উভয়ই গৃহে প্রবেশ করিয়া গুরুদেবের উদ্দেশ্যে সষ্টাঙ্গে প্রণাম
করিবে।
৭। পাত্র ও পাত্রী উভয়ই পাত্রের পিতা ও মাতাকে প্রণাম করিবে।
৮। গুরুকে সংসারের স্বার করিতে হয়, এই পবিত্র তম আত্মােন্নতীর পথ প্রদর্শক পূজার মাধ্যমেই সংসার জীবন শুরুকরিতে হইবে।
৯। পাত্রের বাড়িতে আশির্বাদের নিমিত্য ভােজনানুষ্ঠান আয়জিত হইতে পারে, সাধ্যমত।
১০। পাত্র ও পাত্রী উভয়ই আশির্ব্বাদের নিমিত্য আমন্ত্রণ যানাইতে পারে সমস্থ মাধ্যমেই।
১১। পাত্র ও পাত্রী উভয়ের আমন্ত্রণ পত্রে এই লিখিবে যে কোনও উপহার না আনিয়া আমাদের দাম্পত্য জীবন সুখময়ের জন্য আপনাদের কাছে একান্ত ভাবে আশির্বাদ ভিক্ষা মাগী, নচেৎ উপহার গ্রহন হেতু নব দম্পত্য জীবন অমঙ্গলময় আসিয়া পরে।
১২। পাত্র ও পাত্রীর গৃহে আনুষ্ঠানিকভাবে সত্যধর্ম্মের সঙ্গীত ধ্বনিত হইবে।
১৩। পাত্র ও পাত্রী উভয় পক্ষ হইতে কেহই জৌতুক স্বরূপ কিছু গ্রহণ করা যাইবে।
১৪। পাত্র ও পাত্রী উভয় পক্ষ হইতে একমাত্র মাতা ও পিতা সইচ্ছায় আশিৰ্ব্বাদ | স্বরূপ কিছু দিলে গ্রহণ করিতে পারিবে।
ওঁং
সত্য-ধৰ্ম্ম।
সামাজিক অনুষ্ঠান পালন
৩/(ক) পূজা পাৰ্বণ :-
১। যদি মুক্তিলাভ করিতে ইচ্ছা কর, যদিভগবন্নামামৃত পানে সংসার-বিষজ্বালা হইতে বিমুক্ত হইতে অভিলাষ কর, যদি পরমেশ্বরের প্রেমসুধা পানে অভিলাষী হও এবং যদি মানব জীবনের সফলতা লাভ করিবার ও ব্রহ্মদর্শনজনিত পরমানন্দ প্রাপ্ত হইবার সঙ্কল্প করিয়া থাক, তবে জগদীশ্বরের প্রতি ভক্তি ও প্রেম কর এবং ঐ গুণদ্বয় ও অন্যান্য মহাগুণ লাভ করিবার জন্য এবং সাধনা মার্গে সূচারু রূপে পরিচালিত হইবার নিমিত্ত ব্রহ্মদর্শী মহাত্মাকে গুরুরূপে বরণ করিয়া জীবন সফলকর এবং অভীষ্টলাভে কৃতার্থ হও।
২। যিনি গুরুর প্রতি, মন্ত্রের প্রতি ও ঈশ্বরের প্রতি দৃঢ় ভক্তিসম্পন্ন এবং যিনি আস্তিক অর্থাৎ পরলােকের অস্তিত্বজ্ঞানবিশিষ্ট, তিনিই শিষ্য হইতে পারেন।
৩। ভক্ত শিষ্যের নিকটে গুরুর আদেশ পালনই পুণ্য এবং গুরুর আদেশ লঙ্ঘনই পাপ, ইহা ভিন্ন পাপ-পুণ্য নাই।
৪। একমাত্র অদ্বিতীয় মঙ্গলময় ভিন্ন এবং গুরুদেব ব্যতীত কাহারও পূজা করিবে না।
৫। গুরু স্বীকার না করিলে বহু দোষ সমুৎপন্ন ও প্রকৃত সাধনার ব্যাঘাত সংসাধিত হয়, অতএব গুরুকরণ ধর্ম্মের প্রধান অঙ্গ।
৬। গুরু পূজাই সত্যধর্ম্মীদের একমাত্র পালনীয়। ইহা ভিন্য অন্য কোনও পূজা করিতে পারিবে না।
৭। সুক্ষ্ম ভাবে কেবল মন্ত্র উচ্চারণ দ্বারাই প্রধান কর্তব্য।
৮। গুরুদেব রচিত উপাসনা খণ্ডে উপাসনা প্রনালী অনুরূপে পূজা পদ্ধতি হইবে কারণ গুরুধ্যানের প্রভাবে ঈশ্বর ধ্যানে সমর্থ হইতে হয়।
যেমন — গুরু পূজা
ঈশ্বর গুরু স্মরণম্, শ্রী গুরুনাথ স্মরণাম্।
গুরুপদ সেব স্মরণাম্, গুরুদেব নাথ স্মরণাম্।।
দিক্ষাবীজ জপ( দীক্ষা অপ্রাপ্তকগণ সাধারণ নাম জপ) : - (অন্ততঃ ২০বার)।
গুরুপূজার নিমিত্ত পরমপিতার নিকট শক্তি ভিক্ষা(সাধারণ কথায়)
১ম– শ্রীগুরু আহ্বাণ : -
২য়– গুরু শ্রেষ্ঠতাসূচক সঙ্গীত : -
৩য়– গুরু নির্ব্বেদজনক সঙ্গীত : -
৪র্থ– গুরুবিষায়ক মনের প্রতি ও গুরু জনেরপ্রতি সদভাবপূর্ণ সঙ্গীত : -
৫ম– গুরু গুণকীর্ত্তনের সহিত গুরুগীতা পাঠ :-
৬ষ্ঠ– ভক্তি হীনতা হেতু আত্মগ্লানী ভোগ : -
৭ম– পাপ হইতে মুক্তির জন্য প্রার্থনা : -
৮ম– গুণের জন্য প্রার্থনা : -
৯ম– গুরু ধ্যান : -
১০ম– গুরুকৃপাময় স্তব : -
১১শ– গুরু আনন্দময় স্তব : -
১২শ– গুরুদেবের ধন্যবাদ :-
গুরু প্রণাম:-
গুরু প্রসঙ্গ:-
দীক্ষাবীজ জপ (দীক্ষা অপ্রাপ্তকগণ সাধারণ নাম জপ ):- (অন্ততঃ ২০বার)।
জগদীশ্বরের ধন্যবাদ ও প্রণামঃ- সাধারণ কথায়।
৪। গুরুবরণের মাধ্যমে পূজা শুরু করিতে হইবে।
৫। প্রেম, ভক্তি ও একাগ্রতা দ্বারা গুরুপূজা করিতে হইবে।
৬। উৎসবে গুরুপূজার সময় একমাত্র গুরুদেবের ছবি ঈশ্বর মা আদরমণী ও সৰ্ব্বপ্রধান প্রবর্তক ঈশ্বর নিবারণের ছবি রাখিতে হইবে। ইহা ভিন্য অন্য কোনও ছবি রাখা যাইবেনা।
৭। সমদর্শন কালে একমাত্র গুরুদেবের ছবি রাখিয়া গুরুপূজা করিতে হইবে।অন্য কোনও ছবি রাখিয়া পূজা করা যাইবে না। কেননা সমদর্শন কথার অর্থ গুরুপূজন।
৮। স্নান করিয়াই গুরুপূজা করিতে হইবে।
৯। গুরুবরণের শেষে ষষ্টাঙ্গে প্রণামের মাধ্যমেই গুরুপূজা শুরুকরিতে হইবে।
১০। যাহারা সূক্ষ্মভাবে অপারক তাহারা স্থূলভাবে গুরুপূজা করিতেও পারে।
১১। সাধক সাধিকাগণকে ত্রিসন্ধা (সন্ধিক্ষণকে সন্ধা বলা হয়) গুরু পূজা করিতে হইবে।
১২। উপকরণে ক্ষীর, মাখা সন্দেশ প্রধান।
১৩। কোনও বিষয়ে সন্দেহ উপস্থিতি মাত্র গুরুপূজা করিয়া লইতে হইবে।
১৪। সংসারে ও পরলোকে যত সৃষ্ট আত্মা আছে গুরুকে সৰ্ব্বপরি রাখিতে হইবে।
১৫। সমদর্শন কালে সকালে ও বৈকালে দুইবার স্নান করিয়া গুরুপূজা করিতে হইবে।
১৬। কল্পিত দেবদেবীর ছবি অথবা মূর্তী বাড়িতে রাখা, পূজা অথবা প্রণাম প্রয্যন্ত করা যাইবে না। দেব-দেবীগণের নাম উল্লেখ পূর্বক প্রগাঢ় ভক্তি করিতে হইবে।
১৭। সাধনা কালে (সমদর্শন) সকাল ও সন্ধা স্নান করিয়া গুরুপূজা করিতে হইবে। সাধারণ ক্ষেত্রে একবার করিতেও পারে।
১৮। উৎসবে প্রতিদিন সকালে গুরুপূজা করিতে হইবে।
১৯। গুরুপূজায় গুরু প্রসঙ্গ অতি আবশ্যক।
২০। গুরুদেবের জন্ম তিথি উপলক্ষে উৎসব করিতে হইবে।
২১। কোনও মৃন্ময় বা প্রস্তরময় বিগ্রহকে প্রণাম করিবে না বলায়- “দেবদেবীর প্রতি ভক্তি করিবে না”-ইহা বুঝিও না। দেব-দেবীর প্রতি প্রগাঢ় ভক্তি করিবে।
২২। পাপসমূহ হইতে উপবৃত্ত (প্রতিনিবৃত্ত) হইয়া গুণসমূহের সহিত যে বাস,তাহাকে উপবাস বলিয়া জানিবে কিন্তু শরীর শোষণকে উপবাস বলিয়া জানিবে না। প্রয়োজন অনুসারে উপবাস করিবেন। কিন্ত উপবাস করিলেই যে ধৰ্ম্মহয়, কখনও এরূপচিন্তা করিবে না।
২৩। প্রতিমা প্রভৃতিতে দেবতার অধিষ্ঠান জানিতে না পারিলে কখনও প্রণাম করিবে না। আর যদি অধিষ্ঠান হইয়াছে বোধ কর, তবে সেই দেব বা দেবীর উদ্দেশ্যে প্রণাম করিতে পার।
২৪। গুরুর প্রতি পরমা ভক্তি করিবে।নতুবা জগদ্ গুরু জগদীশ্বরের প্রতি ভক্তি করা সুকঠিন হইবে।
২৫। গুরুসত্যঃ এ সংসারে বা পরলোকে যত সৃষ্ট আত্মা আছেন, গুরুকে তাহাদিগের অপেক্ষাও অধিক বোধ করিবে।
২৬। তোমার কাজ করিতে মনোনিবেশ কর। বাক্য সংযম কর। হৃদয় সবল ও সৰ্ব্বদা পবিত্র রাখ।তাহা হইলেই তোমাদিগের ভক্তিবলবতী হইবে।
২৭। সৰ্ব্বদা পবিত্র ভাবে থাকিবে। মৃত্তিকা ও জলাদি দ্বারা গাত্র, ধৰ্ম্ম দ্বারা মনঃ,বিদ্যা ও তপস্যা দ্বারা জীবাত্মা, এবং জ্ঞান দ্বারা বুদ্ধির শোধন করিবে।
২৮। কখন ও কাহারও নিন্দা করিও না। জগতে কেহই নিন্দনীয় নহে। পাপই নিন্দনীয়। পাপী নিন্দনীয় নহে। পুণ্যাত্মার নিন্দা করা যে ঘোরতর অপরাধ তাহা বলাই বাহুল্য।নিন্দাকারীদিগের সংসর্গও করিবেনা।
২৯। যিনি সৎপথ প্রদর্শন করিয়াছেন এবং যাহার কৃপায় যথাসময়ে সিদ্ধ হইতে পারিবে, তাহার প্রতি আত্মসমর্পন কর।
৩০। নিরন্তর জগদীশ্বরে ভক্তি এবং বিশ্বাস করাই জীবের প্রধান কর্তব্য এবং পরিণামে যাহাতে তাঁহাকে পাইতে পারা যায়, তদদুরূপ পথে এখন হইতেই চলা বিধেয়।
৩১। প্রত্যেক কার্য্যের আদিতে ও অন্তে ও মধ্যে মঙ্গলময়ের নাম করিবে।
৩২। গুরু পূজা যাহা বুঝ, তাহাই কর। তাহাতেই এখনকার কাজ হইবে। ভক্তি থাকিলে বাহ্যপূজার প্রয়োজন থাকে না। পূজার প্রধান উপকরণ ভক্তি, বিশ্বাস ও একাগ্রতা। তবে ধ্যানার্থে একবার গুরুর দর্শন আবশ্যক। যাহারা সে সুখে বঞ্চিত, তাহারা ছবি মূর্তি প্রভৃতি অবলম্বন করিতে পারে।
৩৩। পুণ্যাত্মার নিন্দা করা যে ঘোরতর অপরাধ তাহা বলাই বাহুল্য। নিন্দাকারী দিগের সংসর্গও করিবে না।
৩৬। গুরু যাহা যখন আদেশ করিবেন, তখনই তাহা করিবে। তাহাতে দোষগুণ বিচার করিও না। এ জগতে যাহাকে লোকে অতি পবিত্র কাৰ্য্যভাবে, গুরু যদি তাহাও নিষেধ করেন, তবে তাহাও করিবে না। আর লোকে যাহাকে ঘোর পাপ বলে, গুরু যদি তাহাও করিতে বলেন, তাহাও অম্লান বদনে প্রফুল্ল মুখে করিবে।
৩৭। রাতারাতি বড় মানুষ হইতে চেষ্টা করিলে অনেক সময় দারিদ্রের অন্তিম সীমায়ও যাইতে হয়।
৩৮। যখন যে কাজই সত্যধর্মলম্বীরা করে না কেন, সেই গুণকে কখনই ভুলিবে না।
৩৯। যখন যে বিষয় সন্দেহ উপস্থিত হইবে, ভক্তিভাবে গুরুদেবের পূজা ও ধ্যান করিয়া সে সন্দেহভঞ্জন করিয়া লইবে।
৪০। অপরের জন্য প্রার্থনায়, অপরের যেমন মঙ্গল হয়, নিজেরও তদ্রূপ ক্রমোন্নতি লাভ হয়।
৪২। আদিষ্ট সাধকের প্রতি বিশ্বাস কর ও তাহার শরণাপন্ন হও এবং তিনি যাহা বলেন, বর্ণে বর্ণে প্রতিপালন কর; দেখিবে কোনও যন্ত্রণা থাকিবেনা।
৪৩। প্রকৃত উপাসনা করিতে পারিলেই শরীররক্ষা হয় এবং শরীররক্ষা করিতে পারিলেও ইচ্ছা থাকিলেই উপাসনা হয়।
৪৫। ক্রোধ নিবারণে সৰ্ব্বদা সচেষ্ট থাকিবে। কাম ক্রোধাদি জাত গুণের উৎপত্তিমাত্রই স্বীয় বীজ ভক্তিভাবে স্মরণ বা উচ্চারণ করিবে। ভগবন্নামের প্রভাবে সৰ্ব্ব দোষেরই প্রশমনহয়।
৪৬। নিদ্রা যাইবার পূর্ব্বে নিদ্ৰামধ্যে বিষয় সকল নিরোধ করিবার জন্য, স্বীয়বীজ উচ্চারণ ও ভগবানেরনাম গ্রহণপূৰ্ব্বক গুরুদেবের নিকট প্রার্থনা করিবে।
৩/(খ) পূজার বিধি নিষেধ :-
১। গুরুদেবের ছবি ও মূৰ্ত্তী বিক্রীতকরা যাইবে না।
২। গুরুপূজার সময় যেন প্রণবের ছবি না থাকে কারণ প্রতিকী হইলেও পরমপিতার পূজা হয়না কিন্ত অর্চনা আছে।
৩। প্রতিটী বাড়ির গুরু আসনে যেন প্রণবের ছবি না থাকে। সকলের বাড়িতে প্রণবেরছবি ওয়ালে যেন অবশ্যই থাকে।
৪। গুরুদেবকে পরমপিতার আসনে বসানোর মহা মহা অপরাধ যেন না হয়। কেহ যদি অজ্ঞানতার কারণে করিয়া বসে তাহাকে বিষয়টী অবগত করাইতে হবে।
৪/ক) সৎকারঃ
১। মা ও বাবা ও অনান্য কাহারও মৃত্যু হইলে ঐ মূহুর্তে যদি সম্মুখে কেউ থাকে তিনি পরমপিতার উদ্দেশ্যে প্রার্থনা করিবে এই যে, হে দয়াময় পিতা তোমার অনন্ত করুণায় (নাম উল্লেখ করিয়া)কে ক্রমন্নতি প্রদান কর। ঐ মুহুর্তে মৃত ব্যক্তির মুখে জল প্রদান করিতে পারিলে ভালো হয়।
২। সবদেহ দুই প্রদ্ধতিতে পঞ্চভূতে বিলিন করিতে পারিবে। একটী পদ্ধতি | অগ্নীদাহ ও আর একটী দেহদান(চিকিৎসা বিশ্ববিদ্যালয়ে)।
৩।সবদেহে পরিস্কার জামা কাপর পরাইয়া দিতে হইবে। ঐ অবস্থাতেই দাহকাৰ্য্য সমাপ্ত করিতে হইবে।
৪। বাড়ির সকলে এবং যাহারা শ্মশানে অথবা চিকিৎসা বিশ্ববিদ্যালয়ে যাইবে তাহারা সকলেই সাদা পোশাক পড়িয়া যাইতে হইবে।
৫। শ্মশানে যদি কারেন্টের চুল্লি না থাকে তাহা হইলে সবদেহের নাক তুলা দিয়া বন্ধ করার ব্যবস্থা করিতে হইবে।
৬। সবদেহ যেই পদ্ধতিতেই নিয়া যাওয়া হোউক না কেন, সঙ্গে নিকটস্থ কেউ থাকা আবশ্যক।
৭।সবদেহ নিয়া যাওয়ার সময় “তুমি সত্য সনাতন সৰ্ব্ব প্রতি, তুমি নাথ দয়াময় দিন গতি” এই গানটী গাইতে গাইতে শ্মশানের উদ্দেশ্যে নিয়া যাইতে হইবে।
৮। সবদেহ চুল্লিতে প্রবেশ করাইবার পূৰ্বে দেহ পর্শ করিয়া বীজমন্ত্র জপ (১০৮বার) করিয়া নমস্কার করিতেহইবে।
৯। দেহদানের ক্ষেত্রেও দেহ পৰ্শ করিয়া বীজমন্ত্র জপ (১০৮বার) করিয়া নমস্কার করিতে হইবে।
১০। দেহ দান করিতে হইলে যত শীঘ্র সম্ভব নিয়া যাইতে হয় চিকিৎসা বিশ্ববিদ্যালয়ে, তাহা হইলে দেহের কিছু অঙ্গ লইয়া বিকলঙ্গ মানুষকে প্রতিস্থাপন সম্ভবহয়।
১১। দেহ দানের বিষয় পারিবারিক সচেনতা বৃদ্ধির প্রয়োজন। মৃত্যুর আগে দানের বিষয় জানাইতে পারিলে ভালো হয়।
১২। দেহ দানের বিষয় পারিবারিক সম্মতির প্রয়োজন, বিশেষ করিয়া মৃত ব্যক্তির নিকটস্থ যে কেউ সম্মতি জানাইলেও চলিবে।
১৩। দেহ দান করিতে যাইবার সময় যে সঙ্গীতটী গাওয়া হইবে যখন চিকিৎসা| বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাঙ্গনে পৌছাইবে তখনই সঙ্গীত অতি ধিরে ধিরে করিতে হইবে।
১৪। শ্মশানে দাহ যতক্ষণ হইবে তৎক্ষণ সকলকে থাকিতে হইবে।
১৫। শ্মশান যাত্রী সকলে লাইনদিয়ে পরপর একত্রিত হইয়া দারাইয়া অথবা বসিয়া “তুমি সত্য সনাতন সৰ্ব্ব প্রতি, তুমিনাথ দয়াময় দিন গতি” এই গানটী গাইতে হবে যতক্ষণ না দাহ সমাপ্ত হচ্ছে ততক্ষণ করিতে হইবে। সমাপ্ত হইলে পরমপিতার উদ্দেশ্যে ধন্যবাদ ও প্রণাম এবং গুরুদেবের ধন্যবাদ ও প্রণাম দিয়া বীজ জপ ২০ বার করিতে হইবে।
১৬। দেহদানের ক্ষেত্রেও বিশেষ কোনও যায়গায় একত্রিত হইয়া দারাইয়া অথবা বসিয়া “তুমি সত্যসনাতন সৰ্ব্ব প্রতি, তুমি নাথ দয়াময় দিন গতি” এই গানটী গাইতে হবে যতক্ষণ না হস্তান্তর প্রকৃয়া সমাপ্ত হইতেছে। সমাপ্ত হইলে পরমপিতার উদ্দেশ্যে ধন্যবাদ ও প্রণাম এবং গুরুদেবের ধন্যবাদ ও প্রণাম দিয়া বীজ জপ ২০ বার করিতে হইবে। এই অঞ্চলে উপাসনা করিতে হইবে খুবই ধিরেধিরে।
১৭। শ্মশানে অথবা চিকিৎসা বিশ্ববিদ্যালয়ে যাহারা যাইবে, তাহাদের সকলের নাম ধারণ পূৰ্ব্বক উপাসনায় প্রার্থনা করিতে হইবে।
১৮। কাষ্ঠে দাহকরাইলে, কাষ্ঠ সাজাইয়া তাহার উপর দেহ রাখিয়া দেহ স্পর্শ করিয়া| ১০৮ বার বীজমন্ত্র জপ করিয়া নমস্কার করিতে হইবে।
১৯। মৃত ব্যক্তির ছেলে ও মেয়ে যতজন থাকিবে সকলকেই দেহে স্পর্শ করিয়া ১০৮ বার বীজ মন্ত্র জপ করিয়া নমস্কার করিতে হইবে। যদি সন্তান না থাকে তাহার স্বামী, স্ত্রী অথবা নিকট আত্মিয় হইতে পারে। একান্ত যদি কেহই না থাকে তাহা হইলে সৎসতীর মধ্যে যেকোনও একজন এই কাজ করিতে পারিবে।
২০। কাঠে দাহ করাইলে একটু দুরে সরিয়া যাইতে হইবে যাহাতে ঐ ধুয়া কাহারও নাক ও মুখে প্রবেশ না করে।
২১। দাহ সমাপ্তি হইলে পরিশুদ্ধ জলে ভালো করিয়া সকলকে স্নান করিয়া লইতে হইবে। বাড়িতে আসিয়াও করিতে পারে।
২২। স্নান করিয়া ১০৮ বার বীজ মন্ত্র জপ করিয়া ওনার উদ্দেশ্যে দুই হাতে জল লইয়া (নিকটস্তসকলকে)
তর্পণ করিতে হইবে।
২৩। যাহারা শ্মশানে যাইবে তাহাদের সকলকে ধন্যবাদ সূচকবাক্য বলিতে হইবে।
২৪। সন্তান যাহারা থাকিবে সকলেই দাহ সমাপ্তি হইলে পরিশুদ্ধ জলে ভালো করিয়া স্নান করিয়া সাদা পাঞ্জাবি ও পায়জামা পরিবে।
২৫। মহিলারা ও বাচ্চারাও সাদা পোশাক পরিধান করিবে। সাদা পোশাকে মন পবিত্রতা বজায় থাকে বলিয়াই এই নিয়ম।
২৬। দাহ করিয়া বাড়িতে আসিয়া তরল পদার্থ (ফলের রস) পান করিয়া উপাসনায় বসিতে হইবে।
২৭। মৃত সৎ ও সতীর মৃত্যু নথিভূক্তকরণ করিতে হইবে সত্যধর্মে এবং প্রমাণ পত্র সংগ্রহ করিতে হইবে।
২৮। মৃত ব্যক্তির স্ত্রীর ক্ষেত্রেঃ- প্রকৃত ভালোবাসা হইলে, তার প্রেমের চিহু স্বরূপ যে যে পরিধান পরিতেন, তাহা সবই রাখিতে পারিবেন। তাহার বিপরিত কিছু করিতে হইলে গুরুর স্মরণাপন্ন হইতে হইবে। তিনি যাহা বলিবেন সেই মত অনুসারে কাৰ্য্য করিতে হইবে। পরলোক হইতে ঐ আত্মা যখন দেখিবে যে তার স্ত্রী প্রেমের জন্য তার দেয়া সমস্ত পরিধান ত্যাগ করেননি তখন তৃপ্ত বোধ কি করিবেন না ? নিশ্চই করিবেন, ইহাই প্রেমে কৃতজ্ঞতা বোধের অংশ। কেননা আত্মা অমর তাহার মৃত্যু হয না, শরীরের মৃত্যু হয়। যাকে এত দিন ভালোবাসিলাম, সে আমার এজীবনের প্রেমের সঙ্গী, তাহার প্রেমের চিহু স্বরূপ যতদিন এজীবন রহিবে ততদিন রাখিবার অধিকার আছে। ইহা তাহার ইচ্ছার অধিন। যে গুণ থাকিলে ঐ গুণের ভাজনকে পাইলে প্রাণশীতল হয়, আত্মা তৃপ্তিলাভ করে, মন অভিনব আনন্দ রসময় ভাবের উদয় হয়, হৃদয় নব ভাবে কার্য্যে প্রবৃত্ত হয়, ও পরমাত্মার প্রকৃত কাৰ্য্য করা হয়; আর না পাইলে প্রাণ কিছুতেই শীতলহয় না হৃদয় নীরস হয়, মন ভাবশূন্য প্রায় হইয়া পড়ে, জীবাত্মার ক্লেশের ইয়ত্তা থাকে না, এবং পরমাত্মার উৎকর্স ও শান্তি হয় না। মূল কথা যে গুণে ঐ পরম গুণের ভাজনের দোষ গুণে আসিয়া পড়ে, দোষ দেখিতে বাসনা হয় না, কেবল গুণই লক্ষ্য হয়, কথা শুনিলে প্রাণ জুড়ায়, না শুনিলে জগৎ অন্ধকারময় বোধ হয়, অভাবে জীবত থাকিতে হয়, ভাবে সকল অশান্তি দূরে যায়, ফলতঃ ঐ গুণের প্রকৃত ভাজনের চিহ্নমাত্র না পাইলে কিছুতেই জীবিত থাকা যায় না, তাহাকে প্রেম কহে। যে সৃষ্ট আত্মার দর্শন আমার নিকট সত্তই চারু ও মনোহর, যাহাকে নিয়তে দেখিলেও দৃষ্টিতৃপ্তি বোধকরেনা, যাহার কথা চিরমধুময়, অমৃতময় ও কর্ণকুহরে প্রবেশ করিবা মাত্রেই হৃদয় নাচিতে থাকে, বদনে যাহার গুণব্যখ্যা করিয়া শেষ করিতে পারা যায় না, হৃদয় যাহাকে হৃদয়স্থ করিয়াও সুখের অন্তিম সীমা লাভ করিতে পারে না, যাহার দোষরাশি কখনই ইন্দ্রিয়গোচর হয়, দোষ বলিয়া প্রতীয়মান হয় না, অপরের মুখে নিন্দা বা কুৎসা শুনিলে হৃদয়ে বিরক্তির উদয় হয়, যাহার সুখে সুখী ও দুঃখে দুখী হওয়া যায়, যে পীড়িত হইলে পীড়িত ও প্রফুল্ল হইলে আমাদিতে হই, যাহার অদর্শনে সমস্ত শূন্য দেখি, সুখ শান্তি বিহীন হই, আমাতে আর আমি থাকি না, কি হইয়াছে, কিসের অভাব হইয়াছে, অনুভব করিতে পারি না, প্রত্যুত কেবল জীবন্মৃত হইয়া থাকি, যাহার মঙ্গল ভিন্ন অমঙ্গল কামনা হৃদয় কখনই স্থান পায় না, যাহার সামান্য তাচ্ছল্যভাব বা অনাদরে মরমে মরিয়া যাই, যাহাকে নিঃস্বার্থভাবে আমার বলিয়া অঙ্গীকার করি, জীবনসৰ্ব্বস্ব সমৰ্পণ করিয়াও যাহার কিঞ্চিৎ সাহায্য করিতে পারিলে হৃদয় কৃতার্থ বোধ করে, যাহাকে নিজের অনন্ত দুঃখরাশির কণামাত্র জানাইয়া ও দুঃখিতকরিতে বাসনা হয়না।
৪/খ) শ্রাদ্ধঃ
১। পরলোকগত পিতৃলোকদিগের উদ্ধারের নিমিত্ত শ্রদ্ধাপূৰ্ব্বক যে কৰ্ম্ম সম্পাদিত হয়, তাহাকে শ্রাদ্ধ কহে। অতএব শ্রাদ্ধকার্য্যে শ্রদ্ধাই প্রধান উপকরণ। শ্রদ্ধা শব্দে সভত্তিক বিশ্বাস বুঝায়। সুতরাং ভক্তি ও বিশ্বাস ব্যতিরেকে শ্রাদ্ধকৰ্ম্ম সম্পন্ন হইতে পারে না। বিশ্বাসী ভক্তি পূৰ্ব্বক পিতৃলোকদিগের উদ্ধার কামনা ও জগদীশ্বরের নিকটে প্রার্থনা করিলেও শ্রাদ্ধকাৰ্য্য সুসম্পন্নহইতে পারে।
২। কতিপয় সৎলোক একসঙ্গে উপস্থিত হইয়া বিশ্বাসী ভক্তি পূৰ্ব্বক পিতৃলোকদিগের উদ্ধারকামনা ও জগদীশ্বরের নিকটে প্রার্থনা করিলেই প্রকৃত শ্রাদ্ধকাৰ্য্য সম্পন্ন হইবে।
৩। গৃহীলোক মাত্রেই প্রায় আড়ম্বরপ্রিয়, এজন্য স্বীয় মনস্তুষ্টির জন্য ঐ দিবসে কতিপয় ব্রহ্মজ্ঞ ও শাস্ত্রজ্ঞ ব্যক্তিকে নিমন্ত্রণপূৰ্ব্বক সযত্নে ভোজন করান।
৪। অতিথি ও দীনদরিদ্রদিগকে কিঞ্চিৎ কিঞ্চিৎ দান করা কর্ত্তব্য।
৫। শ্রাদ্ধ কাৰ্য্যে নিমন্ত্রণ বার্তা সমস্ত মাধ্যমেই হইতে পারে। বার্তায় লিখিতে হইবে এই যে আমার মাত্রীদেবী অথবা পৃত্রীদেব ও অনান্য পরলোক প্রাপ্তি।
৬। মৃত্যু হইবার পর পনেরদিন অথবা একমাসে প্রতিদিন পরলোকগত দিগের উদ্দেশ্যে উপাসনা করিতে হইবে।
৭। শ্রদ্ধকার্য্যে উপাসনায় পরলোকগত দিগের উদ্ধারের নিমিত্ত ক্রমোন্নতি গুণের অধিবেশণই প্রধান হইবে।
৮। উপাসনার নিয়মঃ-
দীক্ষাবীজ জপ (দীক্ষা অপ্রাপ্তকগণ সাধারণ নাম জপ)অন্তত ২০ বার।
গুরু আহ্বাণ
দীক্ষাবীজ জপ (দীক্ষা অপ্রাপ্তকগণ সাধারণ নাম জপ) = অন্তত ২০ বার।
১ম- সত্যধর্মের শ্রেষ্ঠতাসূচক সঙ্গীত।
২য়- নিৰ্বেদ-জনক সঙ্গীত।
৩য়- মনের প্রতি ও জনের প্রতি সদ্ভাবপূর্ণ সঙ্গীত।
দীক্ষাবীজ জপ (দীক্ষা অপ্রাপ্তকগণ সাধারণ নাম জপ) = অন্তত ৩ বার।
৪র্থ- গুণকীৰ্ত্তন।
৫ম- স্বীয় পাপ উল্লেখ ও তজ্জন্য আত্মগ্লানি ভোগ।
৬ষ্ঠ- পাপ হইতে মুক্তির জন্য প্রার্থনা।
৭ম- গুণের জন্য প্রার্থনা সাধারণ কথায় প্রার্থনা পরলোকগত নিমিত্ত প্রার্থন সঙ্গীত
৮ম- ধ্যান।
দীক্ষাবীজ জপ (দীক্ষা অপ্রাপ্তকগণ সাধারণ নাম জপ) = অন্তত ২০ বার।
১০ম- জগদীশ্বরের কৃপাময় স্তব
১১শ- জগদীশ্বরের আনন্দময় স্তব
১২শ- জগদীশ্বরের ধন্যবাদ
দীক্ষাবীজ জপ (দীক্ষা অপ্রাপ্তকগণ সাধারণ নাম জপ) = অন্তত ২০ বার।
ঈশ-প্রণাম।
দীক্ষাবীজ জপ (দীক্ষা অপ্রাপ্তকগণসাধারণ নামজপ) =অন্তত ২০ বার।
শাস্ত্রপাঠ
দীক্ষাবীজ জপ (দীক্ষা অপ্রাপ্তকগণসাধারণ নামজপ) = অন্তত৩বার।
গুরুদেবের ধন্যবাদ
গুরুপ্রণাম।
দীক্ষাবীজ জপ(দীক্ষা অপ্রাপ্তকগণসাধারণ নামজপ) =অন্তত ২০ বার।
প্রতিদিনের নিয়মে করিবে এবং অনান্য অধিবেশণও করিবে।
৯। গুরুপূজার নিয়মঃ
দীক্ষাবীজ জপ (দীক্ষা অপ্রাপ্তকগণসাধারণ নামজপ) =অন্তত ২০ বার।
গুরুপূজার নিমিত্ত পরমপিতার নিকট শক্তি ভিক্ষা (সাধারণকথায়)
১ম- শ্রী গুরুআহ্বাণ।
৩য়– গুরু নির্ব্বেদজনক সঙ্গীত : -
৪র্থ– গুরুবিষায়ক মনের প্রতি ও গুরু জনেরপ্রতি সদভাবপূর্ণ সঙ্গীত : -
৫ম– গুরু গুণকীর্ত্তনের সহিত গুরুগীতা পাঠ :-
৬ষ্ঠ– ভক্তি হীনতা হেতু আত্মগ্লানী ভোগ : -
৭ম– পাপ হইতে মুক্তির জন্য প্রার্থনা : -
৮ম– গুণের জন্য প্রার্থনা : -
৯ম– গুরু ধ্যান : -
১০ম– গুরুকৃপাময় স্তব : -
১১শ– গুরু আনন্দময় স্তব : -
১২শ– গুরুদেবের ধন্যবাদ :-
গুরু প্রণাম:-
গুরু প্রসঙ্গ:-
দীক্ষাবীজ জপ (দীক্ষা অপ্রাপ্তকগণ সাধারণ নাম জপ ):- (অন্ততঃ ২০বার)।
জগদীশ্বরের ধন্যবাদ ও প্রণামঃ- সাধারণ কথায়।
৪। গুরুবরণের মাধ্যমে পূজা শুরু করিতে হইবে।
৫। প্রেম, ভক্তি ও একাগ্রতা দ্বারা গুরুপূজা করিতে হইবে।
৬। উৎসবে গুরুপূজার সময় একমাত্র গুরুদেবের ছবি ঈশ্বর মা আদরমণী ও সৰ্ব্বপ্রধান প্রবর্তক ঈশ্বর নিবারণের ছবি রাখিতে হইবে। ইহা ভিন্য অন্য কোনও ছবি রাখা যাইবেনা।
৭। সমদর্শন কালে একমাত্র গুরুদেবের ছবি রাখিয়া গুরুপূজা করিতে হইবে।অন্য কোনও ছবি রাখিয়া পূজা করা যাইবে না। কেননা সমদর্শন কথার অর্থ গুরুপূজন।
৮। স্নান করিয়াই গুরুপূজা করিতে হইবে।
৯। গুরুবরণের শেষে ষষ্টাঙ্গে প্রণামের মাধ্যমেই গুরুপূজা শুরুকরিতে হইবে।
১০। যাহারা সূক্ষ্মভাবে অপারক তাহারা স্থূলভাবে গুরুপূজা করিতেও পারে।
১১। সাধক সাধিকাগণকে ত্রিসন্ধা (সন্ধিক্ষণকে সন্ধা বলা হয়) গুরু পূজা করিতে হইবে।
১২। উপকরণে ক্ষীর, মাখা সন্দেশ প্রধান।
১৩। কোনও বিষয়ে সন্দেহ উপস্থিতি মাত্র গুরুপূজা করিয়া লইতে হইবে।
১৪। সংসারে ও পরলোকে যত সৃষ্ট আত্মা আছে গুরুকে সৰ্ব্বপরি রাখিতে হইবে।
১৫। সমদর্শন কালে সকালে ও বৈকালে দুইবার স্নান করিয়া গুরুপূজা করিতে হইবে।
১৬। কল্পিত দেবদেবীর ছবি অথবা মূর্তী বাড়িতে রাখা, পূজা অথবা প্রণাম প্রয্যন্ত করা যাইবে না। দেব-দেবীগণের নাম উল্লেখ পূর্বক প্রগাঢ় ভক্তি করিতে হইবে।
১৭। সাধনা কালে (সমদর্শন) সকাল ও সন্ধা স্নান করিয়া গুরুপূজা করিতে হইবে। সাধারণ ক্ষেত্রে একবার করিতেও পারে।
১৮। উৎসবে প্রতিদিন সকালে গুরুপূজা করিতে হইবে।
১৯। গুরুপূজায় গুরু প্রসঙ্গ অতি আবশ্যক।
২০। গুরুদেবের জন্ম তিথি উপলক্ষে উৎসব করিতে হইবে।
২১। কোনও মৃন্ময় বা প্রস্তরময় বিগ্রহকে প্রণাম করিবে না বলায়- “দেবদেবীর প্রতি ভক্তি করিবে না”-ইহা বুঝিও না। দেব-দেবীর প্রতি প্রগাঢ় ভক্তি করিবে।
২২। পাপসমূহ হইতে উপবৃত্ত (প্রতিনিবৃত্ত) হইয়া গুণসমূহের সহিত যে বাস,তাহাকে উপবাস বলিয়া জানিবে কিন্তু শরীর শোষণকে উপবাস বলিয়া জানিবে না। প্রয়োজন অনুসারে উপবাস করিবেন। কিন্ত উপবাস করিলেই যে ধৰ্ম্মহয়, কখনও এরূপচিন্তা করিবে না।
২৩। প্রতিমা প্রভৃতিতে দেবতার অধিষ্ঠান জানিতে না পারিলে কখনও প্রণাম করিবে না। আর যদি অধিষ্ঠান হইয়াছে বোধ কর, তবে সেই দেব বা দেবীর উদ্দেশ্যে প্রণাম করিতে পার।
২৪। গুরুর প্রতি পরমা ভক্তি করিবে।নতুবা জগদ্ গুরু জগদীশ্বরের প্রতি ভক্তি করা সুকঠিন হইবে।
২৫। গুরুসত্যঃ এ সংসারে বা পরলোকে যত সৃষ্ট আত্মা আছেন, গুরুকে তাহাদিগের অপেক্ষাও অধিক বোধ করিবে।
২৬। তোমার কাজ করিতে মনোনিবেশ কর। বাক্য সংযম কর। হৃদয় সবল ও সৰ্ব্বদা পবিত্র রাখ।তাহা হইলেই তোমাদিগের ভক্তিবলবতী হইবে।
২৭। সৰ্ব্বদা পবিত্র ভাবে থাকিবে। মৃত্তিকা ও জলাদি দ্বারা গাত্র, ধৰ্ম্ম দ্বারা মনঃ,বিদ্যা ও তপস্যা দ্বারা জীবাত্মা, এবং জ্ঞান দ্বারা বুদ্ধির শোধন করিবে।
২৮। কখন ও কাহারও নিন্দা করিও না। জগতে কেহই নিন্দনীয় নহে। পাপই নিন্দনীয়। পাপী নিন্দনীয় নহে। পুণ্যাত্মার নিন্দা করা যে ঘোরতর অপরাধ তাহা বলাই বাহুল্য।নিন্দাকারীদিগের সংসর্গও করিবেনা।
২৯। যিনি সৎপথ প্রদর্শন করিয়াছেন এবং যাহার কৃপায় যথাসময়ে সিদ্ধ হইতে পারিবে, তাহার প্রতি আত্মসমর্পন কর।
৩০। নিরন্তর জগদীশ্বরে ভক্তি এবং বিশ্বাস করাই জীবের প্রধান কর্তব্য এবং পরিণামে যাহাতে তাঁহাকে পাইতে পারা যায়, তদদুরূপ পথে এখন হইতেই চলা বিধেয়।
৩১। প্রত্যেক কার্য্যের আদিতে ও অন্তে ও মধ্যে মঙ্গলময়ের নাম করিবে।
৩২। গুরু পূজা যাহা বুঝ, তাহাই কর। তাহাতেই এখনকার কাজ হইবে। ভক্তি থাকিলে বাহ্যপূজার প্রয়োজন থাকে না। পূজার প্রধান উপকরণ ভক্তি, বিশ্বাস ও একাগ্রতা। তবে ধ্যানার্থে একবার গুরুর দর্শন আবশ্যক। যাহারা সে সুখে বঞ্চিত, তাহারা ছবি মূর্তি প্রভৃতি অবলম্বন করিতে পারে।
৩৩। পুণ্যাত্মার নিন্দা করা যে ঘোরতর অপরাধ তাহা বলাই বাহুল্য। নিন্দাকারী দিগের সংসর্গও করিবে না।
৩৬। গুরু যাহা যখন আদেশ করিবেন, তখনই তাহা করিবে। তাহাতে দোষগুণ বিচার করিও না। এ জগতে যাহাকে লোকে অতি পবিত্র কাৰ্য্যভাবে, গুরু যদি তাহাও নিষেধ করেন, তবে তাহাও করিবে না। আর লোকে যাহাকে ঘোর পাপ বলে, গুরু যদি তাহাও করিতে বলেন, তাহাও অম্লান বদনে প্রফুল্ল মুখে করিবে।
৩৭। রাতারাতি বড় মানুষ হইতে চেষ্টা করিলে অনেক সময় দারিদ্রের অন্তিম সীমায়ও যাইতে হয়।
৩৮। যখন যে কাজই সত্যধর্মলম্বীরা করে না কেন, সেই গুণকে কখনই ভুলিবে না।
৩৯। যখন যে বিষয় সন্দেহ উপস্থিত হইবে, ভক্তিভাবে গুরুদেবের পূজা ও ধ্যান করিয়া সে সন্দেহভঞ্জন করিয়া লইবে।
৪০। অপরের জন্য প্রার্থনায়, অপরের যেমন মঙ্গল হয়, নিজেরও তদ্রূপ ক্রমোন্নতি লাভ হয়।
৪২। আদিষ্ট সাধকের প্রতি বিশ্বাস কর ও তাহার শরণাপন্ন হও এবং তিনি যাহা বলেন, বর্ণে বর্ণে প্রতিপালন কর; দেখিবে কোনও যন্ত্রণা থাকিবেনা।
৪৩। প্রকৃত উপাসনা করিতে পারিলেই শরীররক্ষা হয় এবং শরীররক্ষা করিতে পারিলেও ইচ্ছা থাকিলেই উপাসনা হয়।
৪৫। ক্রোধ নিবারণে সৰ্ব্বদা সচেষ্ট থাকিবে। কাম ক্রোধাদি জাত গুণের উৎপত্তিমাত্রই স্বীয় বীজ ভক্তিভাবে স্মরণ বা উচ্চারণ করিবে। ভগবন্নামের প্রভাবে সৰ্ব্ব দোষেরই প্রশমনহয়।
৪৬। নিদ্রা যাইবার পূর্ব্বে নিদ্ৰামধ্যে বিষয় সকল নিরোধ করিবার জন্য, স্বীয়বীজ উচ্চারণ ও ভগবানেরনাম গ্রহণপূৰ্ব্বক গুরুদেবের নিকট প্রার্থনা করিবে।
৩/(খ) পূজার বিধি নিষেধ :-
১। গুরুদেবের ছবি ও মূৰ্ত্তী বিক্রীতকরা যাইবে না।
২। গুরুপূজার সময় যেন প্রণবের ছবি না থাকে কারণ প্রতিকী হইলেও পরমপিতার পূজা হয়না কিন্ত অর্চনা আছে।
৩। প্রতিটী বাড়ির গুরু আসনে যেন প্রণবের ছবি না থাকে। সকলের বাড়িতে প্রণবেরছবি ওয়ালে যেন অবশ্যই থাকে।
৪। গুরুদেবকে পরমপিতার আসনে বসানোর মহা মহা অপরাধ যেন না হয়। কেহ যদি অজ্ঞানতার কারণে করিয়া বসে তাহাকে বিষয়টী অবগত করাইতে হবে।
ওঁং
সত্য-ধৰ্ম্ম
পরলোকগত
৪/ক) সৎকারঃ
১। মা ও বাবা ও অনান্য কাহারও মৃত্যু হইলে ঐ মূহুর্তে যদি সম্মুখে কেউ থাকে তিনি পরমপিতার উদ্দেশ্যে প্রার্থনা করিবে এই যে, হে দয়াময় পিতা তোমার অনন্ত করুণায় (নাম উল্লেখ করিয়া)কে ক্রমন্নতি প্রদান কর। ঐ মুহুর্তে মৃত ব্যক্তির মুখে জল প্রদান করিতে পারিলে ভালো হয়।
২। সবদেহ দুই প্রদ্ধতিতে পঞ্চভূতে বিলিন করিতে পারিবে। একটী পদ্ধতি | অগ্নীদাহ ও আর একটী দেহদান(চিকিৎসা বিশ্ববিদ্যালয়ে)।
৩।সবদেহে পরিস্কার জামা কাপর পরাইয়া দিতে হইবে। ঐ অবস্থাতেই দাহকাৰ্য্য সমাপ্ত করিতে হইবে।
৪। বাড়ির সকলে এবং যাহারা শ্মশানে অথবা চিকিৎসা বিশ্ববিদ্যালয়ে যাইবে তাহারা সকলেই সাদা পোশাক পড়িয়া যাইতে হইবে।
৫। শ্মশানে যদি কারেন্টের চুল্লি না থাকে তাহা হইলে সবদেহের নাক তুলা দিয়া বন্ধ করার ব্যবস্থা করিতে হইবে।
৬। সবদেহ যেই পদ্ধতিতেই নিয়া যাওয়া হোউক না কেন, সঙ্গে নিকটস্থ কেউ থাকা আবশ্যক।
৭।সবদেহ নিয়া যাওয়ার সময় “তুমি সত্য সনাতন সৰ্ব্ব প্রতি, তুমি নাথ দয়াময় দিন গতি” এই গানটী গাইতে গাইতে শ্মশানের উদ্দেশ্যে নিয়া যাইতে হইবে।
৮। সবদেহ চুল্লিতে প্রবেশ করাইবার পূৰ্বে দেহ পর্শ করিয়া বীজমন্ত্র জপ (১০৮বার) করিয়া নমস্কার করিতেহইবে।
৯। দেহদানের ক্ষেত্রেও দেহ পৰ্শ করিয়া বীজমন্ত্র জপ (১০৮বার) করিয়া নমস্কার করিতে হইবে।
১০। দেহ দান করিতে হইলে যত শীঘ্র সম্ভব নিয়া যাইতে হয় চিকিৎসা বিশ্ববিদ্যালয়ে, তাহা হইলে দেহের কিছু অঙ্গ লইয়া বিকলঙ্গ মানুষকে প্রতিস্থাপন সম্ভবহয়।
১১। দেহ দানের বিষয় পারিবারিক সচেনতা বৃদ্ধির প্রয়োজন। মৃত্যুর আগে দানের বিষয় জানাইতে পারিলে ভালো হয়।
১২। দেহ দানের বিষয় পারিবারিক সম্মতির প্রয়োজন, বিশেষ করিয়া মৃত ব্যক্তির নিকটস্থ যে কেউ সম্মতি জানাইলেও চলিবে।
১৩। দেহ দান করিতে যাইবার সময় যে সঙ্গীতটী গাওয়া হইবে যখন চিকিৎসা| বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাঙ্গনে পৌছাইবে তখনই সঙ্গীত অতি ধিরে ধিরে করিতে হইবে।
১৪। শ্মশানে দাহ যতক্ষণ হইবে তৎক্ষণ সকলকে থাকিতে হইবে।
১৫। শ্মশান যাত্রী সকলে লাইনদিয়ে পরপর একত্রিত হইয়া দারাইয়া অথবা বসিয়া “তুমি সত্য সনাতন সৰ্ব্ব প্রতি, তুমিনাথ দয়াময় দিন গতি” এই গানটী গাইতে হবে যতক্ষণ না দাহ সমাপ্ত হচ্ছে ততক্ষণ করিতে হইবে। সমাপ্ত হইলে পরমপিতার উদ্দেশ্যে ধন্যবাদ ও প্রণাম এবং গুরুদেবের ধন্যবাদ ও প্রণাম দিয়া বীজ জপ ২০ বার করিতে হইবে।
১৬। দেহদানের ক্ষেত্রেও বিশেষ কোনও যায়গায় একত্রিত হইয়া দারাইয়া অথবা বসিয়া “তুমি সত্যসনাতন সৰ্ব্ব প্রতি, তুমি নাথ দয়াময় দিন গতি” এই গানটী গাইতে হবে যতক্ষণ না হস্তান্তর প্রকৃয়া সমাপ্ত হইতেছে। সমাপ্ত হইলে পরমপিতার উদ্দেশ্যে ধন্যবাদ ও প্রণাম এবং গুরুদেবের ধন্যবাদ ও প্রণাম দিয়া বীজ জপ ২০ বার করিতে হইবে। এই অঞ্চলে উপাসনা করিতে হইবে খুবই ধিরেধিরে।
১৭। শ্মশানে অথবা চিকিৎসা বিশ্ববিদ্যালয়ে যাহারা যাইবে, তাহাদের সকলের নাম ধারণ পূৰ্ব্বক উপাসনায় প্রার্থনা করিতে হইবে।
১৮। কাষ্ঠে দাহকরাইলে, কাষ্ঠ সাজাইয়া তাহার উপর দেহ রাখিয়া দেহ স্পর্শ করিয়া| ১০৮ বার বীজমন্ত্র জপ করিয়া নমস্কার করিতে হইবে।
১৯। মৃত ব্যক্তির ছেলে ও মেয়ে যতজন থাকিবে সকলকেই দেহে স্পর্শ করিয়া ১০৮ বার বীজ মন্ত্র জপ করিয়া নমস্কার করিতে হইবে। যদি সন্তান না থাকে তাহার স্বামী, স্ত্রী অথবা নিকট আত্মিয় হইতে পারে। একান্ত যদি কেহই না থাকে তাহা হইলে সৎসতীর মধ্যে যেকোনও একজন এই কাজ করিতে পারিবে।
২০। কাঠে দাহ করাইলে একটু দুরে সরিয়া যাইতে হইবে যাহাতে ঐ ধুয়া কাহারও নাক ও মুখে প্রবেশ না করে।
২১। দাহ সমাপ্তি হইলে পরিশুদ্ধ জলে ভালো করিয়া সকলকে স্নান করিয়া লইতে হইবে। বাড়িতে আসিয়াও করিতে পারে।
২২। স্নান করিয়া ১০৮ বার বীজ মন্ত্র জপ করিয়া ওনার উদ্দেশ্যে দুই হাতে জল লইয়া (নিকটস্তসকলকে)
তর্পণ করিতে হইবে।
২৩। যাহারা শ্মশানে যাইবে তাহাদের সকলকে ধন্যবাদ সূচকবাক্য বলিতে হইবে।
২৪। সন্তান যাহারা থাকিবে সকলেই দাহ সমাপ্তি হইলে পরিশুদ্ধ জলে ভালো করিয়া স্নান করিয়া সাদা পাঞ্জাবি ও পায়জামা পরিবে।
২৫। মহিলারা ও বাচ্চারাও সাদা পোশাক পরিধান করিবে। সাদা পোশাকে মন পবিত্রতা বজায় থাকে বলিয়াই এই নিয়ম।
২৬। দাহ করিয়া বাড়িতে আসিয়া তরল পদার্থ (ফলের রস) পান করিয়া উপাসনায় বসিতে হইবে।
২৭। মৃত সৎ ও সতীর মৃত্যু নথিভূক্তকরণ করিতে হইবে সত্যধর্মে এবং প্রমাণ পত্র সংগ্রহ করিতে হইবে।
২৮। মৃত ব্যক্তির স্ত্রীর ক্ষেত্রেঃ- প্রকৃত ভালোবাসা হইলে, তার প্রেমের চিহু স্বরূপ যে যে পরিধান পরিতেন, তাহা সবই রাখিতে পারিবেন। তাহার বিপরিত কিছু করিতে হইলে গুরুর স্মরণাপন্ন হইতে হইবে। তিনি যাহা বলিবেন সেই মত অনুসারে কাৰ্য্য করিতে হইবে। পরলোক হইতে ঐ আত্মা যখন দেখিবে যে তার স্ত্রী প্রেমের জন্য তার দেয়া সমস্ত পরিধান ত্যাগ করেননি তখন তৃপ্ত বোধ কি করিবেন না ? নিশ্চই করিবেন, ইহাই প্রেমে কৃতজ্ঞতা বোধের অংশ। কেননা আত্মা অমর তাহার মৃত্যু হয না, শরীরের মৃত্যু হয়। যাকে এত দিন ভালোবাসিলাম, সে আমার এজীবনের প্রেমের সঙ্গী, তাহার প্রেমের চিহু স্বরূপ যতদিন এজীবন রহিবে ততদিন রাখিবার অধিকার আছে। ইহা তাহার ইচ্ছার অধিন। যে গুণ থাকিলে ঐ গুণের ভাজনকে পাইলে প্রাণশীতল হয়, আত্মা তৃপ্তিলাভ করে, মন অভিনব আনন্দ রসময় ভাবের উদয় হয়, হৃদয় নব ভাবে কার্য্যে প্রবৃত্ত হয়, ও পরমাত্মার প্রকৃত কাৰ্য্য করা হয়; আর না পাইলে প্রাণ কিছুতেই শীতলহয় না হৃদয় নীরস হয়, মন ভাবশূন্য প্রায় হইয়া পড়ে, জীবাত্মার ক্লেশের ইয়ত্তা থাকে না, এবং পরমাত্মার উৎকর্স ও শান্তি হয় না। মূল কথা যে গুণে ঐ পরম গুণের ভাজনের দোষ গুণে আসিয়া পড়ে, দোষ দেখিতে বাসনা হয় না, কেবল গুণই লক্ষ্য হয়, কথা শুনিলে প্রাণ জুড়ায়, না শুনিলে জগৎ অন্ধকারময় বোধ হয়, অভাবে জীবত থাকিতে হয়, ভাবে সকল অশান্তি দূরে যায়, ফলতঃ ঐ গুণের প্রকৃত ভাজনের চিহ্নমাত্র না পাইলে কিছুতেই জীবিত থাকা যায় না, তাহাকে প্রেম কহে। যে সৃষ্ট আত্মার দর্শন আমার নিকট সত্তই চারু ও মনোহর, যাহাকে নিয়তে দেখিলেও দৃষ্টিতৃপ্তি বোধকরেনা, যাহার কথা চিরমধুময়, অমৃতময় ও কর্ণকুহরে প্রবেশ করিবা মাত্রেই হৃদয় নাচিতে থাকে, বদনে যাহার গুণব্যখ্যা করিয়া শেষ করিতে পারা যায় না, হৃদয় যাহাকে হৃদয়স্থ করিয়াও সুখের অন্তিম সীমা লাভ করিতে পারে না, যাহার দোষরাশি কখনই ইন্দ্রিয়গোচর হয়, দোষ বলিয়া প্রতীয়মান হয় না, অপরের মুখে নিন্দা বা কুৎসা শুনিলে হৃদয়ে বিরক্তির উদয় হয়, যাহার সুখে সুখী ও দুঃখে দুখী হওয়া যায়, যে পীড়িত হইলে পীড়িত ও প্রফুল্ল হইলে আমাদিতে হই, যাহার অদর্শনে সমস্ত শূন্য দেখি, সুখ শান্তি বিহীন হই, আমাতে আর আমি থাকি না, কি হইয়াছে, কিসের অভাব হইয়াছে, অনুভব করিতে পারি না, প্রত্যুত কেবল জীবন্মৃত হইয়া থাকি, যাহার মঙ্গল ভিন্ন অমঙ্গল কামনা হৃদয় কখনই স্থান পায় না, যাহার সামান্য তাচ্ছল্যভাব বা অনাদরে মরমে মরিয়া যাই, যাহাকে নিঃস্বার্থভাবে আমার বলিয়া অঙ্গীকার করি, জীবনসৰ্ব্বস্ব সমৰ্পণ করিয়াও যাহার কিঞ্চিৎ সাহায্য করিতে পারিলে হৃদয় কৃতার্থ বোধ করে, যাহাকে নিজের অনন্ত দুঃখরাশির কণামাত্র জানাইয়া ও দুঃখিতকরিতে বাসনা হয়না।
৪/খ) শ্রাদ্ধঃ
১। পরলোকগত পিতৃলোকদিগের উদ্ধারের নিমিত্ত শ্রদ্ধাপূৰ্ব্বক যে কৰ্ম্ম সম্পাদিত হয়, তাহাকে শ্রাদ্ধ কহে। অতএব শ্রাদ্ধকার্য্যে শ্রদ্ধাই প্রধান উপকরণ। শ্রদ্ধা শব্দে সভত্তিক বিশ্বাস বুঝায়। সুতরাং ভক্তি ও বিশ্বাস ব্যতিরেকে শ্রাদ্ধকৰ্ম্ম সম্পন্ন হইতে পারে না। বিশ্বাসী ভক্তি পূৰ্ব্বক পিতৃলোকদিগের উদ্ধার কামনা ও জগদীশ্বরের নিকটে প্রার্থনা করিলেও শ্রাদ্ধকাৰ্য্য সুসম্পন্নহইতে পারে।
২। কতিপয় সৎলোক একসঙ্গে উপস্থিত হইয়া বিশ্বাসী ভক্তি পূৰ্ব্বক পিতৃলোকদিগের উদ্ধারকামনা ও জগদীশ্বরের নিকটে প্রার্থনা করিলেই প্রকৃত শ্রাদ্ধকাৰ্য্য সম্পন্ন হইবে।
৩। গৃহীলোক মাত্রেই প্রায় আড়ম্বরপ্রিয়, এজন্য স্বীয় মনস্তুষ্টির জন্য ঐ দিবসে কতিপয় ব্রহ্মজ্ঞ ও শাস্ত্রজ্ঞ ব্যক্তিকে নিমন্ত্রণপূৰ্ব্বক সযত্নে ভোজন করান।
৪। অতিথি ও দীনদরিদ্রদিগকে কিঞ্চিৎ কিঞ্চিৎ দান করা কর্ত্তব্য।
৫। শ্রাদ্ধ কাৰ্য্যে নিমন্ত্রণ বার্তা সমস্ত মাধ্যমেই হইতে পারে। বার্তায় লিখিতে হইবে এই যে আমার মাত্রীদেবী অথবা পৃত্রীদেব ও অনান্য পরলোক প্রাপ্তি।
৬। মৃত্যু হইবার পর পনেরদিন অথবা একমাসে প্রতিদিন পরলোকগত দিগের উদ্দেশ্যে উপাসনা করিতে হইবে।
৭। শ্রদ্ধকার্য্যে উপাসনায় পরলোকগত দিগের উদ্ধারের নিমিত্ত ক্রমোন্নতি গুণের অধিবেশণই প্রধান হইবে।
৮। উপাসনার নিয়মঃ-
দীক্ষাবীজ জপ (দীক্ষা অপ্রাপ্তকগণ সাধারণ নাম জপ)অন্তত ২০ বার।
গুরু আহ্বাণ
দীক্ষাবীজ জপ (দীক্ষা অপ্রাপ্তকগণ সাধারণ নাম জপ) = অন্তত ২০ বার।
১ম- সত্যধর্মের শ্রেষ্ঠতাসূচক সঙ্গীত।
২য়- নিৰ্বেদ-জনক সঙ্গীত।
৩য়- মনের প্রতি ও জনের প্রতি সদ্ভাবপূর্ণ সঙ্গীত।
দীক্ষাবীজ জপ (দীক্ষা অপ্রাপ্তকগণ সাধারণ নাম জপ) = অন্তত ৩ বার।
৪র্থ- গুণকীৰ্ত্তন।
৫ম- স্বীয় পাপ উল্লেখ ও তজ্জন্য আত্মগ্লানি ভোগ।
৬ষ্ঠ- পাপ হইতে মুক্তির জন্য প্রার্থনা।
৭ম- গুণের জন্য প্রার্থনা সাধারণ কথায় প্রার্থনা পরলোকগত নিমিত্ত প্রার্থন সঙ্গীত
৮ম- ধ্যান।
দীক্ষাবীজ জপ (দীক্ষা অপ্রাপ্তকগণ সাধারণ নাম জপ) = অন্তত ২০ বার।
১০ম- জগদীশ্বরের কৃপাময় স্তব
১১শ- জগদীশ্বরের আনন্দময় স্তব
১২শ- জগদীশ্বরের ধন্যবাদ
দীক্ষাবীজ জপ (দীক্ষা অপ্রাপ্তকগণ সাধারণ নাম জপ) = অন্তত ২০ বার।
ঈশ-প্রণাম।
দীক্ষাবীজ জপ (দীক্ষা অপ্রাপ্তকগণসাধারণ নামজপ) =অন্তত ২০ বার।
শাস্ত্রপাঠ
দীক্ষাবীজ জপ (দীক্ষা অপ্রাপ্তকগণসাধারণ নামজপ) = অন্তত৩বার।
গুরুদেবের ধন্যবাদ
গুরুপ্রণাম।
দীক্ষাবীজ জপ(দীক্ষা অপ্রাপ্তকগণসাধারণ নামজপ) =অন্তত ২০ বার।
প্রতিদিনের নিয়মে করিবে এবং অনান্য অধিবেশণও করিবে।
৯। গুরুপূজার নিয়মঃ
দীক্ষাবীজ জপ (দীক্ষা অপ্রাপ্তকগণসাধারণ নামজপ) =অন্তত ২০ বার।
গুরুপূজার নিমিত্ত পরমপিতার নিকট শক্তি ভিক্ষা (সাধারণকথায়)
১ম- শ্রী গুরুআহ্বাণ।
২য়- গুরু শ্রেষ্ঠতাসূচকসঙ্গীত।
৩য়- গুরু নির্ব্বেদজনক সঙ্গীত।
৪র্থ- গুরুবিষয়কমনের প্রতি ও জনের প্রতি সদ্ভাব পূর্ণ সঙ্গীত
৫র্থ- গুরু গুণকীৰ্ত্তনের সহিত গুরুগীতা পাঠ।
৬ম- ভক্তি হীনতা হেতু আত্মগ্লানি ভোগ।
৭ষ্ঠ- গুরুর কাছে পাপ হইতে মুক্তির জন্য প্রার্থনা।
৮ম-গুরুর কাছে গুণ প্রাপ্তির জন্য প্রার্থনা।
৯ম- গুরু ধ্যান।
১০ম- গুরুকৃপাময়স্তব ।
১১ম- গুরুআনন্দময় স্তব।
১২শ- গুরুদেবের ধন্যবাদ।
গুরু প্রণাম।
দীক্ষাবীজ জপ (দীক্ষা অপ্রাপ্তকগণসাধারণ নামজপ) = অন্তত ২০ বার।
জগদীশ্বরের ধন্যবাদ ও প্রণামঃ-সাধারণকথায়।
প্রতিদিনের নিয়মে গুরুপূজা করিতে হইবে।
১০। ছেলে ও মে উভয়কেই একই দিনে অর্থাৎ পনেরদিনে অথবা একমাসেই শ্রাদ্ধকাৰ্য্য সম্পন্ন করিতে হইবে।
১১। মৃত্যু হইবার দিন হইতে সমদর্শনে যেমনই নিয়ম আছে, তেমনই করিতে হইবে।
১২। দুইবার গুরুপূজা দিতে হবে।
১৩। গুরুপূজা সূক্ষ্মভাবে কেবল মন্ত্রোচ্চারণ দ্বারাই করিতে হইবে।
১৪। এই সময় মাদকদ্রব্য পরিত্যাগ করিবে।
১৫। নিরামিস, হবিষ্যান্ন একবেলা আহার করিবে।বৈকালে ফল, জল খাইবে।
১৬। সকলের পাক (রান্না) খাইবেনা। পবিত্রতা বজায় রাখিতে হইবে।
১৭। প্রত্যেক কার্য্যের আদিতে ও অন্তেও মধ্যে মঙ্গলময়ের নাম করিবে।
১৮। সকলের সম্মুখে খাওয়া যাইবেনা।
১৯। পরিশুদ্ধ শাল্যন্ন (ভালো আতপ চাল), যবের ছাতু, ময়দা, মুগ, ছোলা প্রভৃতি তুষবর্জিত শুভ্র শস্য, পটোল, কাঁটাল, মানকচু, কক্কোল শুকাসান (বদরী), করঞ্চ, কর্কটী (কাঁকুড়), রম্ভা (কলা), ডুম্বরী (ডুমুর) ও কন্টকণ্টক (খেজুর)। তরকারীর মধ্যে আরও কয়েকটী, যথা আমরম্ভা (কাঁ চাকলা), বালরম্ভা(ঠটেকলা), রম্ভাদণ্ডক (থোড়), রম্ভার মূল, বার্তাকু (বেগুন), কূলক(মূলা) ও ঋদ্ধি (আলু, মিষ্টি আলু)। এবং শাকের মধ্যে পঞ্চশাক প্রশস্ত যেমন বালশাক, কালশাক, পটোলপত্র, বাস্তৃক (বেতয়াশাক) ও হিমলোচক (হঞ্চাশাক) এভিন্ন অন্য কিছু এইসময় খাওয়া যাইবেনা।
২০। সকলকিছু পরিপাক করিতে হইবে শুধু মাত্র লবণ ছাড়া সেদ্ধ।
২১। মৎস্য, মাংস এবং আমিষ বলিয়া পরিগণিত উদ্ভিজ্জ দ্রব্য সমুদায় (যেমন মসূরী,| মাষকলাই)পরিত্যাগ করিবে। জীব-হিংসা যথাসাধ্য পরিত্যাগ করিবে।
২২। দিন ও রাত্রির মধ্যে একবার মাত্র পবিত্র অন্ন (আতপ চাল) ভোজন করিবে। ঘৃত, দুগ্ধ ও নির্দোষ উদ্ভিজ্জ দ্রব্য উহার উপকরণ হইতে পারে। এবং অন্য একবার অন্ন ব্যতিরেকে লঘুপাক দ্রব্য ভোজন করিবে। (ঘৃত-উৎকৃষ্ট গব্যঘৃত খাইতে হইবে। ঘৃত যেন একবর্ণা গাভীর দুর্পোৎপন্ন হয়।
২৩। | স্ত্রী-সহবাস করিবে না। এমন কি তদ্বিষয়ের চিন্তাও করিবে না। যাহাতে রেতঃস্খলন হয়, বা হইতে পারে, এরূপ কাৰ্য্যও করিবেনা। অবিবাহিত পুরুষ যাবতীয় রমণীর প্রতি মাতৃ-ব্যভার করিবে, এবং বিবাহিত পুরুষ এই কাৰ্য্যলাভের পূৰ্বে স্বীয় স্ত্রীকে দর্শণ করিবে না, এবং অন্যান্য রমণীর প্রতি মাতৃবৎব্যবহার করিবে। ফলতঃব্রহ্মচর্য্যের নিয়ম সমূহ পালন করিবে।
২৪। প্রতিদিন অন্ততঃ ছয় ঘন্টা সময় জগদীশ্বরের উপাসনা করিবে। এতদ্ভিন্ন সৰ্ব্ব সময়ে তাঁহাকে স্মরণ রাখিতে চেষ্টা করিবে। উপাসনা অন্য যে সময়ে যতক্ষণ ব্যাপিয়া করুক না কেন, নিশীথ সময় অন্ততঃতিনঘন্টা সময় প্রশান্তমনে উহা অবশ্যই করিবে।
২৫। যাঁহারা প্রকৃত ভক্তি-ভাজন, তাঁহাদিগের প্রতি যেমন প্রগাঢ় ভক্তি করিবে, তদ্রুপ যাহারা প্রকৃত পক্ষে ভক্তি-ভাজন নহে, এমন কি পাপাচারী বলিয়া ঘৃণার্থ, তাহাদিগের প্রতিবাহিরেও ভক্তি-ভাব প্রদর্শন করিবে না।
২৬। সন্তানেরা প্রতিদিন দুই বার স্নান করিবে।
২৮। এইসময় মাথায় চিরুনি ব্যবহার করা যাইবেনা।
২৯। চামরার পাদুকা পরা নিষিদ্ধ।
৩০। তেল ও সাবান মাখা নিষিদ্ধ।
৩১। এই সময় অর্থাৎ পনের দিন অথবা একমাসে শ্রাদ্ধকাৰ্য্য চলাকালীন সময়ে চুল ও দাড়ি কাঁটা নিষেধ কারণ রক্ত ক্ষরণে সক্রমনের জন্য। যখন শ্রাদ্ধকাৰ্য্য সম্পন্য হইবে সেইদিন সকালে সুধু দাঁড়ি কাঁটীতে পারিবেন।
৩২। প্রতিদিন পরলোকগত দিগের নিমিত্য অধিবেশন হবে অন্য সময় অনান্য অধিবেশন করিতে হইবে।
৩৩। মৃত ব্যক্তির উদ্দেশ্যে প্রার্থনার সঙ্গে পিতৃকুল ও মাতৃকুলের উদ্দেশ্যে প্রার্থনা ও তর্পণ করিতে হইবে।
৩৪। আসেপাসে সৎসতীগণকে ডাকিয়া একই সঙ্গে উপাসনা করিতে হইবে।
৩৫। এই সময় উৎসব থাকিলে তাহা করিতে হইবে।
৩৬। এই সময় খুব প্রয়োজন ভিন্য কাহারও সঙ্গে বাক্যালাপ করা যাইবেনা।
৩৭। এই সুমহান কাৰ্য্য করিবার উদ্দেশ্যই হইল আমাদের সকলের দায়ভার। কেননা সকলেই রক্তের মধ্য দিয়া দ্বাদশ জনের যেমন মায়ের পাঁচ ও বাবার সাত জনার অপগুণ লইয়া আমাদের আসিতে হইয়াছে। তাই তাহারা উদ্ধার না পাইলে আমাদের দ্বায়ভারের অপরাধ হইবার কারণে শ্রাদ্ধকাৰ্য্য করিতেই হইবে। গুণ বিকাশের সঙ্গেসঙ্গেই অপগুণের পতন হয়, এই কারণে উপাসনাই একমাত্র উদ্ধারের পথ। সকল সৎসতীর প্রতিদিন তর্পণ ও তাদের উদ্দেশ্যে প্রার্থনা করা প্রয়োজন।
৩৮। “এই শ্রাদ্ধ কাৰ্য্য মৃত তিথিতে করাই সর্বাপেক্ষা প্রশস্ত। মৃত্যু দিবসে করাও অযৌক্তিক নহে। তবে ইহা অবশ্য বক্তব্য যে, বৎসরান্তে ঐরূপ করা ভিন্ন প্রতি আমাবস্যায়ও করা বিধেয়। অধিক অর্থ ব্যয় বৎসরের মধ্যে একদিন করাই যুক্ত বটে, কিন্তু প্রকৃতকাৰ্য্য প্রতিমাসে প্রতি আমাবস্যায় করাই কৰ্ত্তব্য।”
৩৯। তর্পণঃ- অঞ্জলি পূর্ণ করিয়া জল লইয়াঃ- অমুকগোত্র অমুকঃ পিতা মে তৃপ্যতু।” “অমুকগোত্র অমুকঃ মাতামহো মে তৃপ্যতু।” - ইত্যাদি বাক্য দ্বারা জলদান করিলেই তর্পণ হইবে।
৪০। তর্পণের বাক্যসমূহ এইরূপঃ-“আনেন বারিণা অমুকগোত্রঃ (অমুকগোত্র বা অমুকঃপিতা মে তৃপ্যতু। অমুকঃপিতামহো মে তৃপ্যতু। অমুকঃ প্রপিতামহো মে তৃপ্যতু। অমুকঃ বৃদ্ধপ্রপিতামহো মে তৃপ্যতু। অমুকী মাতা মে তৃপ্যতু। অমুকঃ মাতামহো মে তৃপ্যতু। অমুকঃ প্রমাতামহো মে তৃপ্যতু। অমুকী পিতামহী মে তৃপ্যতু। অমুকী মাতামহী মে তৃপ্যতু। অমুকী প্রপিতামহী মে তৃপ্যতু। অমুকী প্রমাতামহী মেতৃপ্যতু। অমুকী বৃদ্ধপ্রপিতামহী মেতৃপ্যতু।
৪১। একইসঙ্গে অনান্য সকলের জন্য তর্পণকরিতে হইবেঃ
দেবা যক্ষা স্তথা নাগা গন্ধর্ব্বাপ্স্রসোহসুরা।
ক্রুরাঃসর্পাঃসুপর্ণাশ্চ তরবো জুম্ভকাঃ খগাঃ।
বিদ্যাধরা জলাধরা স্তথৈবাকাশগামিনঃ।
নিরাহারাশ্চ যেজীবাঃপাপে ধৰ্ম্মেরতাশ্চ যে।
তেষামা প্যায়নর্থন্ত্ত দীয়তেসলিলংময়া।
৪২। যাহারা প্রকৃত ভাবে শ্রাদ্ধ কাৰ্য্য করিতে চায়, তাহারা একমাসে যে ঐ তিথি আইসে তাহাকে সম্মুখে রাখিয়াই করিবে। আর যাহারা অপারগ তাহারা পনেরদিন বাদে করিতে পারে।
৪৩। যেদিন আনুষ্ঠানিক ভাবে সকলকে নিমন্ত্রণ করিয়া খাওয়াইতে হইবে সেদিন যাহারা শ্মশানে অথবা চিকিৎসা বিশ্ববিদ্যালয় গিয়াছিল তাহাদেরকে আপ্যায়ন করিয়া খাওয়াইতে হইবে।
৪৪। আত্মান্নোতীর ধৰ্ম্ম সুতরাং নিরামিস খাদ্যে ভোজনের মাধ্যমেই ঈশ্বর লাভ সম্ভব হয় বলিয়াই নিরামিস খাদ্যই (খাদ্য বিচারে যাহা খাইলে গ্লানী আইসে তাহা বর্জনীয়) পরিবেশণ করিতে হইবে।
৪৫। পনেরদিন অথবা একমাসের যে শ্রাদ্ধকাৰ্য্য সমাপ্তি আনুষ্ঠানিক ভাবে করিতেও পারে।
৪৬। শেষের দিন সকালে উপাসনা হওয়ার পর শেষে গুরুপূজা করিতে হবে।
৪৭। শাস্ত্র পাঠে শ্রাদ্ধ ও তর্পণের মাহাত্য এবং প্রয়োজনিয়তা বিষয় বলিতে হইবে।
৪৮। মৃত ব্যক্তির উদ্ধারের জন্যে যাহারা শ্রাদ্ধ কাৰ্য্য করিবে তাহারা নিজে মুখে গুরুপূজার সময় প্রার্থনা করিতে হইবে।
৪৯। যে ব্যক্তি পরলোকগত হইয়াছেন তাহার স্মৃতিচারণ করিতে হইবে গুরুপূজা শেষ হইবার পরে।
৫০। উপাসনার সময় প্রণব রাখিয়া করিতে হইবে, গুরুপূজার সময় গুরুদেবের ছবি অথবা মূর্তি রাখিতে হইবে এবং যাহার মৃত্যু হইয়াছে তাহার ছবি অথবা মূর্তি রাখিয়া স্মৃতিচারণ করিতে হইবে। সাবধান গুরুদেবের সঙ্গে যেন মৃত ব্যক্তির ছবি রাখা না হয়।
৫১।যে ব্যক্তি পরলোগত হইয়াছেন তাহার একটী ছবি অথবা মূর্তি রাখিয়া স্মৃতিচারণ করিতে হইবে।
৫২। যে ব্যক্তি পরলোগত হইয়াছেন তাহার জন্ম হইতে মৃত্যু পর্যন্ত একটী ছবির স্মৃতি প্রদর্শনীর আয়জন করিতে পারিলে ভালো হয়।
৫৩। নিমন্ত্রিত ব্যক্তিগণ মৃত ব্যক্তির উদ্দেশ্যে পরিসুদ্ধ জল কোষাকুষীর মাধ্যমে প্রদান করিবেন। ঐ দিনে সকাল হইতে এই প্রকৃয়া শুরু করিতে হইবে।
৪র্থ- গুরুবিষয়কমনের প্রতি ও জনের প্রতি সদ্ভাব পূর্ণ সঙ্গীত
৫র্থ- গুরু গুণকীৰ্ত্তনের সহিত গুরুগীতা পাঠ।
৬ম- ভক্তি হীনতা হেতু আত্মগ্লানি ভোগ।
৭ষ্ঠ- গুরুর কাছে পাপ হইতে মুক্তির জন্য প্রার্থনা।
৮ম-গুরুর কাছে গুণ প্রাপ্তির জন্য প্রার্থনা।
৯ম- গুরু ধ্যান।
১০ম- গুরুকৃপাময়স্তব ।
১১ম- গুরুআনন্দময় স্তব।
১২শ- গুরুদেবের ধন্যবাদ।
গুরু প্রণাম।
দীক্ষাবীজ জপ (দীক্ষা অপ্রাপ্তকগণসাধারণ নামজপ) = অন্তত ২০ বার।
জগদীশ্বরের ধন্যবাদ ও প্রণামঃ-সাধারণকথায়।
প্রতিদিনের নিয়মে গুরুপূজা করিতে হইবে।
১০। ছেলে ও মে উভয়কেই একই দিনে অর্থাৎ পনেরদিনে অথবা একমাসেই শ্রাদ্ধকাৰ্য্য সম্পন্ন করিতে হইবে।
১১। মৃত্যু হইবার দিন হইতে সমদর্শনে যেমনই নিয়ম আছে, তেমনই করিতে হইবে।
১২। দুইবার গুরুপূজা দিতে হবে।
১৩। গুরুপূজা সূক্ষ্মভাবে কেবল মন্ত্রোচ্চারণ দ্বারাই করিতে হইবে।
১৪। এই সময় মাদকদ্রব্য পরিত্যাগ করিবে।
১৫। নিরামিস, হবিষ্যান্ন একবেলা আহার করিবে।বৈকালে ফল, জল খাইবে।
১৬। সকলের পাক (রান্না) খাইবেনা। পবিত্রতা বজায় রাখিতে হইবে।
১৭। প্রত্যেক কার্য্যের আদিতে ও অন্তেও মধ্যে মঙ্গলময়ের নাম করিবে।
১৮। সকলের সম্মুখে খাওয়া যাইবেনা।
১৯। পরিশুদ্ধ শাল্যন্ন (ভালো আতপ চাল), যবের ছাতু, ময়দা, মুগ, ছোলা প্রভৃতি তুষবর্জিত শুভ্র শস্য, পটোল, কাঁটাল, মানকচু, কক্কোল শুকাসান (বদরী), করঞ্চ, কর্কটী (কাঁকুড়), রম্ভা (কলা), ডুম্বরী (ডুমুর) ও কন্টকণ্টক (খেজুর)। তরকারীর মধ্যে আরও কয়েকটী, যথা আমরম্ভা (কাঁ চাকলা), বালরম্ভা(ঠটেকলা), রম্ভাদণ্ডক (থোড়), রম্ভার মূল, বার্তাকু (বেগুন), কূলক(মূলা) ও ঋদ্ধি (আলু, মিষ্টি আলু)। এবং শাকের মধ্যে পঞ্চশাক প্রশস্ত যেমন বালশাক, কালশাক, পটোলপত্র, বাস্তৃক (বেতয়াশাক) ও হিমলোচক (হঞ্চাশাক) এভিন্ন অন্য কিছু এইসময় খাওয়া যাইবেনা।
২০। সকলকিছু পরিপাক করিতে হইবে শুধু মাত্র লবণ ছাড়া সেদ্ধ।
২১। মৎস্য, মাংস এবং আমিষ বলিয়া পরিগণিত উদ্ভিজ্জ দ্রব্য সমুদায় (যেমন মসূরী,| মাষকলাই)পরিত্যাগ করিবে। জীব-হিংসা যথাসাধ্য পরিত্যাগ করিবে।
২২। দিন ও রাত্রির মধ্যে একবার মাত্র পবিত্র অন্ন (আতপ চাল) ভোজন করিবে। ঘৃত, দুগ্ধ ও নির্দোষ উদ্ভিজ্জ দ্রব্য উহার উপকরণ হইতে পারে। এবং অন্য একবার অন্ন ব্যতিরেকে লঘুপাক দ্রব্য ভোজন করিবে। (ঘৃত-উৎকৃষ্ট গব্যঘৃত খাইতে হইবে। ঘৃত যেন একবর্ণা গাভীর দুর্পোৎপন্ন হয়।
২৩। | স্ত্রী-সহবাস করিবে না। এমন কি তদ্বিষয়ের চিন্তাও করিবে না। যাহাতে রেতঃস্খলন হয়, বা হইতে পারে, এরূপ কাৰ্য্যও করিবেনা। অবিবাহিত পুরুষ যাবতীয় রমণীর প্রতি মাতৃ-ব্যভার করিবে, এবং বিবাহিত পুরুষ এই কাৰ্য্যলাভের পূৰ্বে স্বীয় স্ত্রীকে দর্শণ করিবে না, এবং অন্যান্য রমণীর প্রতি মাতৃবৎব্যবহার করিবে। ফলতঃব্রহ্মচর্য্যের নিয়ম সমূহ পালন করিবে।
২৪। প্রতিদিন অন্ততঃ ছয় ঘন্টা সময় জগদীশ্বরের উপাসনা করিবে। এতদ্ভিন্ন সৰ্ব্ব সময়ে তাঁহাকে স্মরণ রাখিতে চেষ্টা করিবে। উপাসনা অন্য যে সময়ে যতক্ষণ ব্যাপিয়া করুক না কেন, নিশীথ সময় অন্ততঃতিনঘন্টা সময় প্রশান্তমনে উহা অবশ্যই করিবে।
২৫। যাঁহারা প্রকৃত ভক্তি-ভাজন, তাঁহাদিগের প্রতি যেমন প্রগাঢ় ভক্তি করিবে, তদ্রুপ যাহারা প্রকৃত পক্ষে ভক্তি-ভাজন নহে, এমন কি পাপাচারী বলিয়া ঘৃণার্থ, তাহাদিগের প্রতিবাহিরেও ভক্তি-ভাব প্রদর্শন করিবে না।
২৬। সন্তানেরা প্রতিদিন দুই বার স্নান করিবে।
২৮। এইসময় মাথায় চিরুনি ব্যবহার করা যাইবেনা।
২৯। চামরার পাদুকা পরা নিষিদ্ধ।
৩০। তেল ও সাবান মাখা নিষিদ্ধ।
৩১। এই সময় অর্থাৎ পনের দিন অথবা একমাসে শ্রাদ্ধকাৰ্য্য চলাকালীন সময়ে চুল ও দাড়ি কাঁটা নিষেধ কারণ রক্ত ক্ষরণে সক্রমনের জন্য। যখন শ্রাদ্ধকাৰ্য্য সম্পন্য হইবে সেইদিন সকালে সুধু দাঁড়ি কাঁটীতে পারিবেন।
৩২। প্রতিদিন পরলোকগত দিগের নিমিত্য অধিবেশন হবে অন্য সময় অনান্য অধিবেশন করিতে হইবে।
৩৩। মৃত ব্যক্তির উদ্দেশ্যে প্রার্থনার সঙ্গে পিতৃকুল ও মাতৃকুলের উদ্দেশ্যে প্রার্থনা ও তর্পণ করিতে হইবে।
৩৪। আসেপাসে সৎসতীগণকে ডাকিয়া একই সঙ্গে উপাসনা করিতে হইবে।
৩৫। এই সময় উৎসব থাকিলে তাহা করিতে হইবে।
৩৬। এই সময় খুব প্রয়োজন ভিন্য কাহারও সঙ্গে বাক্যালাপ করা যাইবেনা।
৩৭। এই সুমহান কাৰ্য্য করিবার উদ্দেশ্যই হইল আমাদের সকলের দায়ভার। কেননা সকলেই রক্তের মধ্য দিয়া দ্বাদশ জনের যেমন মায়ের পাঁচ ও বাবার সাত জনার অপগুণ লইয়া আমাদের আসিতে হইয়াছে। তাই তাহারা উদ্ধার না পাইলে আমাদের দ্বায়ভারের অপরাধ হইবার কারণে শ্রাদ্ধকাৰ্য্য করিতেই হইবে। গুণ বিকাশের সঙ্গেসঙ্গেই অপগুণের পতন হয়, এই কারণে উপাসনাই একমাত্র উদ্ধারের পথ। সকল সৎসতীর প্রতিদিন তর্পণ ও তাদের উদ্দেশ্যে প্রার্থনা করা প্রয়োজন।
৩৮। “এই শ্রাদ্ধ কাৰ্য্য মৃত তিথিতে করাই সর্বাপেক্ষা প্রশস্ত। মৃত্যু দিবসে করাও অযৌক্তিক নহে। তবে ইহা অবশ্য বক্তব্য যে, বৎসরান্তে ঐরূপ করা ভিন্ন প্রতি আমাবস্যায়ও করা বিধেয়। অধিক অর্থ ব্যয় বৎসরের মধ্যে একদিন করাই যুক্ত বটে, কিন্তু প্রকৃতকাৰ্য্য প্রতিমাসে প্রতি আমাবস্যায় করাই কৰ্ত্তব্য।”
৩৯। তর্পণঃ- অঞ্জলি পূর্ণ করিয়া জল লইয়াঃ- অমুকগোত্র অমুকঃ পিতা মে তৃপ্যতু।” “অমুকগোত্র অমুকঃ মাতামহো মে তৃপ্যতু।” - ইত্যাদি বাক্য দ্বারা জলদান করিলেই তর্পণ হইবে।
৪০। তর্পণের বাক্যসমূহ এইরূপঃ-“আনেন বারিণা অমুকগোত্রঃ (অমুকগোত্র বা অমুকঃপিতা মে তৃপ্যতু। অমুকঃপিতামহো মে তৃপ্যতু। অমুকঃ প্রপিতামহো মে তৃপ্যতু। অমুকঃ বৃদ্ধপ্রপিতামহো মে তৃপ্যতু। অমুকী মাতা মে তৃপ্যতু। অমুকঃ মাতামহো মে তৃপ্যতু। অমুকঃ প্রমাতামহো মে তৃপ্যতু। অমুকী পিতামহী মে তৃপ্যতু। অমুকী মাতামহী মে তৃপ্যতু। অমুকী প্রপিতামহী মে তৃপ্যতু। অমুকী প্রমাতামহী মেতৃপ্যতু। অমুকী বৃদ্ধপ্রপিতামহী মেতৃপ্যতু।
৪১। একইসঙ্গে অনান্য সকলের জন্য তর্পণকরিতে হইবেঃ
দেবা যক্ষা স্তথা নাগা গন্ধর্ব্বাপ্স্রসোহসুরা।
ক্রুরাঃসর্পাঃসুপর্ণাশ্চ তরবো জুম্ভকাঃ খগাঃ।
বিদ্যাধরা জলাধরা স্তথৈবাকাশগামিনঃ।
নিরাহারাশ্চ যেজীবাঃপাপে ধৰ্ম্মেরতাশ্চ যে।
তেষামা প্যায়নর্থন্ত্ত দীয়তেসলিলংময়া।
৪২। যাহারা প্রকৃত ভাবে শ্রাদ্ধ কাৰ্য্য করিতে চায়, তাহারা একমাসে যে ঐ তিথি আইসে তাহাকে সম্মুখে রাখিয়াই করিবে। আর যাহারা অপারগ তাহারা পনেরদিন বাদে করিতে পারে।
৪৩। যেদিন আনুষ্ঠানিক ভাবে সকলকে নিমন্ত্রণ করিয়া খাওয়াইতে হইবে সেদিন যাহারা শ্মশানে অথবা চিকিৎসা বিশ্ববিদ্যালয় গিয়াছিল তাহাদেরকে আপ্যায়ন করিয়া খাওয়াইতে হইবে।
৪৪। আত্মান্নোতীর ধৰ্ম্ম সুতরাং নিরামিস খাদ্যে ভোজনের মাধ্যমেই ঈশ্বর লাভ সম্ভব হয় বলিয়াই নিরামিস খাদ্যই (খাদ্য বিচারে যাহা খাইলে গ্লানী আইসে তাহা বর্জনীয়) পরিবেশণ করিতে হইবে।
৪৫। পনেরদিন অথবা একমাসের যে শ্রাদ্ধকাৰ্য্য সমাপ্তি আনুষ্ঠানিক ভাবে করিতেও পারে।
৪৬। শেষের দিন সকালে উপাসনা হওয়ার পর শেষে গুরুপূজা করিতে হবে।
৪৭। শাস্ত্র পাঠে শ্রাদ্ধ ও তর্পণের মাহাত্য এবং প্রয়োজনিয়তা বিষয় বলিতে হইবে।
৪৮। মৃত ব্যক্তির উদ্ধারের জন্যে যাহারা শ্রাদ্ধ কাৰ্য্য করিবে তাহারা নিজে মুখে গুরুপূজার সময় প্রার্থনা করিতে হইবে।
৪৯। যে ব্যক্তি পরলোকগত হইয়াছেন তাহার স্মৃতিচারণ করিতে হইবে গুরুপূজা শেষ হইবার পরে।
৫০। উপাসনার সময় প্রণব রাখিয়া করিতে হইবে, গুরুপূজার সময় গুরুদেবের ছবি অথবা মূর্তি রাখিতে হইবে এবং যাহার মৃত্যু হইয়াছে তাহার ছবি অথবা মূর্তি রাখিয়া স্মৃতিচারণ করিতে হইবে। সাবধান গুরুদেবের সঙ্গে যেন মৃত ব্যক্তির ছবি রাখা না হয়।
৫১।যে ব্যক্তি পরলোগত হইয়াছেন তাহার একটী ছবি অথবা মূর্তি রাখিয়া স্মৃতিচারণ করিতে হইবে।
৫২। যে ব্যক্তি পরলোগত হইয়াছেন তাহার জন্ম হইতে মৃত্যু পর্যন্ত একটী ছবির স্মৃতি প্রদর্শনীর আয়জন করিতে পারিলে ভালো হয়।
৫৩। নিমন্ত্রিত ব্যক্তিগণ মৃত ব্যক্তির উদ্দেশ্যে পরিসুদ্ধ জল কোষাকুষীর মাধ্যমে প্রদান করিবেন। ঐ দিনে সকাল হইতে এই প্রকৃয়া শুরু করিতে হইবে।
0 মন্তব্যসমূহ