গুরু ভক্তি।


 

         গুরুভক্তি

    ভক্তি কোমল গুণ সুতরাং গুরুকে পরমা ভক্তি করিবে। গুরুভক্তি পার করিলে প্রেম পাড়েতে মেলে, সকল ভার তাঁরে দিলে, নিরন্তর সুখ সাধি। প্রেমের সীমাবদ্ধ ভাব ভক্তি অতএব ভক্তি শেষে প্রেম হয়। ভক্তি সীমাবদ্ধ ভাবে আছে আর প্রেম অসীম সুতরাং অসীমে পৌঁছাইতে সীমাবদ্ধ ভাব পার করিতে পারিলেই প্রেমে পরিণত হয়। 


গুরুকে নিজ ভার অর্পণ করিতে হয়। "গুরুসত্যঃ এ সংসারে বা পরলোকে যত সৃষ্ট আত্মা আছেন, গুরুকে তাহাদিগের অপেক্ষাও অধিক বোধ করিবে।" "সৃষ্টের বিশিষ্ট মাঝে শ্রেষ্ঠ গুরু মহাজন। স-মলে বিমল করেন, অচেতনে সচেতন। দেব দেবী আছেন যত, তাঁর কাছে সবে নত, বরাভয় করে ধরে, পালেন যিনি অনুক্ষণ।"


 "গুরু যাহা যখন আদেশ করিবেন, তখনই তাহা করিবে। তাহাতে দোষগুণ বিচার করিও না। এ জগতে যাহাকে লোকে অতি পবিত্র কার্য্যভাবে, গুরু যদি তাহাও নিষেধ করেন, তবে তাহাও করিবে না। আর লোকে যাহাকে ঘোর পাপ বলে, গুরু যদি তাহাও করিতে বলেন, তাহাও অম্লান বদনে প্রফুল্ল মুখে করিবে। ভক্ত শিষ্যের নিকটে গুরুর আদেশ পালনই পুণ্য, এবং গুরুর আদেশ লঙ্ঘনই--পাপ। ইহা ভিন্ন আর পাপ পুণ্য নাই।" "গুরুপূজা ভিন্ন কাহারও পূজা করিবে না।"


 সর্ব্ব সময় গুরুর গুণের বিষয়ে ভাবিতে হয়। "যখন তখন গুরুমূর্ত্তি ধ্যান করিবে।"  "বৎসরের মধ্যে অন্ততঃ একবার যথাবিহিত বিধানে গুরু পূজা করিবে।" নিবেদন-- "ধন জন স্ত্রী পুত্র প্রভৃতি যে সকল লইয়া ভক্ত-শিষ্য সুখে থাকেন, সে সকলই গুরুদেবের এবং গুরুপ্রসাদে লব্ধ--ইহা কখনই ভুলিবে না।" "মনে মনে সমস্তই গুরুকে নিবেদন করিয়া দিবে এবং 'তাহার প্রসাদ ভোগ করিতেছি'--এই জ্ঞানে সকল কার্য্য করিবে।" গুরুই সব আমি নিমিত্ত মাত্র।


 নিজের যত গোপন বিষয় তাহা গুরুর কাছে ব্যাক্ত করিতে হয়, যতই গুরুকে নিবেদন করিবে ততই গুরুকে অন্তঃস্থ করিতে পারিবে। নিদ্রা যাইবার পূর্ব্বে ও পরে গুরু মূর্ত্তি ধ্যান আবশ্যক। খাইবার কালে গুরুকে নিবেদন করিয়াই খাইতে হয়।


   যত জটিল বিষয় আছে তাহা জিজ্ঞাসা করিয়া অন্তর শান্ত করিয়া লইতে হয়। ধর্ম্মের বিষয় ও গুরুর বিষয় সাধারণ ভক্ত পিপাসু গণকে উদ্বুদ্ধ করিয়া গুরুর নিকটে লইয়া আসিতে হয়। 


    এইরূপ দৃঢ় ভাবে কার্য্য করিতে পারিলেই গুরুভক্তি সম্ভব হইবে। যাহারা আত্মন্নতির লালসায় লালায়িত তাহারা অতি অনায়াসেই এই কার্য্য করিয়া মানব জন্মের সার্থকতা সম্পাদন করিতে সমর্থ হয়।


একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ