লয় বৃত্তান্ত।
ভারতবর্ষীয় কৌতুকাগারে ( জাদুঘরে ) দৃষ্ট হয় যে, একটি প্রস্তরীভূত মহাকূর্ম্মের শরীরের দৈর্ঘ্য ৬ হস্ত পঞ্চ অঙ্গুলি, বিস্তার তিন হাত কুড়ি অঙ্গুলি এবং বক্রাকার পৃষ্ঠদেশের বিস্তার সাত হাত। কিন্তু এতাদৃশ বা এতজ্জাতীয় কূ্র্ম্ম আর কুত্রাপি দৃষ্ট হয় না ।
সংস্কৃত গ্রন্থে তিমি মৎসের দৈর্ঘের পরিমাণ শত যোজন বলিয়া বর্ণিত আছে, এবং তিমিকে গিলিতে পরে এরূপ যে মৎস, তাহাকে যে গিলিতে পারে, রাঘব আবার তাহাকে গিলিতে পারে। এক্ষণে উক্ত কৌতুকাগারে যে তিমি মৎস্যের কঙ্কাল আছে, প্রকৃতপক্ষে তিমি মৎস্যের পরিমাণ তাহা হইলেও রাঘব কত বড়, অনুমান করিয়া বুঝিয়া লইতে গেলে বিস্ময়ান্বিত হইতে হয়। কিন্তু এক্ষণে আর ঐরূপ বৃহদাকার মৎস্য দৃষ্টিগোচর হয় না। (সংস্কৃত ভাষায় তিমি ও রাঘব-সম্বন্ধে নিম্নলিখিত রূপ বর্ণনা আছে। যথা--
অস্তি মৎস্য স্তিমির্ণাম শতযোজন মায়তঃ।
তিমিলিঙ্গ-গিলোহপ্যস্তি তদিগ্ লোহপ্যস্তি রাঘবঃ।।
অর্থাৎ শত-যোজন আয়তো আয়ত তিমি নামে মৎস্য আছে। তিমিলিঙ্গ-গিলও আছে এবং তদগিল রাঘব আছে )।
ঐ কৌতুকাগারে একটি বৃহদাকার পশুর প্রস্তরীভূত কঙ্কাল দৃষ্ট হয়। উহাকে মহাপশু কহে। তাহার দৈর্ঘ্য প্রায় ১৪ হস্ত। এতদ্ভিন্ন আরও অনেক বৃহদাকার পশুর উক্ত প্রকার কঙ্কাল তথায় বিদ্যমান আছে। কিন্তু এক্ষণে আর ঐ সকল পশু দেখিতে পাওয়া যায় না।
সাইবেরিয়ায় একটি অতিকায় হস্তীর কঙ্কাল প্রাপ্ত হওয়া গিয়াছে। উহা এক্ষণে রুসিয়ার রাজধানী সেন্ট্-পিটর্সবর্গের কৌতুগারে রক্ষিত আছে। উহার দৈর্ঘ্য কিঞ্চিদূন একাদশ হস্ত, উচ্চতা কিঞ্চিদধিক ষট্ হস্ত এবং বক্রাকার দংষ্ট্রাদ্বয় অর্থাৎ দুইটি বৃহৎ দন্ত প্রত্যেকে ৬ পূণ্য ১ এর ৩ হস্ত পরিমিত সাইবেরিয়ায় এই জাতীয় আরও হস্তি-কঙ্কাল প্রাপ্ত হওয়া যায়। কিন্তু এক্ষণে আর ঐ সকল জাতীয় হস্তী নেত্রগোচর হয় না। সুতরাং জানা যাইতেছে যে, ঐ সকল অতিকায় হস্তীর বংশ বিলুপ্ত হইয়াছে।
আর এক জাতিয় হস্তীর কঙ্কাল নর্ম্মদা নদীর উৎপত্তিস্থানের সন্নিহিত প্রদেশে এবং ইউরোপ, আমেরিকা ও আসিয়ার অন্যোন্য স্থানেও দেখিতে পাওয়া যায়। এই সকল অতিকায় হস্তীর এক দলকে হস্তিগণেশ ও অন্য দলকে চুচুক হস্তী কহে। হস্তীগণেশের পার্শ্বদ্বয়ের দংষ্ট্রাদ্বয় প্রত্যেকে ৭ পূণ্য ১এর ৩ হস্ত পরিমিত। এই সকল জাতিও এক্ষণে আর দৃষ্টি-গোচর হয় না। অতএব বোধহয় যে, উহারা বিলুপ্ত হইয়াছে।
শরভ নামে একজাতীয় অষ্টাপদ মৃগের উল্লেখ সংস্কৃত গ্রন্থ ( শরভকুল মজিহ্মং প্রোদ্ধরত্যম্বু কুপাৎ। -ইতি কালিদাস মহাভারতের ও শরভের উল্লেখ আছে।) এবং গ্রীসদেশীয় প্রাণিবৃত্তান্তে দেখিতে পাওয়া যায়। কিন্তু ঐ জাতি এক্ষণে আর দৃষ্টি হয় না। এতদ্দ্বারা প্রতীয়মান হয় যে, উহাদের বংশেরও বিলোপ সাধন হইয়াছে।
0 মন্তব্যসমূহ