সত্যেষ্টই সত্য-ধর্ম্ম অবলম্বীরা।
কোন একজন প্রকৃত ধর্ম্মার্থী কখনই হিন্দু, মুসলমান, খৃষ্টান প্রভৃতি সকল ধর্ম্মাবলম্বী বলিয়া পরিচিত হইতে পারেন না, অথচ যিনি প্রকৃতরূপে ধৰ্ম্মানুষ্ঠান করেন, তিনি ঐ সকল ধর্ম্মের কোনটীরই বিরোধী নহেন। সুতরাং তাঁহাকে যদি জিজ্ঞাসা করা যায় যে, আপনি কোন ধর্মাবলম্বী, তবে তিনি কোনও প্রচলিত ধর্মের নাম করিতে পারেন না, কেননা তৎসমুদায়ই বর্ত্তমান সময়ে সম্প্রদায় বিশেষের মধ্যে নিবদ্ধ হইয়াছে বলিয়া সৰ্ব্বধৰ্ম্ম মৰ্ম্মভাব অপূরিত, একারণ তাঁহাকে বলিতে বাধা হইতে হয়, যে, যে ধৰ্ম্ম সত্য অর্থাৎ যথার্থ বিষয় সমূহে পরিপূর্ণ, যে ধৰ্ম্ম সত্য অর্থাৎ নিত্যকাল অনন্তকাল বিদ্যমান ছিল, আছে ও থাকিবে, এবং যে ধৰ্ম্ম সত্য অর্থাৎ সত্য স্বরূপ পরমপিতার একমাত্র অভিপ্রেত, আমি সেই ধৰ্ম্ম অবলম্বন করিয়াছি। এক্ষণেবিবেচনা করিয়া দেখউল্লিখিত ধৰ্ম্মের কোনও একটী নাম হইতে পারে না। কিন্তু যেমন জগদীশ্বর নিরুপাধি হইলেও ভক্তগণতাঁহাকে নানাবিধ নামে আখ্যাইত করিয়াছেন তদ্রূপ উল্লিখিত ধৰ্ম্মেরও নানারূপ নামকরণ হইয়াছে। কিন্তু যতগুলি নাম জগতে প্রচালিত হইয়াছে কোনটাই ব্যাপক নহে, সকল গুলি ব্যাপ্য, কেবল “ব্রাহ্মধর্ম্ম” এই নামটী ব্যাপক, কিন্তু উক্ত নামটী ধর্ম্মের মর্ম্ম প্রকাশক না হইয়া কেবল ধৰ্ম্মানুষ্ঠানের লক্ষ্যার্থের প্রকাশক হইয়াছে, এজন্য ঐ নামটীকেও সৰ্ব্বাঙ্গ সম্পন্ন বলিয়া নির্দ্দেশ করা যায় না। মনে কর, একজন জিজ্ঞাসা করিলেন যে মহাভারতের রচয়িতা কে, ইহাতে যদি কেহবলে যে “পরাশরের পুত্র,” তবে উহা অসঙ্গত হইল না বটে, কিন্তু প্রণেতার প্রকৃত নাম জানা গেল না, কেবল তৎপরিবর্ত্তে তাঁহার একটী মাত্র বিষয়ের পরিচয় প্রাপ্ত হওয়া গেল। এইরূপ ব্রহ্মধৰ্ম্ম বলিলে বুঝা যায় যে উহা ঈশ্বরবাদপূর্ণ ধৰ্ম্ম, এই মাত্র, কিন্তু অত্যাবশ্যক পূর্বোক্ত ত্রিবিধ অর্থ বুঝায় না। এই সমস্ত পর্যালোচনা করিয়া পারলৌকিক মহাত্মারা এই বিশ্বব্যাপী-সৰ্ব্বধৰ্ম্ম গর্ভ সৰ্ব্বাপেক্ষা ব্যাপকতম “সত্যধর্ম্ম” এই নাম নির্দেশ করিয়াছেন। তাঁহারা বলেন, সংস্কৃত ভাষা পার্থিব সমস্ত ভাষা অপেক্ষা ব্যাপক বলিয়া ইহার, “সত্য” শব্দ যাদৃশ ভাব প্রকাশক, অন্য সমস্ত ভাষায় তাদৃশ ব্যাপক শব্দের প্রচলন নাই। তথাপি অংশতঃ যাহা আছে তাহা অবলম্বন করিলে পূৰ্ব্বে পূর্ব্বেও এইরূপ নামই প্রদত্ত হইয়াছিল যথা— খৃষ্ট প্রচারিত ধৰ্ম্ম ‘ট্রু রিলিজেন’’অর্থাৎ সত্যধৰ্ম্ম নামে বিখ্যাত। --ঈশ্বর গুরুনাথ।
এই স্থানে গুরুদেব "সত্য" শব্দ ব্যাপক বলিয়াছেন। অতএব কেবল ধর্ম্ম যুক্ত ছাড়া সত্য বলিতে ও লিখিতে কোনওটাই পারি না, তাহাতে প্রকাশ করিতে বাঁধা হইতে হয়। কেননা লিখিত আকারে সত্য ব্যাপক হইয়াও আমরা একক ভাবে কেহ যদি ধর্ম্ম শব্দ যুক্ত না করিয়া কেবল সত্য শব্দ বলিতে পারি কি? নিশ্চয়ই না। কেননা ধর্ম্ম কথার অর্থ পথ। কেহ যদি জিজ্ঞাসা করে আপনি ধর্ম্ম শব্দ না বলিয়া কেবল আপনি কোন ধর্ম্মাবলম্বী তাহা হইলে আপনি কি বলিতে পারিবেন শুধু সত্য নিশ্চয়ই না। অতএব আপনি সত্য অবলম্বী বলিতে হইবে।
সত্য-ধর্ম্ম যখন একক ভাবে লিখিতে হয় তখন "সত্য" ও "ধর্ম্ম" দুইটি শব্দ পৃথক্ অর্থাৎ সত্য অনন্ত ভাবে ব্যাপক এবং 'ধর্ম্ম' অর্থাৎ পথ, সুতরাং আমরা কোনভাবেই 'ধর্ম্ম' যুক্ত করিয়া ভাব প্রকাশে অসমর্থ হইয়া পড়ি, কিন্তু পৃথক্ ভাবে "সত্য" শব্দ বলিতে পারি না। অতএব প্রকাশ করা হইল "সত্যেষ্ট"।
সত্য-ধর্ম্ম যখন একক ভাবে লিখিতে হয় তখন "সত্য" ও "ধর্ম্ম" দুইটি শব্দ পৃথক্ অর্থাৎ সত্য অনন্ত ভাবে ব্যাপক এবং 'ধর্ম্ম' অর্থাৎ পথ, সুতরাং আমরা কোনভাবেই 'ধর্ম্ম' যুক্ত করিয়া ভাব প্রকাশে অসমর্থ হইয়া পড়ি, কিন্তু পৃথক্ ভাবে "সত্য" শব্দ বলিতে পারি না। অতএব প্রকাশ করা হইল "সত্যেষ্ট"।
সত্য+ইষ্ট= সত্যেষ্ট
সত্য = নিত্য
ইষ্ট = বহুর মধ্যে একের উৎকর্ষজ্ঞাপক, মন্ত্র দাতা গুরু, কবজ, উপাস্য ঈশ্বর, অভিপ্রেত, বান্ধব, যজ্ঞাদি কর্ম্ম, লাভ, সাধন, সিদ্ধি, দীক্ষা গুরু, সর্ব্বাপেক্ষা অধিক অভিলষিত, প্রশংসিত।
ব্যাকরণ:-
ইষ্ ধাতু
সন্ধি = সত্য - অ
ইষ্ট = ই
অকার কিংবা আকারের পরে ইকার কিংবা ঈকার থাকিলে উভয়ে মিলিয়া একার হয়। যথা-- মহা+ঈশ= মহেশ,
দেব+ইন্দ্রঃ= দেবেন্দ্রঃ।
আমরা বলিতে পারি সত্যেষ্ট। সত্যেষ্ট এর অর্থ "নিত্য বহুর মধ্যে একের উৎকর্ষজ্ঞাপক" ধর্ম্ম পালন করি।
- আদিষ্ট নিরুপম।
- আদিষ্ট নিরুপম।
