উপাসক নির্ণয়
বৈজ্ঞানিক যে পাঁচটি প্রশ্ন করিয়াছিলেন, তাহার উত্তর পূর্ব্ব অধ্যায়ে প্রদত্ত হইয়াছে। এক্ষণে তাঁহার আর একটি প্রশ্ন আছে। তাহার উত্তর এই তৃতীয় অধ্যায়ে প্রদান করা হইলেই চতুর্থ অধ্যায়ে উপাসনার সবিশেষ বিবরণ লিখিতে অবকাশ প্রাপ্ত হওয়া যাইবে। বৈজ্ঞানিকের সেই প্রশ্নটি এই, তুমি জগদীশ্বরের অস্তিত্ব প্রভৃতির সুচারু উত্তর দিয়াছ বটে, এবং তাঁহাকে উপাস্য বলিয়াও স্থির করিয়াছ বটে, কিন্তু কে উপাসনা করিবে? যদি বল, জীবই জগদীশ্বরের উপাসনা করিবে। তদুত্তরে বক্তব্য এই যে জীবাত্মার যে অস্তিত্ব আছে, তাহা কি প্রকারে জানিলে? যদি বল, চৈতন্যবান্ পদার্থের ন্যায় যখন জীবের ক্রিয়া লক্ষিত হইতেছে, তখন অবশ্যই স্বীকার করিতে হইবে যে, এই দেহের মধ্যে কোনও চেতন পদার্থ অবশ্যই আছে। ইহার প্রত্যুত্তরে বলা যাইতে পারে যে, চেতনের ক্রিয়ার ন্যায় ক্রিয়া দেখিলেই তাহাকে চেতন বলা যায় না। দেখ, ঘটিকা-যন্ত্রে কাটার গতি চেতনের ন্যায় হইতেছে। আর কোনও কোনও ঘড়ী একদিন পরে এবং কোনও কোনও ঘড়ী এক সপ্তাহ পরে কার্য্য শূন্য হয়। তদ্রূপ মানব-দেহেও ক্রিয়া দৃষ্ট হইতেছে, উহাদের মধ্যেও কোনও কোনও দেহের ক্রিয়া অল্পদিন পরেই রহিত হয়, এবং কোনও কোনও দেহের ক্রিয়া অপেক্ষাকৃত অধিকদিন পরে রহিত হইয়া থাকে। অতএব যদি ঘড়ীর চৈতন্য স্বীকার না কর তবে মানবের চৈতন্যের প্রমাণ কি? যদি বল, ঘড়ীর চেতনবৎ ক্রিয়া মানবের চেষ্টায় যে হইতেছে, তাহা ত প্রত্যক্ষই হইতেছে, কিন্ত মানব-দেহের ঐরূপ ক্রিয়া অন্য দ্বারা ত হইতেছে না। তবে উভয়ের সাদৃশ্য কিরূপে হইবে? ইহার উত্তরে বলা যায় যে, মানব-দেহের ঐরূপ ক্রিয়া জগদীশ্বর দ্বারাই হইয়াছে। সুতরাং সাদৃশ্যের বাধা কি? যাহা হউক, অগ্রে উপাসক জীবাত্মার অস্তিত্ব নির্ণয় করা কর্তব্য।
তত্ত্বজ্ঞান প্রথম খন্ড উপাসনা
--- ঈশ্বর গুরুনাথ সেনগুপ্ত।
0 মন্তব্যসমূহ