ভাষার মাধ্যমে আমরা মনের ভাব প্রকাশ করি। আমরা যাতে মনের ভাব প্রকাশ করতে পারি সেই উদ্দেশ্যেই শব্দের উৎপত্তি হয়েছে। অন্যান্য প্রাণীরাও শব্দের মাধ্যমে তাদের মনের ভাব প্রকাশ করে। বাক্যে সত্যকে অবলম্বন করতে পারাই মনুষ্যত্ব। যদি আমাদের মনে অর্থাৎ অন্তর আত্মায় সত্য, বাক্যে অর্থাৎ ভাষায় সত্য এবং কায়ে অর্থাৎ আমাদের কর্মের মধ্য দিয়েও যদি সত্য নিষ্ঠা পালন করতে পারি তবেই আমাদের মানবিকতা বোধ তৈরি হবে। সত্য মানবিকতার পরিচয় বহন করে।
চিন্তা চেতনা, ভাষা এবং কর্ম দ্বারা যখন আমরা সত্যকে অনুসরণ করতে ব্যর্থ হই ঠিক তখনই আমাদের মধ্যে পাশবিকতার বৈশিষ্ট্যগুলো প্রকাশ পায় যাদের তাড়নায় বিভিন্ন অন্যায় কার্য সংঘটিত হয়। পৃথিবীতে যত প্রকার অন্যায় কার্য আছে সবই আমাদের পাশবিক প্রবৃত্তির জন্য ঘটে থাকে।
আমাদের শরীরের গঠনগত বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী ভাষায় উচ্চারণ যদি সঠিক অর্থাৎ সত্য না হয় তাহলে আমাদের আত্মার চৈতন্যশক্তি চেতনাবোধ জাগ্রত হয় না। শরীরের তন্ত্র অনুযায়ী যে উচ্চারণ হওয়া উচিত সেটা যদি আমরা না করতে পারি তাহলে কায়ে, মনে, বাক্যে সত্য রক্ষা হবে না। আমাদের অন্তরে এবং বহির্জগতের সর্বত্র যে ঈশ্বর বিরাজমান এই সত্য উপলব্ধি করার জন্য আমাদের জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে সত্যের নিয়মে চলতে হবে। ঈশ্বর কথার অর্থ গুণ। অনন্ত অনন্ত অনন্ত গুণের মধ্যে আমরা রয়েছি আবার আমরা গুণের দ্বারা সৃষ্টি হয়েছি,সেই গুণের উৎপত্তি,কার্য, বিস্তৃতি, গুণ অর্জনের উপায় জানার পদ্ধতি অনুশীলন করাই বেঁচে থাকার উদ্দেশ্য যা আমাদের আত্মাকে সতেজ করবে। জন্ম জন্ম ধরে গুণের অভাবে আমাদের আত্মা নিস্তেজ হয়ে থাকে।এর প্রমাণ পারিপার্শ্বিক পরিস্থিতি। জঘন্য থেকে জঘন্যতম অন্যায় করার পরও অনেকের পাপবোধ থাকে না। কতটা পাপের আস্তরণ পড়লে এটা হতে পারে ভাবলে অবাক হতে হয়। পাপ করাটাও অভ্যাসে পরিণত হয়।আমরা যেমন অভ্যাস তৈরি করব আত্মা সেই কার্যের অভ্যস্ত হবে এবং পারদর্শী হবে। এর প্রমাণ হিসেবে বলতে হয় যে কিছু ব্যক্তি থাকেন যারা খুব অল্প বয়সেই পার্থিব উন্নতি করতে সমর্থ হয় অনেকে আবার শেষ অবধিও বিশেষ কিছু করে উঠতে পারে না, পূর্ব্ব জন্মের সুকৃতির ফলে এটা সম্ভব হয়।
এমন অনেক উদাহরণ আছে যে শব্দগুলো লেখা হয় একরকম কিন্তু উচ্চারণ করা হয় আরেক রকম। তখন সেই ভাষার সত্যতা বিঘ্নিত হয়। যেমন - লেখা হয় 'হৃদয়পুর' কিন্তু বিকৃত উচ্চারণে বলে 'রিদয়পুর', লেখা হয় 'পদ্ম', বলা হচ্ছে 'পদ্দ' ইত্যাদি। আমাদের মোট তিন প্রকার ব্যাধি আছে- (মানসিক, শারীরিক এবং আধ্যাত্মিক)। ভাষার সঠিক উচ্চারণ না করতে পারলে আমরা এই তিন প্রকার রোগ থেকে মুক্ত হতে পারব না। অষ্টপাশ ষড়রিপুকে দমন করতে হলে ভাষার উচ্চারণ সঠিক হতে হবে। এ বিষয়ে সংস্কার হচ্ছে না বলেই শিক্ষার মূল উদ্দেশ্য ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। অজ্ঞানতার কারনে অগনিত পাপ হতে থাকছে। জ্ঞান অর্জনের জন্য যে একাগ্রতা প্রয়োজন হয় ভাষার সঠিক উচ্চারণ না হলে সেই একাগ্রতা তৈরি হয় না কারন আমাদের শরীর এবং মন আন্তঃ সম্পর্কযুক্ত । কানে শোনার পর হৃদয়কে স্পর্শ করে, মস্তিষ্কের কার্য হয়। আমরা যারা নিজেদের শিক্ষিত বলে দাবি করছি তাদের প্রত্যেকের এবিষয়ে সচেতন হওয়া প্রয়োজন।
0 মন্তব্যসমূহ