যাদের ধর্মীয় বিশ্বাস কল্পনাপ্রসূত, যারা কল্পনাকে ধর্ম বলে মনে করে, তারা মিথ্যা ও অধঃপতনের জগতে বাস করছে। যে ধর্মে সত্য ও বিজ্ঞান নেই, তা নরকের দ্বার ছাড়া আর কিছুই নয় — সেটাকে ধর্ম বলা যায় না, কিংবা গ্রহণ করার মতো কিছু নয়। ধর্মের প্রকৃত উদ্দেশ্য গুণ অর্জন করা। সত্যকে অবলম্বন করা গুণের কাজ, আর মানুষ জন্মের প্রধান লক্ষ্য গুণ অর্জন।
আমরা অষ্টপাশ ও ষড়রিপু (কাম, ক্রোধ, লোভ, মোহ, মদ, মাৎসর্য) নিয়ে জন্মগ্রহণ করি — কিন্তু আমাদের স্বাধীন ইচ্ছাশক্তি দেওয়া হয়েছে: ভালো-মন্দ গ্রহণ করার স্বাধীনতা। কিন্তু যদি কোনো ধর্মই হিংসা ও বিদ্বেষ শেখায়, তাহলে সেটা আর ধর্ম নয়, নরকের কাজ। ধর্মের আসল কাজ মানুষের চরিত্র সুন্দর ও মার্জিত করা — কিন্তু আজকের সমাজে সেই কাজ কোথায়?
আমরা এই পাশবিক প্রবৃত্তিগুলি আমাদের কল্যাণের জন্য পেয়েছি, কিন্তু কেউ আমাদের শেখায় না কীভাবে সেগুলোকে কল্যাণের জন্য ব্যবহার করতে হয়। পৃথিবীতে যত ধর্মের মত প্রচলিত আছে, তার প্রায় সবই সাকার ধারণায় (আকৃতিসম্পন্ন ধারণা) আবদ্ধ। আমরা পঞ্চভূত (ক্ষিতি, অপ, তেজ, মরুত, ব্যোম) দ্বারা গঠিত — আর যখন আমরা এই দেহ ত্যাগ করি, তখন এই পঞ্চভূত দেহ আর থাকে না। তাহলে কেন ধর্মের নামে এত অবৈজ্ঞানিক মিথ্যা শেখানো হয়?
কেন বলা হয় যে অবিশ্বাসীকে হত্যা করলে স্বর্গে গমন করা যায়, বা পাথরের মূর্তি চুম্বন করলে জান্নাতে যাওয়া যায়? এগুলি সবই সাকার ধারণার ভিত্তিতে সৃষ্টি করা হয়েছে, যা কল্পনাপ্রসূত এবং অমূলক।
কিছু ধর্মে বলা হয় যে পাপের শাস্তি হিসেবে নরকে আগুনে পোড়ানো হবে, বা ছিন্নভিন্ন করে কেটে যন্ত্রণা দেওয়া হবে — কিন্তু এই ধারণাও অবৈজ্ঞানিক, কারণ দেহ ছেড়ে গেলে পাঁচ ইন্দ্রিয়ও শেষ হয়ে যায়, তখন শারীরিক যন্ত্রণা অনুভব করার উপায় থাকে না। এই শাস্তির কল্পনাগুলি শুধু অজ্ঞতার কারণে সৃষ্টি হয়েছে, কারণ মানুষ সাকার ভাবনায় আবদ্ধ।
আত্মার প্রকৃত যন্ত্রণা গুণের অভাব থেকে আসে। গুণই আত্মার খাদ্য, আর যখন আত্মা গুণ অর্জন করতে ব্যর্থ হয়, তখন অসহ্য যন্ত্রণা অনুভব করে। এই আধ্যাত্মিক যন্ত্রণা বোঝানোর জন্য মানুষ সাকার (আকৃতিসম্পন্ন) উদাহরণ ব্যবহার করে, কারণ অজ্ঞতা তাদের এই স্থূল ভাবনায় আবদ্ধ রেখেছে।
অজ্ঞতাই পাপের মূল কারণ — তাই জ্ঞান অর্জনের মাধ্যমে সত্যকে প্রতিষ্ঠা করা মানবজীবনের প্রধান দায়িত্ব। কিন্তু ধর্মের নামে চারদিকে অন্ধবিশ্বাস প্রচার করা হচ্ছে। এই বিশ্বব্রহ্মাণ্ড গুণের সমষ্টি, আর আমরা তারই অংশ।
আমরা যা কিছু পাঁচটি ইন্দ্রিয় (চক্ষু, কর্ণ, নাসিকা, জিহ্বা, ত্বক) দ্বারা অনুভব করি, তা সবই সাকার। মাটি, জল, আগুন, বায়ু, আকাশ — এগুলি আমরা ইন্দ্রিয়ের মাধ্যমে অনুভব করি, তাই এগুলিও সাকার।
এই সাকার অবস্থার মধ্যেও স্থূল ও সূক্ষ্ম অবস্থা রয়েছে। যেমন:
বায়ুকে আমরা স্পর্শের মাধ্যমে অনুভব করতে পারি, কিন্তু চোখে দেখতে পাই না।
আকাশকে আমরা দেখতে পাই, কিন্তু স্পর্শ করতে পারি না।
এই স্থূল ও সূক্ষ্ম অবস্থার মধ্যেও সবই সাকার। যেহেতু মানুষ এই সাকার ভাবনা থেকে বেরোতে পারে না, তারা কল্পনার জগতে নানা রূপকল্পনা তৈরি করে এবং সেগুলোকেই ধর্মের রূপ দেয়।
এই পঞ্চভূতের দেহের মধ্যে আত্মা অবস্থান করে — আর আত্মা হল গুণের আধার। আত্মার কার্য চৈতন্যশক্তি। আত্মার খাদ্য গুণ, যা জ্ঞান ও গুণের চর্চার মাধ্যমে অর্জিত হয়।
তাই মানবজন্মের মূল উদ্দেশ্য গুণ অর্জন। পার্থিব বিদ্যার (অপরা বিদ্যা) মাধ্যমে আধ্যাত্মিক জ্ঞান (পরা বিদ্যা) অর্জন করতে হবে — কারণ শুধুমাত্র প্রকৃত জ্ঞানের মাধ্যমেই আত্মা তার চূড়ান্ত পূর্ণতা লাভ করতে পারে।
0 মন্তব্যসমূহ