বিশ্বাসেই আর্শীবাদের ফল প্রাপ্তি ঘটে।




    একদা মহাত্মা নিবারণ  লিখিতেছেন— গুরুদেব কে প্রণাম করিবার সময় বিনোদবাবু গুরুদেবকে বলিলেন — “পূর্ণযেন এবার বৃত্তি পায়— এরুপ আশীর্ব্বাদ করুন।” গুরুদেব‌ও সেইরূপ আশীর্ব্বাদ করিলেন। বিনোদবাবুর কেমন দৃঢ় বিশ্বাস, গুরুদেব যদি আশীর্বাদ করেন, তবে তাহা নিষ্ফল হ‌ইতেই পারেনা। পূর্ণের সেবার মাইনর পরীক্ষা দিবার কথা। গোয়ালগ্রামের স্কুল তখন‌ও affiliated হয় নাই। কাজেই বৃত্তি পরীক্ষা দিবার বিষয়‌ও তখন পর্য্যন্ত কিছুই স্থির ছিল না। 



 ইহার পর district inspector মহাশয় একবার বিদ্যালয় পরিদর্শনে আসিয়াছিলেন। তখন পূর্ণকে পরীক্ষা করিয়া সন্তুষ্ট ও হ‌ইয়াছিলেন পরীক্ষার দিন আসিয়া পড়িল, অথচ স্কুলের না হ‌ইলে affiliation, না আসিল D.I. – এর মনোনয়ন। কাজেই পূর্ণের পরীক্ষা দেওয়া অসম্ভব মনে হ‌ইল। কিন্তু বিনোদ বাবুর কি অগাধ বিশ্বাস! গুরুদেব যখন বলিয়াছেন তখন পূর্ণের পরীক্ষা হ‌ইবেই। তাই তিনি আমাকে অবাধে বলিলেন— “পূর্ণকে ল‌ইয়া ফরিদপুর যাইতে। পরীক্ষার পূর্ব্বের দিন ফরিদপুর যাইতে। 



 পরীক্ষার পূর্ব্বের দিন ফরিদপুর পৌছিয়া D.I এর সঙ্গে দেখা করিলাম। তিনি বলিলেন,— “অন্যত্র ভাল ছাত্র পাওয়ায় নির্দ্দিষ্ট ১২টি ছাত্রের নির্ব্বাচন হ‌ইয়া গিয়াছে। কাজেই গোয়াল গ্রামের ছাত্রের মনোনয়ন হয় নাই। এই মর্ম্মে আমাদের স্কুলে একটা চিঠিও দিয়াছিলেন। ভাগ্য ক্রমে সেই চিঠি আমরা পাই নাই। আমি পূর্ণের জন্য তথাপি কোনমতে পরীক্ষা দিবার অনুমতি প্রার্থনা করিলে তিনি অনেক ভাবিয়া বলিলেন,—” কাল পরীক্ষার সময়ে ছেলেটিকে ল‌ইয় উপস্থিত হ‌ইবেন। যদি কোন ছাত্র অনুপস্থিত হয়, তবে সেই স্থানে পরীক্ষা দিতে পারিবে। যথা সময়ে উপস্থিত হ‌ইয়াছি। 



 সময় চলিয়া যাইতেছে। খবর ল‌ইয়া জানিলাম, ‌দু‌ইটি ছেলে অনুপস্থিত। D.I. বলিলেন,—“আধ ঘন্টা পর্য্যন্ত দেখিতে হ‌ইবে। যদি তারা আসে।” পরে দেখিলাম, একটি ছেলে আসিয়া পড়িল। মনে মনে আশঙ্কা করিতেছিলাম, দ্বিতীয় ছেলেটিও বুঝি আসিয়া পড়ে। এদিকে সময় প্রায় উর্ত্তীর্ণ হ‌ইয়াছে, কিন্তু D.I. সাহেবের আর এদিকে লক্ষ্য আছে বলিয়া মনে হ‌ইতেছিল না। তিনি জিলা স্কুলের হেডমাস্টার মহাশয়ের সঙ্গে আলোচনায় ঘরের মধ্যে খুব মগ্ন ছিলেন। এমন সময় হেডমাস্টার মহাশয় একটু বাহিরে আসিলে আমি তাহাকে পূর্ণের কথা বলিলাম। তিনি D.I. কে তখন‌ই জানাইলে D.I. যে স্থানে খালি ছিল, সেখানে পূর্ণকে পরীক্ষা দিবার অনুমতি দিলেন। 



 পরে আমি D.I সাহেবের সঙ্গে অফিসে গিয়ে পরীক্ষা সংক্রান্ত ফি (fee), দরখাস্ত ইত্যাদির ব্যবস্থা করি। এই অবস্থায় পূর্ণের পরীক্ষা হ‌ইয়া গেল। পরে পরীক্ষার ফল বাহির হ‌ইল। কিন্তু পূর্ণ বৃত্তি পায় নাই— সংবাদ আসিল। মনে কষ্ট হ‌ইল। এত অসম্ভব সম্ভব হ‌ইল যে মহাপুরুষের আশীর্ব্বাদে, শেষে তাহা নিষ্ফল হ‌ইবে ! কিন্তু কি আশ্চর্য্য মহিমা ! পরে সংবাদ আসিল, পূর্ণ বৃত্তি পা‌ইয়াছে। সেই বারেই প্রথম Backward class এর জন্য একটি Special বৃত্তি নির্ধারিত হয়, আর তাহাদের মধ্যে পূর্ণ প্রথম হ‌ওয়ায় বৃত্তি পাইল। ইহা বাক্ সিদ্ধ মহাপুরুষের আশীর্ব্বাদের ফল। প্রকৃত বিশ্বাসী ভক্তের নিকট গুরুদেবের আশীর্ব্বাদ যথাযথভাবে প্রতিফলিত হয়।

                                — মহাত্মা নিবারণ।।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ