জপ কয় প্রকার ? শ্রেষ্ঠ জপ কি?


   জপ

     জপ ধাতুর অর্থ হচ্ছে হৃদয়ে স্মরণ; কিন্তু "জপ" শব্দ মন্ত্রাদির পুনঃ পুনঃ স্মরণার্থেই ব্যাবহৃত। জপের নামান্তর জাপ। এই জপ প্রথমতঃ মানস ও চৈষ্টিক-ভেদে দ্বিবিধ। চেষ্টা অর্থাৎ কায়িক-ব্যাপার-সংশ্রব-ঢবিরহিতভাবে যে মন্ত্রাদির পুনঃ পুনঃ স্মরণ, তাহাকে মানস জপ কহে। মানস-জপ কালে অঙ্গ- সঞ্চালন করিতে হয় না; এমন কি ওষ্ঠাধার-কম্পনের নিবৃত্ত থাকিতে হয়। দ্বিতীয় প্রকার চৈষ্টিক; -- যাহা চেষ্টাসাধ্য অর্থাৎ, যে জপ-সম্পাদন ওষ্ঠাধর রসনাদির পরিচালনা দ্বারা করিতে হয়, তাহাকে চৈষ্টিক কহে।


      এই চৈষ্টিক জপ আবার দ্বিবিধ। যথা- শ্রব্য-স্বন ও অশ্রব্য-স্বন। যে চৈষ্টিক-জপ কালে বীজাদির পুনঃ পুনঃ উচ্চারণ- জনিত শব্দ শুনা যায়, তাহাকে শ্রব্য স্বপ্ন জপ কহে। আর যে চৈষ্টিক জপ সময়ে পুনঃ পুনঃ উচ্চারণ-জনিত শব্দ শুনা যায় না, তাহাকে অশ্রব্য-স্বন জপ কহে।


        সংখ্যাত ও অসখ্যাত-ভেদে উক্ত ত্রিবিধ অর্থাৎ মানস, চৈষ্টিক শ্রব্য-স্বন ও চৈষ্টিক অশ্রব্য-স্বন জপ, প্রত্যেকে দুই প্রকার। কি মানস জপ, কি চৈষ্টিক শ্রব্য-স্বন জপ, কি চৈষ্টিক অশ্রব্য-স্বন জপ, ইহাদের যে কোন প্রকার জপই যদি সংখ্যানুসারে সম্পাদিত হয়, অর্থাৎ কোনো নির্দিষ্ট-সংখ্যক বার জপ করা হয়, তবে ঐ জপকে সংখ্যাত জপ কহে। 


এই জপের সময়ে নির্দ্দিষ্ট সংখ্যা পূর্ণ হইল কিনা, জানিবার জন্য অঙ্গুলিতে, বা মালাতে, অথবা অন্য কোন প্রকার পদার্থে সংখ্যা রাখা আবশ্যক হয়। কিন্তু অসংখ্যাত জপে পূর্ব্ববৎ জপ-ক্রিয়া সমাহিত হইলেও সংখ্যা রাখিবার জন্য কোনও রূপ চেষ্টা করিতে হয় না। নিরন্তর বীজ উচ্চারণ করিতে হয়।


এই অসংখ্যাত জপ করিবার সময়ে কোনও কোনও জাপক এরূপভাবে বীজ উচ্চারণ করিতে থাকেন যে, যতক্ষণ ক্লান্তিবশতঃ একেবারে শব্দোচ্চারণে আশক্ত না হন, ততক্ষণ পর্যন্ত ক্রমাগত বীজ উচ্চারণ করেন। এই রূপ জপের একটি প্রধান গুণ এই যে, ইহাতে সংখ্যা রাখিবার জন্য অণুমাত্র সময় ও অন্যমনস্ক হইতে হয় না। ক্রমাগত উচ্চারণে,মন: সহজেই পরম পুরুষের প্রতি যাইয়া থাকে। এইরূপ জপ মুসলমান ফকিরদিগের মধ্যে অনেকেই করিয়া থাকেন। ইহা 'স্বর-সাধনা' শব্দেও উল্লিখিত হইয়া থাকে।


        কোনও কোনও সাধক যাবতীয় জপকে মানস, উপাংশু ও ব্যাক্ত এই ত্রিবিধ ভাগে বিভক্ত বলিয়া নির্দেশ করেন।জপ-কালে যদি উচ্চার্য্যমাণ মন্ত্রাদির শব্দ শ্রুতিগোচর হয় তবে তাহাকে ব্যাক্ত জপ বলে। আর উচ্চার্য্যমাণ মন্ত্রাদির শব্দ শ্রুতিগোচর না হইলেও উচ্চরণ-জন্য ওষ্ঠাধরের যে কম্পন লক্ষিত হয়, তাহাকে উপাংশু জপ কহে। এতদ্ব্যতীত যে জপ কেবল মনে মনেই সম্পন্ন হয়, জাপার্থে বাহ্যদেহ স্পন্দনের প্রয়োজন হয় না, তাহাকে মানস জপ কহে।


      সংখ্যাত জপ করিবার জন্য মালা অবলম্বন করিলে, দক্ষিণ হস্তস্থিত মালায় ১০০ শত সংখ্যা মালা রাখা আবশ্যক।এক একবার জপের পরে একটি মালা চালাইতে হয়, এইরূপে উক্ত শত মালার সমূদায় গুলি একবার চালিত হইলে বাম হস্তস্থিত মালার একটী সরাইয়া দিতে হয়। সুতরাং বামহস্তের দশটী মালা চালিত হইলে সহস্র বার এবং শত মালা চালিত হইলে দশ সহশ্র বার জপ করা হইয়াছে, জানা যায়।


       হস্তাঙ্গুলির পর্ব্ব অবলম্বন করিয়া জপ করিতে হইলে, দক্ষিণ হস্তের বৃদ্ধাঙ্গুষ্ঠ দ্বারা অন্যান্য অঙ্গুলির পূর্ব্বে জপ সংখ্যা রাখিতে হয়। তর্জ্জনী, মধ্যমা, অনামিকা ও কণিষ্ঠায় যে তিন তিনটী পর্ব্ব আছে, উহাদের সর্ব্ব নিম্নটীকে প্রথম, তৎপরটীকে দ্বিতীয় বা মধ্যম এবং সর্ব্বোচ্চটীকে উত্তম বা তৃতীয় বলা যাইবে, ইহা মনে রাখিতে হইবে। ক্রমান্বয়ে অনামিকার দ্বিতীয় 


 ও প্রথম পর্ব্ব ; কনিষ্ঠার প্রথম,  দ্বিতীয় ও তৃতীয় পর্ব্ব ; অনামিকার তৃতীয় পর্ব্ব ; মধ্যমার তৃতীয় পর্ব্ব ; তর্জ্জনীর তৃতীয়, দ্বীতীয় ও প্রথম পর্ব্ব-- এই দশ স্থানে একবার জপ করা হইলে পূর্ব্বোক্তরূপে বামহস্তে একবার জপসূচক অঙ্গুলি চালনা ঐরূপে করিবে। এইরূপে যখন বাম হস্তে পূর্ব্বোক্ত দশ স্থান অতিক্রান্ত হইবে, তখন একশত বার জপ করা হইবে।


       কেহ কেহ সপ্তম স্থান মধ্যমার তৃতীয় পর্ব্বের পরে উহার দ্বিতীয় ও প্রথম পর্ব্ব এবং শেষে তর্জ্জনীর প্রথম পর্ব্বে জপ করিয়া দশবার পূর্ণ করেন। এবং ঐ নিয়মে বাম হস্তেও জপ সংখ্যা রাখিয়া থাকেন। সাকার উপাসকদিগের মতে প্রথম প্রকার জপ দেবমন্ত্রের এবং শেষ প্রকার দেবদেবীর জন্য নির্দ্ধারিত। কিন্তু ব্রহ্মমন্ত্রের উপাসকগণ প্রথম প্রকারেই জপ কার্য্য করিয়া থাকেন।


      যখন সাধক স্তোত্র-পাঠ ও সঙ্গীত করিতে করিতে ক্লান্ত হইয়া পড়েন, অথবা শারীরিক অসুখ জন্য উক্ত উভয়ের অন্যতর সম্পাদনে আশক্ত হন তখন জপই প্রধান অবলম্বন হয়। ধ্যানাবস্থায় অসংখ্যত মানস জপই প্রশস্ত। ধ্যানে নিমগ্ন হইতে না পারিলে সংখ্যাত জপ করাই কর্ত্তব্য। বিশেষতঃ তৎকালে উপাংশু বা ব্যাক্ত জপ বিধেয়। জপও এক প্রকার গুণকীর্ত্তন-সক্রান্ত যাবতীয় অঙ্গ ও ফল জপ-সম্বন্ধেও জানিবে।


       নিবিড় অন্ধকারাচ্ছন্ন স্থানে উপবেশন-পূর্ব্বক নিমীলিত- নেত্রে ধ্যান করিতে আরম্ভ করিলেন প্রথমে ঘোরতর অন্ধকারই লক্ষিত হয়। পরে আত্মার কিঞ্চিত উন্নতি হইলে ঐঅন্ধকার বিরল-ভাবাপন্ন হয়। তৎপরে মূর্ত্তি দর্শণ হইতে থাকে মূর্ত্তি দর্শন কালে কখনও ঐ মূর্ত্তি অল্পকালের জন্য এবং কখনও বা দীর্ঘকালের নিমিত্ত লক্ষিত হইয়া থাকে। ইহার পরে দেবগণের জ্যোতিঃ দৃষ্টিগোচর হয়। "দেবগণ" শব্দে ইহলোকস্থ মুক্তপুরুষ ও পরলোকগত উন্নত মহাত্মাগণ বুঝিবে। অতঃপর দেবগণের দর্শনলাভ এবং তৎপরে দেবগণের সহিত কথোপকথন সম্পন্ন হয়।


       এইরূপ অবস্থার উন্নতি যেমন প্রেম, ভক্তি, একাগ্রতা প্রভৃতি গুণের উন্ননতি-সাপেক্ষ, তদ্রূপ প্রকৃত ও প্রকৃতভাবে প্রাপ্ত বীজ-বিশেষের প্রকৃত উচ্চারণ-সাপেক্ষ। অর্থাৎ যদি তুমি সৌভাগ্যবশতঃ প্রকৃত দীক্ষা-বীজ প্রকৃত গুরুর নিকট প্রপ্ত হইয়া তাঁহার প্রকৃত উচ্চারণে সমর্থ হও, তবেই অত্যল্পকালের মধ্যে ঐ সকল অবস্থা প্রাপ্ত হইতে পার। 

দূর্ভাগ্যক্রমে এদেশে যে সকল দীক্ষা বীজ প্রদত্ত হয়, তৎসমুদয় অপ্রকৃত না হইলেও অসম্পূর্ণ ও প্রায়শঃ অনুপযুক্ত। এই বিষয়টী স্পষ্টরূপে দৃষ্টান্ত দ্বারা বুঝান যাইতেছে। মনে কর, এতদ্দেশীয় কোনও গুরু তোমাকে 'ঐঁ' এই বীজ দিলেন। 'ঐঁ' বলিয়া একটী বীজ আছে, সুতরাং উহা অপ্রকৃত নহে। কিন্তু সকলের পক্ষে এক বীজ উপযোগী নহে। এমনকি যে বীজে পিতা দীক্ষিত,পুত্র সে বীজ যে পাইতেই পারিবে, এরূপ নহে। গুণ-অনুসারে অভাব-অনুসারে, ভিন্ন ভিন্ন বীজ-লাভের যোগ্য। 


সুতরাং এক বীজে ভিন্ন ভিন্ন অবস্থাপন্ন মানবিক দীক্ষিত হইলে, ঐ বীজ তাহাদিগের পক্ষে প্রায়শঃ উপযুক্ত হয় না। কিন্তু এদেশে এক বীজে এক এক বংশীয়দিগের দীক্ষা-দানের নিয়ম আছে। অপর, এদেশে যে সকল দীক্ষা-বীজ প্রদত্ত হয়, তৎসমুদয়ই অসম্পূর্ণ, কারণ উহা প্রণব-পুটিত নহে। প্রণব-পুটিত না হইলে যে কিরূপ অনিষ্ট হয় তাহা "গুরু তত্ত্বে" বিবৃত হইয়াছে।


       এইত গেল দীক্ষা-বীজের কথা। আবার দীক্ষা-দাতা যাদৃশ গুণসম্পন্ন হওয়া আবশ্যক, বর্ত্তমান সময়ে প্রায়ই গুরুতা - ব্যবসায়ীদিগের মধ্যে তাদৃশ গুণসম্পন্ন লোক পাওয়া যায় না। আরও একটী অভাব যে, গুরুতা- ব্যাবসায়ীদিগের মধ্যে প্রায়ই বীজাদির উচ্চারণ-জ্ঞান- সম্পন্ন লোক দেখিতে পাওয়া যায় না।   

সুতরাং শিষ্যগণ বীজমন্ত্রের প্রকৃত উচ্চারণে অনভিজ্ঞ থাকে। এই সকল কারণে, ও অন্যন্য বহুবিধ হেতুবশতঃ,  বর্ত্তমান সময়ে বহু দীক্ষিত ব্যক্তিও উপাসনা-জনিত আত্মোন্নতি-লাভে সমর্থ হইতেছে না। প্রকৃতভাবে দীক্ষা-বীজ প্রাপ্ত হইলে এবং প্রকৃত গুরুর নিকটে উপদেশ পাইলে একমাসে যে সকল ফললাভ হয়, উহারা বহু বৎসর কার্য্য করিয়াও তাহার কিছুই প্রপ্ত হন না। এস্থলে বক্তব্য এই যে, প্রকৃত গুরুর লক্ষণদি "গুরু তত্ত্ব" নামক গ্রন্থে বর্ণিত হইয়াছে। এজন্য এস্থলে আর তাহা উল্লিখিত হইল না।


     দেবগণের জ্যোতিদর্শন সময় হইতে সাধক পরমানন্দ লাভ করিতে আরম্ভ করেন। ঐ জ্যোতিদর্শনের পরে দেবদর্শন হয়, এবং তৎপরেই দেবগণের সহিত কথোপকথন হইয়া থাকে। কেহ কেহ বলেন যে, ঐ তেজঃ গাঢ় হইয়াই দেবমূর্ত্তিরূপে পরিণত হয় ( অপশ্যৎ তেজসোগাঢ়াৎ স্বেষ্টবিম্বং সনির্ম্মলম্।) কিন্ত অপর সাধকগণ তাহা স্বীকার করেন না। 


 তাঁহারা বলেন যে, সূর্য্য-দর্শনের পূর্ব্বে যেমন তদীয় জ্যোতিঃ নেত্রগোচর হয়, তদ্রূপ দেব-দর্শনের পূর্ব্বেই দেবজ্যোতিঃ দৃষ্ট হইয়া থাকে।প্রকৃত পক্ষে দেবগণের দর্শনকালে তাহাদিগের জ্যোতিস্থায়ী মূর্ত্তিই লক্ষিত হইয়া থাকে। সবিশেষ কারণবশতঃ কখনও কখনও ইহার ব্যতিক্রম হইয়া থাকে। মনে কর, যে সাধক দ্রষ্টা, সমাগত দেব যদি তদপেক্ষা সমুন্নত না হন, তবে তাঁহাকে তাদৃশ জ্যোতিঃসম্পন্ন দেখা যায় না। 


 অথবা যদি ব্রহ্মদর্শন-সময়ে দেবগণ উপস্থিত থাকেন, তখনও তাহাদিগকে তেজোময় দেখিতে পাওয়া যায় না। যেমন সূর্য্যোদয়ে গ্রহনক্ষত্রাদি দৃষ্টিগোচর হয় না, চন্দ্র অতি সন্নিহিত বলিয়া কখনও কখনও দৃষ্টিগোচর হইলেও, তেজঃশূন্যভাবে নারীক্ষিত হয়, তদ্রূপ, পরম জ্যোতির্ম্ময় পরমপিতা পরব্রহ্মের দর্শণকালে কোনও মহাত্মাকেই জ্যোতির্ম্ময় দেখিতে পাওয়া যায় না। 


      দেবগণের সহিত কথোপকথন পরমানন্দদায়ক বটে, কিন্তু উহাই জীবনের শেষ উদ্দেশ্য নহে। যাঁহারা এই অবস্থায়ই পরিতৃপ্ত থাকেন, তাঁহারা বিভূতি-বিমোহিত-সাধকের ন্যায় আর উন্নতিলাভে সমর্থ হন না। প্রকৃতপক্ষে এই সময়ে উক্ত অবস্থায় একেবারে আনন্দে অধীর না হইয়া সাধনা করা অত্যাবশ্যক। 


 সাধনা ও উপাসনা দ্বারা প্রথমে সর্ব্বতঃ জগদ্বীশ্বরের সত্তায় দৃঢ়প্রতীতির উৎপাদন এবং তাঁহার প্রতি প্রেমভাবের জনন সম্পন্ন হইলেই মানবজন্মের সফলতা সম্পাদিত হয়। অনন্তর প্রেম, ভক্তি, একাগ্রতা, অভেদ-জ্ঞান প্রভৃতির উন্নতিসহকারে ব্রহ্মতেজোদর্শন হইলে জীবভাবের লয় হয় এবং দেহী পরমাত্মত্ব প্রাপ্ত হয়। কিন্তু কখনও অংশের পূর্ণতা হয় না। এই সময়েই উপাসনা ও সাধনা-প্রভাবে পাশ মুক্তি হয়। 


অনন্তর ব্রহ্ম-দর্শন হইলে গুণবিশেষে একত্ব-প্রাপ্তি হয়। ইহার পরে নিত্য ব্রহ্মদর্শন-লাভ হয়। কিন্তু তখনও সাধকের পর্ণত্ব  হয় না, এবং এই পূর্ণত্ব যে কোনও কালে স্বপ্রযত্নে সম্পন্ন হইতে পারে, এরূপও বোধ হয় না। কারণ, যে সাধক, যে গুণ-প্রভাবে ব্রহ্মদর্শন-লাভ করেন, সেই সাধক সেই গুণে একত্বপ্রাপ্ত বলিয়া কথিত হন। গুণের সংখ্যার সীমা নাই,-- উহা অনন্ত।আবার, পরব্রহ্ম অনন্ত একত্বের একত্ব স্বরূপ। সুতরাং স্বপ্রযত্নে কেহই কখনও অনন্ত একত্বের যে পরম মহিষ্ঠ একত্ব অর্থাৎ পূর্ণ পূর্ণত্ব পাইতে পারে না।


       কিন্তু সাধকগণও ত অন্য নহেন, তাঁহারাও পরব্রহ্মের অংশ, সুতরাং ঐ অংশ সাধনা ও উপাসনা-প্রভাবে ক্রমশঃ পূর্ণত্বের দিকে ধাবিত হয়। এবং ত্রিবিধ অভেদ-জ্ঞানের মধ্যে জগদীশ্বরের প্রতি উত্তমর্ণ অভেদজ্ঞানের অসাধ্যতা এবং সমর্ণ অভেদজ্ঞানের একান্ত অসাধ্যতাপ্রযুক্ত অধমর্ণ অভেদ-জ্ঞান করিতে প্রবৃত্ত হন। সমস্ত ব্রহ্মাণ্ডের প্রতি অভেদ-জ্ঞান সাধনা সম্পন্ন হইলে শেষোক্ত অভেদ-জ্ঞান করিতে সমর্থ হন। 


 এবং ঐ গুণপ্রভাবে প্রেমানন্দময়, জ্ঞানময়, সৎ-স্বরূপ পরমেশ্বরের অর্থাৎ সচ্চিদানন্দ পরব্রহ্মের অন্তর্গত থাকিয়া অনন্ত-প্রায় প্রেমানন্দ-সুধা পরম-জ্ঞানসহকারে ভোগ করিতে থাকেন। ইহাই জীবনের অন্তিম উদ্দেশ্য। এই (মুক্তি যে নানা প্রকার তাহার সবিশেষ বিবরণ তত্ত্বজ্ঞানের সিদ্ধি ও মুক্তি নামক তৃতীয় খণ্ডে দ্রষ্টব্য) অবস্থাই প্রকৃত মুক্তি, ইহাই প্রকৃত মোক্ষ। 


 এই অবস্থাকে কেহ কেহ "লয়" কেহ কেহ "নির্বাণ" ইত্যাদি বলিয়া নির্দ্দেশ করিয়াছেন। আবার কেহ কেহ "সোঽহং"-জ্ঞান বলিতেও ত্রুটি করেন নাই। কিন্তু জগদ্বীশ্বরে যে স্বপ্রযত্নে "সোঽহং-জ্ঞান হইতে পারে না, এবং মানবের প্রতিও যে "সোঽহং"-জ্ঞান-সাধনা অতীব দুরূহ ব্যাপার, তৎসমুদয় "অভেদ-জ্ঞান" অংশে সবিশেষ বর্নিত হইবে। যাহা হউক, এই অতুল্য অনুপমেয় অবস্থায় যে পরমান্দ-- পরম সুখ, তাহার বর্ননা করা মানবের পক্ষে অসাধ্য।

            - ঈশ্বর গুরুনাথ সেনগুপ্ত।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ