ইচ্ছাশক্তি।
প্রথম আকাশ একমাত্র শব্দ-গুণবিশিষ্ট, দ্বিতীয় বায়ু শব্দ-স্পর্শ গুণদ্বয়যুক্ত, তৃতীয় তেজঃ শব্দ-স্পর্শ-রূপ গুণত্রয়বিশিষ্ট, চতুর্থ তোয় শব্দ-স্পর্শ-রূপ-রস-গুণ চতুষ্টয়ান্বিত এবং পঞ্চম ভূমি শব্দ-স্পর্শ-রূপ-রস-গন্ধ গুণপঞ্চকান্বিত হইল।
প্রথম আকাশ একমাত্র শব্দ-গুণবিশিষ্ট, দ্বিতীয় বায়ু শব্দ-স্পর্শ গুণদ্বয়যুক্ত, তৃতীয় তেজঃ শব্দ-স্পর্শ-রূপ গুণত্রয়বিশিষ্ট, চতুর্থ তোয় শব্দ-স্পর্শ-রূপ-রস-গুণ চতুষ্টয়ান্বিত এবং পঞ্চম ভূমি শব্দ-স্পর্শ-রূপ-রস-গন্ধ গুণপঞ্চকান্বিত হইল।
এক্ষনে প্রশ্ন হইতে পারে যে, এ পয্যান্ত তুমি যাহা যাহা বলিয়াছ, প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই তৎসমুদায়ের কারণোল্লেখ করিয়াছ। কিন্তু প্রথমতঃ ইচ্ছাশক্তি প্রভাবে কিরূপে আকাশের উৎপত্তি হইল, তাহার কারণ নির্দেশ কর নাই। দ্বিতীয়তঃ পঞ্চীকরণের প্রমাণও প্রদর্শিত হয় নাই। অতএব উক্ত বিষয়দ্বয় এক একটি করিয়া বিশদরূপে বুঝাইয়া দাও।
ইহর উওরে বক্তব্য এই যে, মনুষ্য পরমপিতা পরমেশ্বরের অনন্ত অংশের একাংশ মাত্র, যে মনুষ্য পরমপরুষের তুলনায় অনন্তপ্রায় প্রসারিত মহাসাগরের সহিত সামান্য জলবুদ্-বুদের সাদৃশ্যলাভের সমর্থ নহে, এবং যে মানবের শক্তি সাধনাবলে বদ্ধনশীলা হইলেও পাশবদ্ধাবস্থায় সামান্য পরিবদ্ধ, সেই মানবের ইচ্ছাশক্তি-প্রভাবে যে সকল অত্যাশ্চর্য্য অনিব্বচনীয় অজ্ঞাত কারণ বিষয়-নিচয়
সম্পন্ন হইতেছে, তাহা স্মরণ করিলে অবশ্যই বলিতে হইবে যে, অনন্তের ইচ্ছাশক্তির কথা দূরে থাকুক, ক্ষুদ্রতম মানবের ইচ্ছা-শক্তিসঞ্জাত কার্য্যের কারণ নির্ণয়ের শক্তিও আজ পর্য্যন্ত বিজ্ঞানের নেত্র-গোচর হয় নাই। হে কারণার্থিন্ ! তুমি কি জ্ঞাত নহ যে, ইচ্ছাশক্তির বলিষ্ঠাবস্থায় নিতান্ত দুর্ব্বল ব্যক্তি যে কার্য্য সম্পাদন করিয়া থাকেন, ইচ্ছাশক্তি প্রশান্তবস্থায় সে কার্য্য সংসাধন করা বহুসংখ্যক বলিষ্ঠ ব্যক্তির পক্ষেও
দুষ্কর হয় (১) ? তুমি কি অবগত নহ যে, প্রবল্যাবস্থায় সামান্য একজনের উক্তি অনুসারে সুস্থকায় অপর মানবের দেহেও ইচ্ছানুগত ক্রিয়া সংঘটিত হইয়া থাকে (২) ? দেখ, বলীয়সী ইচ্ছা শক্তির প্রভাবে ভূচর জীবও খেচরের ন্যায় শূন্য-প্রদেশে পরিভ্রমণে সমর্থলাভ করিয়া থাকে। (৩)
সম্পন্ন হইতেছে, তাহা স্মরণ করিলে অবশ্যই বলিতে হইবে যে, অনন্তের ইচ্ছাশক্তির কথা দূরে থাকুক, ক্ষুদ্রতম মানবের ইচ্ছা-শক্তিসঞ্জাত কার্য্যের কারণ নির্ণয়ের শক্তিও আজ পর্য্যন্ত বিজ্ঞানের নেত্র-গোচর হয় নাই। হে কারণার্থিন্ ! তুমি কি জ্ঞাত নহ যে, ইচ্ছাশক্তির বলিষ্ঠাবস্থায় নিতান্ত দুর্ব্বল ব্যক্তি যে কার্য্য সম্পাদন করিয়া থাকেন, ইচ্ছাশক্তি প্রশান্তবস্থায় সে কার্য্য সংসাধন করা বহুসংখ্যক বলিষ্ঠ ব্যক্তির পক্ষেও
দুষ্কর হয় (১) ? তুমি কি অবগত নহ যে, প্রবল্যাবস্থায় সামান্য একজনের উক্তি অনুসারে সুস্থকায় অপর মানবের দেহেও ইচ্ছানুগত ক্রিয়া সংঘটিত হইয়া থাকে (২) ? দেখ, বলীয়সী ইচ্ছা শক্তির প্রভাবে ভূচর জীবও খেচরের ন্যায় শূন্য-প্রদেশে পরিভ্রমণে সমর্থলাভ করিয়া থাকে। (৩)
একদা একজন সাহেব ও বিবি কলিকাতার কোন প্রসিদ্ধ নাট্যশালায় ইচ্ছাশক্তির অপূর্ব্ব কার্য্য প্রদর্শন করিয়াছিলেন। কোন ব্যক্তি একটি বিষয় মনে করিলেন, ঐ সাহেব তাহার প্রতি সুতীক্ষ্ণ দৃষ্টিপাত-পুর্ব্বক কিয়ৎক্ষণ পরে ঐ বিবির প্রতি নেএাপাত করিতেন। বিবি অমনই উথিত হইয়া প্রশ্নকর্তার অভিমত কার্য্য করিতেন। একজন প্রষ্টা মনে
করিয়াছিলেন, ক- নামক ব্যক্তির ঘড়ী ও চেন আমাকে দেও। পূর্ব্বোক্ত ঘটনায় পরে বিবি উথিত হইয়া উদ্দিষ্ট ব্যক্তির ঘড়ী ও চেন আনিয়া প্রষ্টাকে প্রদান করিলেন। আবার, একজন মনে করিয়াছিলেন যে, ঐ বিবি বাহিরে গিয়া এক বোতল লেমনেড আনিয়া আমাকে দান করুক। সাহেব পূর্ব্বরূপ দৃষ্টিপাত করার পর বিবি বাহিরে গিয়া এক বোতল লেমনেড আনিলেন এবং প্রশ্নকর্তার নিকটে গিয়া ইহা
তাহাকে প্রদান করিলেন। অতএব দেখ, সীমাবদ্ধ-শক্তি-সম্পন্নের সামান্য রাজসিকী (৪) ইচ্ছার প্রভাবে যে কার্য্য সম্পন্ন হইল, তাহার বিজ্ঞান-সম্মত কারণ নির্ণয় কি দূরূহ ব্যাপার নহে? যাহা হউক, পূর্বোক্ত প্রকৃত ঘটনাসমূহের বর্ণনাদ্বারা পাঠক অবশ্যই বুঝিতে পারিয়াছেন যে, ইচ্ছাশক্তির প্রবলতার সময়ে অচিন্তিতপূর্ব্ব বহু ব্যাপারও সম্পাদিত হইতে পারে। যখন সীমাবদ্ধ জীবের ইচ্ছায় এইরূপ ঘঠিতে পারিল,
তখন যাঁহার শক্তির অন্ত নাই, যাঁহার গুণ অনন্ত অনন্ত অনন্ত, সেই পরমপরুষের ইচ্ছায় না হইতে পারে এমন ব্যাপারই নাই। আবার সিসৃক্ষাই বল, বা বিবংহয়িষাই বল উহারা ইচ্ছারই প্রকার-ভেদ মাত্র। সুতরাং অনন্তশক্তি পরমপরুষ স্বীয় অনন্ত নিরাকারত্ব ও অনন্ত সাকারত্বের একত্বরূপ গুণ হইতে ইচ্ছাশক্তি-প্রভাবে যে আকাশের উৎপাদনে সমর্থ, ইহা নির্দ্দেশ করাই বাহুল্য।
করিয়াছিলেন, ক- নামক ব্যক্তির ঘড়ী ও চেন আমাকে দেও। পূর্ব্বোক্ত ঘটনায় পরে বিবি উথিত হইয়া উদ্দিষ্ট ব্যক্তির ঘড়ী ও চেন আনিয়া প্রষ্টাকে প্রদান করিলেন। আবার, একজন মনে করিয়াছিলেন যে, ঐ বিবি বাহিরে গিয়া এক বোতল লেমনেড আনিয়া আমাকে দান করুক। সাহেব পূর্ব্বরূপ দৃষ্টিপাত করার পর বিবি বাহিরে গিয়া এক বোতল লেমনেড আনিলেন এবং প্রশ্নকর্তার নিকটে গিয়া ইহা
তাহাকে প্রদান করিলেন। অতএব দেখ, সীমাবদ্ধ-শক্তি-সম্পন্নের সামান্য রাজসিকী (৪) ইচ্ছার প্রভাবে যে কার্য্য সম্পন্ন হইল, তাহার বিজ্ঞান-সম্মত কারণ নির্ণয় কি দূরূহ ব্যাপার নহে? যাহা হউক, পূর্বোক্ত প্রকৃত ঘটনাসমূহের বর্ণনাদ্বারা পাঠক অবশ্যই বুঝিতে পারিয়াছেন যে, ইচ্ছাশক্তির প্রবলতার সময়ে অচিন্তিতপূর্ব্ব বহু ব্যাপারও সম্পাদিত হইতে পারে। যখন সীমাবদ্ধ জীবের ইচ্ছায় এইরূপ ঘঠিতে পারিল,
তখন যাঁহার শক্তির অন্ত নাই, যাঁহার গুণ অনন্ত অনন্ত অনন্ত, সেই পরমপরুষের ইচ্ছায় না হইতে পারে এমন ব্যাপারই নাই। আবার সিসৃক্ষাই বল, বা বিবংহয়িষাই বল উহারা ইচ্ছারই প্রকার-ভেদ মাত্র। সুতরাং অনন্তশক্তি পরমপরুষ স্বীয় অনন্ত নিরাকারত্ব ও অনন্ত সাকারত্বের একত্বরূপ গুণ হইতে ইচ্ছাশক্তি-প্রভাবে যে আকাশের উৎপাদনে সমর্থ, ইহা নির্দ্দেশ করাই বাহুল্য।
____________________________________________
(১) একদা কোনও পল্লীগ্রামে গৃহবিশেষে অগ্নিসংযোগ হওয়াতে (আগুন লাগাতে) তন্নিকটবর্ত্তি-ভবনস্থিত একজন রুগ্নদেহ শিশু ও একটি দশমবর্ষীয়া বালিকা উভয়ে তৈজসপূর্ণ একটি সিন্ধুক গৃহ হইতে লইয়া গিয়া কোনও নিরাপদ স্থানে রাখিয়াছিলেন। কিন্তু অগ্নি নির্ব্বাপণের পর ঐ সিন্বুক গৃহে অনিতে প্রায় ৮/১০ জন বলিষ্ঠ লোকের প্রয়োজন হইয়াছিল। ইহা লেখকের পরিজ্ঞাত বিষয়।
(২) এক ব্যক্তি নিজ বিমাতাকে পদাঘাত করায়, ঐ রমনী বলিয়াছিলেন যে, একমাসের মধ্যে তোর পায়ে কুষ্ঠরোগ জন্মিবে। প্রকৃতপক্ষেও তাহাই হইয়াছিল। এইরূপ কোনও পাষণ্ড এক ব্রাক্ষণকে সামান্য দোষে বিনামাদ্বারা আঘাত করার ঐ রূপে অভিশপ্ত হয়। অদ্যাপি তৎবংশীয়েরা ঐ রোগ ভোগ করিতেছে।
(৩) অনেকে বলেন যে মহাপুরুষেরা শূন্য দিয়া যে গমনাগমন করেন, উহা বলবতী ইচ্ছাশক্তিরই কার্য্য। তন্ত্রশাস্ত্রে ইহাকে গুটিকাসিদ্ধি কহে। মহাত্মা বুদ্ধদেব এই রূপ কার্য্য করিতে পারিতেন বলিয়া গ্ৰন্থবিশেষে উল্লিখিত আছে।
(৪) এই ইচ্ছা কে রাজসী বা রাজসিকী ইচ্ছা বলার কারণ এই-উল্লিখিত সাহেব সর্ব্বসাধারণের সমক্ষে বলিয়াছিলেন যে, ইহা কোনও প্রকার ধর্ম্মবলে সাধিত নহে।
- মহাত্মা গুরুনাথ।
0 মন্তব্যসমূহ