সত্যধর্ম্মাবলম্বীগণেরা হিন্দু নহে।
সত্য ধর্ম্মাবলম্বীগণেরা সত্যেষ্ট কারণ একক ক্ষেত্রে ধর্ম্ম বাদে শুধু সত্য বলিতে পারি না। কোনও ধর্ম্ম সম্প্রদায় ধর্ম্ম যুক্ত করিয়া তাহাদের পরিচিতি বহন করেন না। কারণ সত্য অন্তহীন গুণবাচক শব্দ। অন্যান্য ধর্ম্ম সম্প্রদায় ভূক্ত যেমন হিন্দু, মুসলিম, খৃষ্টান ইত্যাদি সকলই নামপদ ধারক। সত্য আমরা ধারণ করিয়া আছি, ধারণ কথার অর্থ ইষ্ট অতএব সত্য যুক্ত ইষ্ট আমরা সত্যেষ্ট, সুতরাং সত্যেষ্ট নাম ধারক হইয়াও অন্তহীন ব্যাপক শব্দ।
এই বিশুদ্ধ ধর্ম্মের মতে সাকার উপাসনা নাই, যোগ-সাধন নাই, জাতিভেদ নাই, এবং নির্ব্বান (ঈশ্বরে লীন হওয়া) নাই। ইহার মতে গুণসাধন সর্ব্বপ্রধান কার্য্য। সুতরাং ঈশ্বরোপাসনা ও গুণের অভ্যাস একমাত্র কার্য্য।-মুখবন্ধ ।
সকল ধর্ম্মে একটি বিষয় লক্ষিত হয় তাহা গুণসাধন। কিন্তু হিন্দু ধর্ম্মে একটি বিষয় যেমন গুণসাধন তাহাও সাকারের গুণকৃর্ত্তন অর্থাৎ মিথ্যাকে আশ্রয় করিয়া তাহার গুণকৃর্ত্তন করেন। যেমন (১) হিন্দু ধর্ম্মে সাকার উপাসনা হয়। (২) যোগ-সাধন তাহাও হিন্দু ধর্ম্মের অন্তর্গত। (৩) জাতিভেদ হিন্দু ধর্ম্মে রন্ধ্রে রন্ধ্রে মিশিয়া আছে। (৪) নির্ব্বান ইহাও হিন্দূ ধর্ম্মে কোন ও কোন ও অংশে ইহ আছে। সাকারত্ব বাদে শুধু "গুণকীর্ত্তন" টুকুই সত্যধর্ম্মের অন্তর্গত।
সত্যনুসারে সাকারের উপাসনা হয় না, কিন্তু উহার অর্চনা আছে। গুণ অনুভূতি দ্বারা প্রকাশ্যমান।
সত্যধর্ম্ম যে পৃথিবীর সমস্ত প্রচলিত ধর্ম্ম অপেক্ষা সত্য ও উৎকৃষ্টতম, এক্ষনে কেবল উহা যে অন্যান্য প্রচলিত ধর্ম্ম অপেক্ষা বিভিন্ন অর্থাৎ আলাদা, তাহাই প্রদর্শিত হইতেছে। এখানে মহাত্মা গুরুনাথ কি বলিয়াছেন দেখা যাউক।
(১) সত্যধর্ম্মে সাকার উপাসনা নাই, সুতরাং সমস্ত সাকারবাদ পূর্ণ ধর্ম্ম হইতে ইহা বিভিন্ন। ( ইহার প্রথম প্রমান আমরা হিন্দু নহি।)
(২) ইহাতে হঠযোগাদির ন্যায় কোনও প্রকার যোগ-সাধন নাই এবং পদ্মাসনাদির ন্যায় কোন ও প্রকার আসন-সিদ্ধ ও নাই, সুতরাং ইহা সমস্ত যোগ-সাধন ধর্ম্ম ও আসন-সাধন ধর্ম্ম হইতে বিভিন্ন। ( ইহাই দ্বিতীয় প্রমাণ আমরা হিন্দু নহি। )
(৩) নিরাকারবাদী বেদান্ত প্রতিপাদ্য ধর্ম্ম ও স্বল্পকাল প্রচলিত ব্রাক্ষ্মধর্ম্ম হইতে ও ইহা বিভিন্ন। কারণ বেদান্তের অতি ভীষণ অহঙ্কারময় অন্যায্য " সোহহং " প্রভৃতি ভাবেও ইহা দূষিত নহে এবং ব্রক্ষ্মাধর্ম্মের ন্যায়" একমাত্র মনুষ্য জন্ম গ্রহণ করে" ইত্যাদি অদূরদর্শিতায়ও ইহা মহত্ত্বশূন্য নহে। (এই তৃতীয় কারণ বসত আমরা হিন্দু নহি।)
গুরুদেব সত্যধর্ম্মের নিয়ম অনুযাই শ্রাদ্ধ ও তর্পণ বিধি লিখিবার পর বলিলেন যে, এতদ্ব্যতীত, তুমি যে শ্রেণীর সমাজে আছ, তাহাদিগের ন্যায় কার্য্য করিতেও পার। অর্থাৎ তুমি হিন্দু সমাজে থাকিলে হিন্দুধর্ম্মে নির্দ্ধারিত নিয়মে শ্রাদ্ধ করিতেও পার। এইরূপ খ্রীষ্টিয়ান বা মুসলমান সমাজে থাকিলে যথাক্রমে তত্তৎ সমাজের অনুরূপ শ্রাদ্ধকার্য্যও করিতে পার । কেননা, ঐ সমস্ত নিয়মও শ্রাদ্ধসম্বন্ধে হেয় নহে।
সত্যধর্ম্মীরা যদি হিন্দুই হইবে তবে আলাদা করিয়া সত্যধর্ম্মীদের জন্য শ্রাদ্ধ ও তর্পণ বিধি লিখিবার প্রয়োজন হইত না। এবং লিখিবার পর আবার বলিলেন এতদ্ব্যতীত মানে ইহা ছাড়া, তুমি যে শ্রেণীর সমাজে আছ বলিতে গিয়া হিন্দু, খ্রীষ্টিয়ান ও মুসলমান সমাজের উল্লেখ করিলেন, তাহা কেন বলিলেন, কেননা আমরা হিন্দু নহি বলিয়াই এইরূপ বলিলেন। আবার বলিলেন নির্দ্ধারিত নিয়মে শ্রাদ্ধ করিতে পার। করিতে হইবে তাহা নহে, ইচ্ছা হইলে করিতে পার। আমাদের কর্তব্য কি গুরুদেব যাহা বলিয়াছেন তাহাকে অনুসরণ করা, না কি সমাজের ঐ সমস্ত নিয়ম পালন করা, কেননা গুরুদেব যেভাবে লিখিয়া গিয়াছেন তাহা আমাদের মঙ্গলের নিমিত্ত এবং অন্তর, ধর্ম্ম ও সমাজ উন্নতির জন্যই। তিনি কাহাকেও আঘাত দিয়া কোনও লেখনী লেখেন নাই কেননা সকলের স্বাধীনতা আছে,
যে যাহা যেই সময় বুঝিতে পারে, তাহারি অপেক্ষায় তিনি আছেন। ইহা লেখা হইতেছে সত্যধর্ম্মীদের জন্য কেননা তাহার প্রকৃত ভাব অর্থ না বুঝিয়া নিজেদের হিন্দু বলিয়া গৌরবান্বিত হইতেছেন ইহা ঠিক নহে। উন্নত ও উৎকৃষ্ট নিয়ম বাঁধিয়া আমাদের উন্নতির জন্য সাজাইয়া দেওয়ার পরেও "ঐরূপ শ্রাদ্ধসম্বন্ধে হেয় নহে" ইহা কতদিন ধরিয়া চলিব ? এখনও কেহ কেহ সত্যধর্ম্মাবলম্বীরা হিন্দু নিয়মে মাথা মুন্ডন করেন ইহা গুরুদেব বলেন নাই। এবং অধিক ব্যায় করিয়া দ্বিজরূপ ব্রাহ্মন দ্বারা প্রকৃত শ্রাদ্ধ হইতে বঞ্চিত হইতে তিনি বলেন নাই। তিনি বলিয়াছেন ঐ সময় ব্যাকুল অন্তকরণে পরমপিতার নিকটে উপাসনা করিয়া তাহার আত্মার শান্তির নিমিত্ত প্রার্থনা করিবার জন্য। সত্যতা ও সর্ব্বশ্রেষ্ঠতা বলতে গিয়া পারলৌকিক মহাত্মাগণ হিন্দুধর্ম্মের বিষয় কি বলিয়াছেন দেখা যাউক।
সত্যধর্ম্মের সত্যতা ও সর্ব্বশ্রেষ্ঠতা বলতে গিয়া পারলৌকিক মহাত্মাগণ হিন্দুধর্ম্মের বিষয় কি কি বলিয়াছেন দেখা যাউক।
(ক) সাকার উপাসনা- পরমপিতা জড় জগতের সহিত তাঁহার অংশ সংযুক্ত করিয়াছেন, কিন্তু তিনি ঐ সৃষ্টি হইতে নির্লিপ্তভাবে বিভিন্ন আছেন, সুতরাং আকার-বিশিষ্ট যাহাই ধর না কেন, তাহাই জড় জগতের সহিত সংযুক্ত হইবেই হইবে। ওজন্য উহা কখনই সেই অনন্তশক্তি অনাদি অনন্ত নহে। অতএব আকার বিশিষ্ট বা সাকারের উপাসনা করিলে কখনই পরমপিতা পরমেশ্বরের উপাসনা করা হয় না। এ নিমিত্ত সহজেই স্বপ্রমাণ হইতেছে যে, সাকার উপাসনা কর্ত্তব্য নহে। (কিন্তু হিন্দুধর্ম্মীরা তাহাই করেন।)
হিন্দুধর্ম্মের শাক্ত, শৈব, বৈষ্ণব, প্রভৃতি মত সাকার উপাসনার বিধি আছে। কিন্তু ঐ সকল মতাবলম্বীরাও ইহা স্বীকার করেন যে, পরমাত্মা সাকার নহেন। পরন্তু " সাধকানং হিতাথার্য় ব্রহ্মনোরূপকল্পনা "অর্থাৎ সাধকদিগের হিতের নিমিত্ত ব্রহ্মেষর- নিরাকার পরমাত্মার রূপ কল্পনা করা হয়। তাঁহারা বলেন, নিরাকারভাব সকলে ধারনা করিতে পারে না, এজন্য নিকৃষ্ট- চেতা উপাসকদিগের হিতের নিমিত্তই সেই নিরাকার পরম ব্রহ্মেরও রূপ কল্পিত হইল। কিন্তু যাহা কল্পনা, তাহা যে সত্য নহে, ইহা বলা বাহুল্য। আরও দেখ, তাহাদিগের এক প্রধান ভ্রম এই যে, তাঁহারা বলেন- "প্রথমে সাকার দেবদেবীর উপাসনা করিলে জ্ঞানযোগ হয় সেই জ্ঞানযোগ ব্যতীত মনুষ্য কখনও নিরাকার ব্রহ্মকে ধরণা করিতে পারে না"। (পরমাত্মা সাকার নহেন স্বীকার করিয়াও মিথ্যাকে আশ্রয় করিয়া ধর্ম্মের কথা বলে, তাই আমরা হিন্দু নহে।)
ঈশ্বরাদিষ্ট পুরুষেরা আজীবন এক লক্ষ্য অবলম্বন, একপথ আশ্রয়ে, এক ধর্ম্ম যাজনে জীবন যাপন করেন, আর অন্য পুরুষেরা যতই উৎকর্ষ লাভ করুন না কেন, আজ এক ধর্ম্ম, কাল এক ধর্ম্ম এবং পরশু এক ধর্ম্ম অবলম্বন করিয়া থাকেন। তাহাদিগের অদ্য মত হইল যে, সাকার উপাসনা ভ্রমপূর্ণ, কল্য তাহারাই, বলিলেন যে, চৈতন্য পূর্ণব্রহ্ম। তাহারা পাঁচ বৎসর পূর্ব্বে গুরু স্বীকার করিতেন না, আজ গুরু স্বীকার করিতে প্রবৃত্ত হইলেন এবং স্বয়ং গুরুত্ব- পদ গ্রহণ করিলেন। তাহারা এক সময়ে যোগের বিরোধ করিতেন, পরে অন্য সময়ে যোগের পক্ষ অবলম্বন করিয়াছিলেন এবং এখন পুনরায় যোগের অসারতা প্রকাশ করিতেছেন। তাহারা আজ হিন্দুধর্ম্ম, কাল ব্রহ্মধর্ম্ম ও পরশু একটি কল্পিত ধর্ম্ম অবলম্বন করিয়া ধর্ম্মলাভে বাসনা চরিতার্থ করিয়া থাকেন। ইহাদিগকে অধার্ম্মিক বলা যায় নাঘণ, কিন্তু বহির্দর্শনে গম্ভীর রূপ প্রতীয়মান হইলে ও অন্তর্দর্শনে ইহারা ঘোরতর চঞ্চল ও অদৃঢ়- হৃদয়। - ধর্ম্ম ও ধর্ম্ম সমন্বয় ।
(খ) কি হঠযোগ, কি রাজযোগ, কি অন্যবিধ যোগ, সকলেরই উদ্দেশ্য চিত্তের একাগ্রতা-সাধন। যখন পরমপিতার প্রতি প্রেম করিতে পারিলেই আত্মার একাগ্রতা জন্মে, তখন ঐ বিষয়ের যে কোনও প্রয়োজন নাই, তাহা অনায়াসেই হৃদয়ঙ্গম হইতেছে। কেননা শতবর্ষ যোগসাধনা করিয়া যেরূপ একাগ্রতা হয়, এক মুহুর্ত্তের প্রেমে তদপেক্ষা সহস্র গুণে একাগ্রতা জন্মে। আর ও দেখ, শেষোক্ত উপায়ে কার্য্য করিলে একাগ্রতা ব্যতীত পাপমুক্তি প্রভৃতি লাভ ও হয়। ( সত্যধর্ম্মে পরমপিতার সহিত যোগ অর্থাৎ ঈশ্বরত্ত্ব লাভের উপায়ের পথ আছে তাই আমরা হিন্দু নহে ।)
( গ ) কতোকগুলি লোক আসনসিদ্ধি ভ্যভ্য য্যভৃতি বিষয়ে ব্যাপৃত থাকেন, কিন্তু উহারাও আবশ্যকতা নাই, কারণ উহাও যোগেরই অন্তর্গত। দেখ , অমূল্যরত্ন হীরামণি- মাণিক্যাদি লাভে যেমন সামান্য অর্থের অভাব থাকে না, তদ্রূপ সত্যধর্ম্ম লাভ হইলে আর ঐ সকলের কোনও প্রয়োজন থাকিবেনা। (তাই আমারা হিন্দু নহে।)
(ঘ) নিরাকারবাদপূর্ণ বেদান্ত প্রতিপাদ্য ধর্ম্ম অপেক্ষাও সত্যধর্ম্ম শ্রেষ্ঠ ও সত্য, কেননা বেদান্তে ব্রহ্মকে নিরাকার স্বীকার করিলেও "তত্ত্বমসি," "সোহহং" প্রভৃতি ঘোরতর অহংকারময় অন্যায্য বাক্য থাকাতে ও উপাসনার প্রকৃষ্ট পদ্ধতি না থাকাতে উহা অসত্য ও সত্যস্বরূপ লাভের অনুপযুক্ত। থিয়জফিষ্ট যোগসাধকেরাও "সোহহাং" মতাবলম্বী। সুতরাং ঐ ভয়ানক মতের খন্ডনার্থে কিঞ্চিত লিখিত হইল। ( তাই আমরা হিন্দু ও থিয়জফিস্ট নহে ।)
হে ক্ষুদ্র ! হইতেও ক্ষুদ্র মানব! তুমি যখন অপর এক বা একাধিক মানবকে আত্মতুল্য জ্ঞান করিতে পার না, তখন সেই অনন্ত ব্রহ্মাণ্ডেশ্বরকে কিরূপে আত্মতুল্য বোধ করিবে? হে ক্ষুদ্রতম প্রস্তরকণা ! তুমি কিরূপে ও কোন সাহসে অনন্ত হিমাচলকে আত্মসদৃশ বিবেচনা করিবে? হে ক্ষুদ্র মানব ! যখন তুমি তোমা অপেক্ষা কিঞ্চিত উন্নত কোনও আত্মাকে কস্মিনকালে আত্মতুল্য বোধে সমর্থ নহ, তখন তোমা অপেক্ষা অনন্তগুণে উন্নত পরমপিতাকে কিরূপে আত্মতুল্য বলিয়া নির্দ্দেশ করিতে সাহস কর ?
মনুষ্য যতই উন্নত হউক, কখনই পরমপিতায় লীন হয় না। যেমন বৃত্তক্ষেত্র মধ্যে যত প্রকার নিয়মিত সরল রৈখিক ক্ষেত্র থাকিতে পারে, তন্মধ্যে নিয়মিত ত্রিভুজ ক্ষেত্র অল্পসংখ্যক বাহুবিশিষ্ট ও অল্পস্থানব্যাপী, তদ্রূপ পরমপিতার সৃষ্টিতে যত প্রকার পদার্থ আছ, তন্মধ্যে তোমাদিগর দৃশ্যমান এই স্থূলজগৎ পরলোক অপেক্ষা অল্পতর গুণবিশিষ্ট অর্থাৎ দৈর্ঘ্য, বিস্তার ও বেধ এই ত্রিবিধ গুণযুক্ত । যেমন বৃত্তমধ্যস্থ সমচরতুর্ভুজ, সমপঞ্চভুজ, সমশতভুজ প্রভৃতি ক্ষেত্র ক্রমশঃ উক্ত ত্রিভুজ অপেক্ষা অধিক বাহুবিশিষ্ট ও অধিকস্থানব্যাপী, সুতরাং বৃত্তের অপেক্ষাকৃত নিকটবর্ত্তী, তদ্রূপ পারলৌকিক উন্নত আত্মাদিগের ও দেহ ও ( পারলৌকিক আত্মাদিগের ও দেহ আছে, উহা অপেক্ষাকৃত সূক্ষ্ম এইমাত্র প্রভেদ।) চার, পাঁচ, ছয়, সাত শত ইত্যাদি সংখ্যক গুণবিশিষ্ট, এবং তাঁহারা তোমাদিগের অপেক্ষা অধিক ক্ষমতাপন্ন ও পরমপিতার অধিক নিকটবর্ত্তী। যেমন বৃত্তমধ্যস্থিত নিয়মিত সরল রৈখিক ক্ষেত্রের বাহুসংখ্যক যতই বর্দ্ধিত হউক না কেন, উহা কখনই বৃত্তের সমান হইতে পারে না, তদ্রূপ জীবাত্মাও যতই উন্নতি লাভ করুক না কেন, কখনই পরমপিতার তুল্য, হইতে পারে না।
এক্ষনে বিবেচনা করিয়া দেখ, যদি নির্ব্বাণ না হইল, অর্থাৎ যদি জীবাত্মা কখনও পরমাত্মার তুল্য হইতে না পারিল, প্রত্যুত অনন্তকাল অনন্ত ক্ষুদ্র ভাবে তাঁহার নিকটে রহিল, তবে কখনও সে পরমাত্মাতে লীন হইতে পারিবে না।
(ঙ) বৌদ্ধধর্ম্ম প্রধানতঃ তিন ভাগে বিভক্ত। এক ভাগ নিরীশ্বরবাদপূর্ণ, ২য় ভাগ লামা প্রভৃতির অর্চ্চনার নিমিত্ত পৌত্তলিক ধর্ম্ম- সদৃশ বরং ৩য় ভাগ পরলোক ও পারলৌকিক আত্মাদিগের অস্বীকারপূর্ব্বক কেবল নির্ব্বাণ লাভার্থে চীৎকারপূর্ণ । সুতরাং বৌদ্ধধর্ম্ম সত্য নহে। কারণ উহার প্রথম ভাগের বিষয়ে অধিক তর্কের প্রয়োজন নাই, মনুষ্য- মাত্রেরই যে সহজজ্ঞান আছে, উহা তাহার বিরোধী, সুতরাং ভ্রান্ত। ২য় ভাগ যে অসত্য, তাহা পৌত্তলিক ধর্ম্মের অসত্যতা বিষয়ে যাহা লিখিত হইয়াছে, তাহাতেই উপলব্ধ হইবে। এবং ৩য় ভাগের মূল মতই যে অসত্য, তাহা ইতঃপূর্ব্বে বেদান্ত- ধর্ম্মের অসত্যতা প্রতিপাদন সময়ে প্রদর্শিত হইয়াছে। অতএব বৌদ্ধধর্ম্মের সমস্ত মতই যে অসত্য, তাহা প্রতিপন্ন হইল ।
"সমস্ত মতই যে অসত্য" একথা বলাতে কেহই যেন এরূপ ভাবেন না যে, বৌদ্ধধর্ম্মে "অহিংসা পরমোধর্ম্মঃ " ইত্যাদি নীতি- বিষয়ক যে সকল উপদেশ আছে, তাহাও অসত্য। বস্তুতঃ কোন ও ধর্ম্মের সমস্ত মত অসত্য নহে ( বিশেষতঃ নীতিবিষয়ক)। তবে যে ভিত্তির উপরে ঐ মত গ্রথিত থাকে, অথবা যাহা ঐ ধর্ম্মের প্রধান বিষয়, তাহা সমস্ত বা ব্যস্তভাবে অসত্য হইলেই ঐ ধর্ম্মকে অসত্য বলা যায়। এ স্থলে ইহা বলা আবশ্যক যে, বুদ্ধদেব যে অভিপ্রায়ে এই ধর্ম্ম প্রচার করিয়াছিলেন, ভবিষ্যতের লোকেরা সেই অভিপ্রায় ভূলিয়া নতুন মত চালাইয়াছে।
(চ) ব্রাহ্ম-ধর্ম্ম ।- এই ধর্ম্মে পৌত্তলিকতা নাই, ইহার ইহার একমাত্র গুণ। পরন্তু ইহাতে প্রকৃত উপাসনার পদ্ধতি প্রচলিত নাই এবং এই ধর্মাবলম্বীগণ প্রকৃত উপাসনার অভাবে সূক্ষ্ম জগতের কোনও বিষয় জানিতে পারেন না এবং জড়জগতের সূক্ষ্মবিষয় পরিজ্ঞানেও অসমর্থ। তজ্জন্যই ইহারা পুনর্জন্মাদি স্বীকার করেন না। আর, যে গুরু না হইলে আমরা কিছুই জানিতে পারিনা, ইহারা ধর্ম্মশিক্ষার্থে সেই গুরুস্বীকার করেন না। এ জন্য ইহাও ঐক্যদেশিক ধর্ম্ম প্রকৃত ধর্ম্ম নহে।
সত্যধর্ম্মেই একমাত্র জাতিভেদ নাই যেমন পশু-পাখি, কিট-পতঙ্গ ও বৃক্ষ- লতা ইহাদের আসিতে হইয়াছে। আর মনুষ্য জাতি তো নিজেদের, কিন্তু সমাজে যাহা দেখিতে পাওয়া যায়, তাহা কষ্টদায়ক। একমাত্র সত্যধর্ম্মে যাহার যাহা পদবী তাহাই থাকিবে, তাহার পরিবর্তন করিবার প্রয়োজন হয়না। ইহাই বৈশিষ্ট্য যে সত্যধর্ম্মে সামাজিক দিক হইতেও জাতিভেদ নাই। অন্যান্য ধর্ম্মে এই রূপ পরিবর্তন হইলে সঙ্গে সঙ্গেই তাহার পদবী পরিবর্তন করিতে হয় যেমন হিন্দু, মুসলমান, খ্রীষ্টান ও ইত্যাদি সকলেই ঐকদেশিকতায় পূর্ণ । (অতএব সত্যধর্ম্মাবলম্বীগণ হিন্দু নহে।)
"হিন্দু ধর্ম্মের ন্যায়" ইহ দেশে যে ধর্ম্ম-কর্ম্মের মিল তাহাকেই ঐকদেশিক শব্দে আক্ষ্যায়িত করা হইয়াছে, যেমন স্বীকারত্ত্বে মিল। মূল বিষয় এই যে আত্ম উন্নতি দ্বারা পরমপিতার কাছে পৌঁছানোর উদ্দেশ্যর জন্যই ধর্ম্ম । ধর্ম্মের কোন নাম নাই, যে যাহা বলিয়া ডাকিতে পারে তাহাই ধর্ম্ম। কিন্তু যাহা সত্য কথা বলে প্রকৃত উন্নতির কথা বলে সেই পথেই নামই সত্যধর্ম্ম । পৃথিবীর সকল ধর্ম্মের ভেতর শুধু মিথ্যাতেই পূর্ণ, কেননা কল্পনার জগতেই ভাসিয়া বেড়ায়, আর কল্পনা মাত্রই যে মিথ্যা তাহা সকলেই অবগত আছেন। সত্যধর্ম্ম সকলের চোখ খুলিবার জন্য আসিয়াছে আর আমরাই যদি বুঝিতে না পারি আমাদের ধর্ম্মি কি, তাহা কি করিয়া চলিতে পার ?
এক্ষনে হিন্দুশাস্ত্র বলিলে শাক্ত, শৈব, সৌর, বৈষ্ণব, ও গাণপত্য এই পঞ্চবিধ মতই বুঝায়। - তত্ত্বজ্ঞান সাধনা । ইহার কোন ও একটির মধ্যে সত্যধর্ম্মাবলম্বীরা পরে না । তাহা হইলে কি করিয়া আমরা বলিতে পারি যে আমারা হিন্দু ???
যাহারা নিজেদের সত্যধর্ম্মাবলম্বী বলিয়া দাবী করিতেছেন, তাহারা নিজেদের বাস্তব জীবনে কার্য্যকারি ভাবে যদি তাহা প্রয়োগ করিতে না পারিবেন তাহা হইলে মিথ্যাচারি প্রতিপন্ন হইতে হইবে। এদিকে মুখে বলিতেছেন আমারা সত্যধর্ম্মাবলম্বী আর কাগজ কলমে হিন্দু লিখিতেছেন ইহা কি মিথ্যা নয় ??
সত্যধর্ম্মাবলম্বীদের বলিতেছি, আপনারা প্রতিটি কাগজ কলমে লিখিত ভাবে প্রয়োগ করুন, যদি কোন বাধা বিপত্তি আসে তাহা হইলে সে বিষয় সত্যধর্ম্মের আইন মোতাবেকী সঠিক পদক্ষেপ নেওয়া যাইবে। তাহা হইলে অন্তত ঐ পাপের বোঝা বইতে হইবে না। আর কেহতো দাবি করিয়া বসিতেই পারে, আপনারা মুখে বলিতেছেন সত্যধর্ম্ম করেন, আর কাগজ কলমে লেখিতেছেন হিন্দু, তাহাকে কি জবাব দেবেন একবারটি ভাববেন না ?
প্রকৃত সত্যধর্ম্মী হইতে, প্রথমে অন্তর পবিত্র হইতে হয়, কিন্তু দ্বিচারিতা বলিয়া একটী বিষয় আছে তাহার কি হইবে? কঠোরতা বজায় রাখিতে হয়, তাহা হইলেই সত্যধর্ম্মে থাকা যায়।
বেশ কয়েক জন সত্যধর্ম্মাবলম্বী এই পদক্ষেপ নিয়াছেন, তাহাদের প্রথম প্রথম কিছুটা অসুবিধা হইয়াছে, পরিশেষে মিমাংশা হইয়াছে। আপনাদেরও আহ্বান জানাই আপনারাও এই ভাবে সকলকে প্রকৃত ভাবে বুঝিতে দিন যে আমরা হিন্দু নহি, আমরা সত্যেষ্ট অর্থাৎ সত্যধর্ম্ম অবলম্বী।
কোন ও বিষয় অনুমান দ্বারা বুঝিয়া লইও না । ধর্ম্ম বিষয়ের আদেশ মিলিটারী ডিপার্টমেন্টের আদেশের ন্যায় - নিবৃত্তির আদেশের পূর্ব্ব পর্য্যন্ত চালাইয়া যাইতে হয় । মহাত্মা গুরুনাথ।
আপনারা সত্যধর্ম্ম গভীর ভাবে অধ্যায়ন করুন, অনুমান দ্বারা বুঝিয়া লইবেন না যে আমরা হিন্দু । পুনঃ পুনঃ গুরুদেব বলিয়াছেন এবং পারলৌকিক মহাত্মাগণ বলিয়াছেন সত্যধর্ম্মের নিয়ম। আমাদের উচিত তাহাদের কথা অনুযায়ী চলা, নাকি নিজেরাই যাহা বুঝি তাহাতেই চলা। তাহাতে যে ভক্তি ক্ষুন্ন হইয়া যায় ইহা কি একবারটি ভাবিবেন না ?
কেহবা বলিতে পারেন হিন্দু কোন ও ধর্ম্ম নহে এইটি একটি জীবন শৈলী। গুরুদেব ও মহাত্মাগণ এই জীবনশৈলীকেই হিন্দু ধর্ম্ম বলিয়া গিয়াছেন। সত্যধর্ম্মাবলম্বীরা কাহাদের কথা মানিবেন ? মহাত্মা গুরুনাথ তত্ত্বজ্ঞান সাধনা গ্রন্থের অধিকরি ভেদে লিখিতে গিয়া শাস্ত্র বিষয় বলিয়াছেন "আজকাল ভারতের ধর্ম্ম হিন্দুধর্ম্ম নামে খ্যাত, কিন্তু হিন্দু এই নামটি সংস্কৃত- মূলক নহে, উহা পারহস্যভাষার শব্দ। কোনও কোনও পণ্ডিত বলেন যে- "ইংরেজরা নবষট্-পঞ্চ লন্ড্রদেশসমুদ্ভবাঃ। হিন্দুধর্ম্ম-প্রলুপ্তয়ে ভবন্তি চক্রবর্ত্তিনঃ।।" ভবিষ্যপুরাণ। হিমবদ্ বিন্দুসরসো মধ্যো হিন্দু্ঃ প্রকীর্ত্তিতঃ।।" ইত্যাদি স্থলে হিন্দু শব্দের যখন উল্লেখ দৃষ্ট হয়, তখন হিন্দুশব্দ যে সংস্কৃতশব্দ তাহাতে সন্দেহ করা উচিত নহে। কিন্তু অধিকাংশ চিন্তাশীল মনিষীবর্গ উহা স্বীকার করেন না।
তাঁহারা বলেন যে, ঐসকল সংস্কৃত শ্লোক অথবা ঐ সকল গ্রন্থ 'হিন্দু' নাম প্রচারের পরে লিখিত হইয়াছে। কারণ (প্রথমতঃ) ঐ সকল গ্রন্থে যে ফিরিঙ্গি ভাষায় লিখিত মন্ত্রের উল্লেখ আছে,তাহা সম্পূর্ণ অলীক। একারণ জানা যাইতেছে যে, ঐ সকল শ্লোক বা ঐ সকল গ্রন্থ বিশেষজ্ঞ ব্যক্তি কর্ত্তৃক লিখিত হয় নাই, এজন্য উহা প্রমাণরূপে গৃহীত ইহতে পারে না। (দ্বিতীয়ত) 'হিন্দু' শব্দ যদি সংস্কৃত শব্দ হইত তবে বেদ, মন্বাদি স্মৃতি, রামায়ণ ও মহাভারতের কোনও না কোনও স্থলে উহার উল্লেখ থাকিত। (তৃতীয়তঃ) যে সকল স্থলে 'আর্য্য' নাম লিখিত হইয়াছে, তাহার কোনও না কোনও স্থলে নিশ্চিতই 'হিন্দু' নাম দেখা যাইত। (চতুর্থতঃ) 'হিন্দু' শব্দ যে গ্রন্থে আছে, তাহা প্রামাণিক হইলে, তাহা হইতে অবশ্যই অন্যত্র বচন উদ্ধৃত হইত। ইত্যাদি ইত্যাদি কারণে'হিন্দু' শব্দ যে সংস্কৃতি শব্দ নহে, তাহা স্পষ্টরূপে প্রতীয়মান হইতেছে।
তবে এই ভারত- প্রচলিত 'হিন্দু' শব্দের উৎপত্তি কিরূপে হইল।
ইহার উত্তরে যে যাহা বলেন, তাহা নিম্নে লিখিত হইল। ইতিহাসবিদ দিগের মতে পূর্ব্বকালে সিন্ধুনদের পূর্ব্ব প্রদেশ সিন্ধুস্থান সিন্ধু প্রদেশ বলিয়া বিদেশীয়েরা নির্দ্দেশ করিতেন। 'সিন্ধু' শব্দ পারস্য ভাষায় হিন্দু , গ্রীক ভাষায় ইন্দুস এবং তদনুসারে ল্যাটিন্ ভাষায় বিকৃত হইয়া ইন্ডিয়া হইয়াছে।ইংরেজরা অদ্যপি শেষোক্ত নাম ব্যবহার করিয়া থাকেন। এইরূপ ভারতবর্ষীয়েরা বিদেশীয়গণ কর্ত্তৃক সিন্ধুস্থানী, হিন্দুস্থানী, এবং অতি সংক্ষেপে হিন্দু বলিয়া কীর্ত্তিত হইয়াছেন। ঐতিহাসিক দিগের এমতে ভারতবাসী দিগের কোনও রূপ গ্লানি নাই। কিন্তু ভাষাজ্ঞাদিগের মতে 'হিন্দু' নাম ভারতীয় দিগের মহাগ্লানি-জনক।
পারস্য ভাষায় হিন্দু- শব্দের কৃষ্ণবর্ণ বুঝায়। পূর্ব্বে পারস্যবাসীরা আফ্রিকা হইতেই অধিকাংশ ক্রীতদাস আনয়ন করিতেন। উহারা কৃষ্ণবর্ণ বলিয়া পারসীকেরা ক্রীতদাস বা দাস অর্থে হিন্দুশব্দ ব্যবহার করিতেন, মুসলমানেরা ভারতজয়ের পরে আর্য্যদিগের প্রতি ঘৃণা-প্রদর্শনার্থে তাহাদিগকে হিন্দু নামে অভিহিত করিয়াছিলেন, বলিয়া বোধ হয়। হিন্দু শব্দের কৃষ্ণবর্ণ অর্থের প্রমাণ-(ক) হিন্দুকোশ, হিন্দুকোষ বা কৃষ্ণপর্ব্বত। (খ) পারস্য কবি হাপেজ স্বীয়গ্রন্থে লিখিয়াছেন যে- সিরাজনগর নিবাসিনী সেই সুন্দরী যদি আমাকে ভালোবাসে, তবে তাহার গন্ডস্থিত কৃষ্ণবর্ণ তিলের পরিবর্তে আমি তাহাকে সমরকন্দ ও বোখারা নগরদ্বয় দান করিব।
হিন্দুশব্দের এইরূপে উৎপত্তি স্বীকার করিলে, উহা যে ভারতবাসীর অতিশয় গ্লানি-সূচক শব্দ তাহাতে আর সন্দেহ নাই। তবে "গুডফ্রাইডে " নামের ন্যায় উহাও কালে ভারতবাসী কর্ত্তৃক পরিগৃহীত হইয়াছে।...... এইরূপ কারণ বশতঃই ভারতবর্ষীয়েরাও 'হিন্দু' নামে পরিচয় দিতে লজ্জা বোধ করেন না। কারণ মুসলমান রাজত্বে ঐ নাম এতো প্রচলিত হইয়াছিল যে উহার অন্যথা করার সাধ্য ছিল না। এজন্য ভারতবর্ষীয় পন্ডিতেরা " হীনঞ্চ দূষয়ত্যেব হিন্দু রিত্যুচ্যতে প্রিয়ে" "হিমবদ্-বিন্দুসরসোর্মধ্যো হিন্দুঃ প্রকীর্ত্তিতঃ" এবং "সিন্দুশব্দা পভ্রষ্টত্বাৎ ম্লেচ্ছৈঃ হিন্দু রুদীরিত।" ইত্যাদি বচন-রচনা দ্বারা আপণাদিগের গৌরব বক্ষা করিয়াছেন। যাহা হোউক, এক্ষনে আমরা পৃথিবীর প্রধান প্রধান ধর্ম্ম- প্রণালী সমুহের উল্লেখ করিতেছি। (এতদ্ব্যতীত বিষয় বলিলেন কেন? গুরুদেব নিজে হিন্দু কুলে জন্মগ্রহণ করিয়াও নিজেকে হিন্দু বলেন নাই ইহাই দৃষ্ট হইতেছে কেননা বলিয়াছেন চিন্তাশীল মনুষ্যগণ "হিন্দু" শব্দ বলিতে লজ্জা বোধ করিবেন ইত্যাদি ইত্যাদি।)
পৃথিবীতে প্রধান হিন্দুধর্ম্ম, য়িহুদী ধর্ম্ম, খ্রীষ্টান ধর্ম্ম, ও মুসলমান ধর্ম্ম প্রভৃতিও হিন্দুধর্ম্মের অন্তর্গত। যাঁহারা তাহা স্বীকার করেন না, তাঁহাদিগের মতে প্রথমোক্ত চারিটী ও বৌদ্ধধর্ম্ম এই পাঁচটীই প্রধান। একবারটি ভাবুন এখানে গুরুদেব এই অংশ লিপিবদ্ধ করিলেন কি উদ্দেশ্যে???
মুসলমান ধর্ম্মাবলম্বীগণেরা ভারতবর্ষে আছেন তাহারা কি নিজেদের হিন্দু বলেন, নিশ্চয় না। তাহারা প্রথমে হিন্দুধর্ম্মী ছিলেন পরে তাহারা ঐ ধর্ম্ম গ্রহণ করিবার পর নিজেদের মুসলমান বলিতে লাগিলেন। এমন করিয়া ভারতীয় খৃষ্টান ও বৌদ্ধীষ্ট ইত্যাদি সকলেরই ধর্ম্ম অনন্ত রক্ষা করিয়া চলিতেছে তাহা তাহাদের এক প্রকার অধিকার। প্রথমে তাহারা যে চিন্তাশক্তির ধারায় প্রভাবিত হইয়া ছিল। বিকাশ এবং আত্মমন্থন করিবার প্রয়াসে যে ধর্ম্মই গ্রহণ করুক না কেন সেইটি তাহার আপন। যাহা তাহার উন্নতি হইবার আকাঙ্ক্ষায় পথ প্রাপ্তির আশায় যে ধারায় যাইবে তাহার ব্যক্তি স্বাধীনতা তাহাতে কেহ কোন ও বাঁধা দিতে পারে না। আমরা ভারতীয় জাতির অন্তর্ভুক্ত সকল ধর্ম্মই সমভাবাপন্ন ।
জগতে কোনও ধর্ম্মের প্রকৃত পক্ষে কোন নাম নাই। যেমন জগদীশ্বরের কোনও নাম নাই, যে যাহা বলিয়া ডাকিতে ইচ্ছা করে, তাহার নিকটে সেই নামই প্রধান, তদ্রূপ ধর্ম্মের ও কোনও বিশেষ নাম কোনও সিদ্ধ প্রচারক উল্লেখ করেন নাই। তবে যেমন প্রণব জগদীশ্বর-বাচক বলিয়া ভারতীয় সমস্ত মহাত্মাই স্বীকার করিয়া গিয়াছেন, তদ্রূপ"সত্যধর্ম্ম" এই শব্দ বা এতদর্থক শব্দ সমস্ত প্রচারকই নির্দ্দেশ করিয়াছেন যেমন মনুসংহিতায়, ঈশোপনিষদ, বাইবেল এবং কোরান শরিফে।
সুতরাং প্রকৃত ধর্ম্মমাত্রই "সত্যধর্ম্ম" নামে খ্যাত। য়িহুদী ধর্ম্ম জাতির নামানুসারে, খ্রীষ্টান ধর্ম্ম ও বৌদ্ধ ধর্ম্ম প্রচারকের নামানুসারে এবং মুসলমান ধর্ম্মাবলম্বীদিগের সংজ্ঞানুসারে নাম প্রাপ্ত হইয়াছে। -তত্ত্বজ্ঞান সাধনা।
সত্যধর্ম্ম ঈশ্বর প্রাপ্তির পথ। সত্য পথের পথিক অর্থাৎ সত্য ধারণ পূর্ব্বক ঈশ্বর রাজ্যে গমন করিবার নাম সত্যধর্ম্ম আমরা সত্যেষ্ট। সত্যধর্ম্ম মহাসাগরের এক একটি বিন্দু স্বরূপ অন্যান্য ধর্ম্ম সুতরাং বিন্দুকে কি মহাসাগর বলিবেন ???
0 মন্তব্যসমূহ