গুরু ভক্তি ঈশ্বর ভক্তির পূর্ব্বাবস্থা।
আমার জীবনে গুরুগীতার মাহাত্ব, গুরুদেব বলিয়াছেন যে" গুরুধ্যানের প্রভাবে পরমপিতার ধ্যানে নিমগ্ন হইতে পারিবে"। "গুরুভক্তিই যে ঈশ্বরভক্তর পূর্ব্বাবস্থা"- গুরুতত্ত্ব । তাহা কিভাবে একবারটি দেখা যাউক । প্রথমেই বলি গুরু শব্দের অর্থ মূখ্য বা প্রধান, আবার প্রণব অক্ষরগুরু প্রকৃত গুরু বা মূল গুরু পরমপিতা পরমেশ্বর। ব্রক্ষ্ম স্তোত্রমেব ঈশাষ্টকম্ ইহার চতুর্থ স্তবকে আছে যে,
ত্বং শিক্ষকো মেননুদীক্ষাকোঽসি
ত্বং মেগুরুস্ত্বং গুরুনাথনাথঃ।
আচার্য্যতঽপিত্বয়িবিদ্যতে মে,
ত্বং মন্ত্রদাতাঽপিমনুর্মহাংশ্চ।।
অর্থাৎ তুমি মোর শিক্ষাদাতা তুমি মোর দীক্ষাদাতা আর গুরুনাথ নাথ তুমি গুরু হে আমার আচার্য্যত্ব ও তোমাতে বিদ্যমান, তুমি মন্ত্রদাতা তুমি মন্ত্র সুমহান।।
গুরু অর্থ প্রধান, নাথ অর্থ কর্ত্তা বা মূখ্য-প্রভু এক অর্থে পরমপিতার আর এক নাম "গুরুনাথ" । একটু বিবেচনা করিয়া দেখলে দেখিতে পাইবেন যে, সকল নামই যে তাঁহা হইতে আসিয়াছে। একক্ষনে বক্তব্য এই যে, সকল নামই যে পরমপিতার নাম ইহা বলিয়া তিনিই পরমপিতা হইয়া যাইবেন ইহা নহে। গুরুদেব ব্রক্ষ্মস্তোত্রমে বলিয়াছেন "গুরুনাথ" নাথ তুমি "গুরু" হে আমার এস্থানে পরমপিতা অন্তিম "গুরু"।
আগেই বলিয়াছি যে "গুরুগীতাই গুরুধ্যান" ,তাই গুরু অর্থ ঈশ্বর, গীতা অর্থ সঙ্গীত । "গুরুগীতা" অর্থ "ঈশ্বরসঙ্গত" একপ্রকার পরমপিতার গুণকীর্ত্তন। তহারই ধ্যানে মগ্ন হইয়া চিন্তন করিতে পারিলে পরম প্রাপ্তি হইবে। যে ব্যক্তি মুক্তি লাভ করিতে ইচ্ছুক বা লালায়িত তিনি একাগ্র চিত্তে যদি পাঠ অর্থাৎ সাধনা করিয়া অন্তিম অবস্থা অর্থাৎ একত্ব পাইতে পারে। সেহেতু পরমপিতার সঙ্গেও থাকিতে পারিবে এবং গুরুদেব তো আগে হইতেই আছেন যেমন অভেদ হইয়া। গুরুলোক কথার অর্থ কারণ জগৎ অর্থাৎ একত্বময় প্রেম মহাজগৎ। গুরুগীতা যে প্রকারান্তরে পরমপিতার গুণকীর্ত্তন তাহা কেমন একবারটি দেখা যাউক-
প্রযত্ন পাশ-স্থির চিত্ত দন্ডে-
নাশেষ শাস্ত্রাম্বুধি-মন্থনেন।
জ্ঞানামৃতং যেন পরং প্রদত্তং
তস্মৈ নমস্তুভ্য মচিন্ত্যশক্তে।। ১
তাঁহার সৃষ্টি শাসন তাহা উপদেশরূপ পরম পদার্থ জ্ঞান-প্রেম সুধা যাহা তিনি দান করেণ সেই অসীম অপরূপ নিয়মরূপের মহাসাগর মন্থনের দ্বারা (অবলম্বন) স্থির চিত্ত হইয়া অতি যত্ন সহকারে অষ্টপাশ ষড়রিপুকে দমন অর্থাৎ কামরূপ মহারিপুকে দোষাংশশূন্য করিয়া প্রেমে পরিনত করা, ক্রোধ নামক মহারিপুকে ন্যায়পরায়নতায় পরিনত করা (তেজে পরিণত করা), লোভনামক রিপুকে ব্রক্ষ্মপ্রাপ্তীচ্ছায় পরিণত করা, মোহ অর্থাৎ অজ্ঞানতা দূর (জ্ঞানালোকে উদ্ভাসিত) করা প্রয়োজন, মদ অর্থাৎ অহংকার স্বাত্তিকে পরিণত করা ও মাৎর্য্য অর্থাৎ পরশ্রীকাতরতা যেমন পরের ভালো দেখিলে কষ্ট বোধ হয়, ঐ কষ্টকে আনন্দে পরিণত করা এবং ঘৃণা, লজ্জা,ভয়, আশঙ্কা,জুগুপ্সা, কুল, শীল ও জাতি এই অষ্টপাশ মুক্ত হইলে একত্বমহাসাগরে মহারত্নস্বরূপ জ্ঞানামৃত লব্ধ হয়। হে নাথ তুমি চিন্তা শক্তির অতীত, তাই তোমাকে নমস্কার করি। (১)
( অষ্টপাশ ষড়রিপু এই মহান রত্ন না থাকিলে ঈশ্বরকে পাইতে পারিতাম না ।)
সর্ব্বাণি শাস্ত্রাণি মত-প্রভেদান্
ধর্ম্মাশ্চে সর্ব্বাণি বিপরীত-ভাবান্।
একী চকর্থ স্বগুণ প্রভাবৈ-
র্যস্ত্বং নমস্তুভ্য মচিন্ত্যশক্তে।। ২
হে নাথ সর্ব্ব শাস্ত্রে যত মতভেদ আছে, তাহা তুমি মোচন করো সত্যগুণের মাধ্যম দ্বারা, সেই ধর্ম্মকর্ম্মে যেসব বিপরীত ভাব অবস্থা আছে তাহাও তুমি মোচন কর তোমার প্রেমের দ্বারা। নিজ গুণে সকলকে প্রেমকণাবন্ধনের মাধ্যমে একই সূত্রে বাঁধিয়া রাখিয়াছ, ইহা চিন্তাশক্তির অতীত, তোমাকে প্রণাম করি। (২)
জ্ঞানস্য প্রেম্নঃ করুণা কৃপাদে-
র্ভক্তে র্দয়ায়াঃ সমদর্শনস্য।
বিশ্বাস-সারল্য-মহত্তমত্ব-
ক্ষুধা তৃষ্ণা স্বপ্নবিহীনতানাং।। ৩
হে নাথ তোমাতে জ্ঞান,প্রেম, ভক্তি,দয়া, কৃপাদি ও করুণা গুণের সহযোগে সর্ব্বান্তকরণে দৃঢ়বিশ্বাস দ্বারা সমদর্শন অর্থাৎ ঈশ্বরমগ্ন হওয়া, পরমাভক্তির প্রথম পদক্ষেপ এই অপরিসীম মহান সাধনায় নির্ভরতা রাখিয়া, কষ্ট শিকার পূর্ব্বক দূর্ভেদ্য দুস্তর পথে চলা, তোমার মহান গুণ ক্ষুধাহীন, তৃষ্ণাহীন ও নিদ্রারহিততা ঐ রত্ন ঈশ্বরমগ্ন হইলেই প্রাপ্তি হয়। ক্ষুধা হীন অর্থাৎ পার্থিব ক্ষুধা বিসর্জ্জন দিয়া গুণক্ষুধায় পরিণত করিলেই লোভমোহিত দূর হইবে। এইরূপ তৃষ্ণাহীন অর্থাৎ পার্থিব তৃষ্ণারূপ অবস্থাকে গুণতৃষ্ণায় পরিণত করা যেমন ঈশ্বর প্রাপ্তচ্ছায় পরিণত হইলে ঈপ্সা দূর অর্থাৎ পার্থিব লালসা দূর হইবে। তৎপরে নিদ্রারহিতথা অর্থাৎ ঈশ্বরকোলে ঈশ্বরমগ্ন হইয়া থাকিতে পারা। ঐ পথে অমূল্য রত্ন দিয়া আমাকে ভূষিত করো। (৩)
অভেদ বুদ্ধেশ্চ সুনির্ভরস্য
দূরশ্রুতে শ্চাপিচ দূরদৃষ্টেঃ।
গুণান্তরাণাঞ্চ সদা নিধান
নমো নমস্তুভ্য মচিন্তাশক্তে।। ৪
হে দেবেশ্বর তোমাতে বহু পরিমানে দূরশ্রুতি যেমন দূরে অবস্থান কারিগণের বাক্য শ্রবণে সমর্থ, দূরদৃষ্টি অর্থাৎ দূরে অবস্থান কারিগণের দর্শন এবং আর বহু গুণে সমৃদ্ধ হয়ে আছো তাই তোমাতে সবই স্বচ্ছ। তুমি চিন্তা শক্তির অতীত তোমাকে প্রণাম করি বার বার প্রণাম করি ঐ চরণে। (৪)
ত্বং মে গুরো রক্ষক তারকশ্চ,
ত্বং মে গুরো সূন্নতি সাধকশ্চ,
অনন্ত বশ্যোঽহ মনন্তভাবৈ-
র্নমো নমস্তুভ্য মচিন্ত্যশক্তে।। ৫
হে দেবেশ্বর তুমি আমাকে প্রতি মুহুর্তে রক্ষা করিতেছ, হে নাথ তুমি মোরে উদ্ধার করিবার জন্য ব্যাকুল। আমি যে অনন্ত ভাবে ভাবিতে পারিতেছি তাহা তোমারি দয়ায়, তাহা মোর চিন্তা শক্তির অতীত! তোমাকে প্রণাম এই দীন হীনের। (৫)
ত্বয়ি প্রসন্নে জগতী প্রসন্না
সুরাসুরাঃ সর্ব্বে ময়ি প্রসন্নাঃ।
ক্রুদ্ধে ত্বয়ি ক্রোধময়ঞ্চ সর্ব্বং
নমো নমস্তুভ্য মচিন্ত্যশক্তে।। ৬
হে নাথ তুমি যখন প্রসন্ন হও তখন জগতের যাহা কিছু দেখিতে পাই তাহার মধ্যে পাহাড়- পর্ব্বত, নদী-নালা, বৃক্ষ-লতা, জড়-চেতন, বায়ু-তাপ, পশু-পাখি, কীট-পতঙ্গ মানব-মানবী ও দেবতা ও দানব ইত্যাদি সকলেই আমার প্রতি প্রসন্ন হয় , আর তুমি যখন আমার প্রতি প্রসন্ন না হও তখন উহারাও কুপিত হইয়া যায়। আর যাহাদের চিন্তাতেও আনতে পারিনা তাহারাও আমার প্রতি ক্রদ্ধ হইয়া বসে, তাহা অপূর্ব্ব এবং চিন্তা শক্তির অতীত রূপ ঐশর্য্য, তোমাকে প্রণাম করি। (৬)
বাবারাণসী যত্র পদং তব স্থিতং
গয়া দয়া যত্র কণামিতা স্থিতা।
যতোযত স্তে গুণকীর্ত্তনং গুরো
সর্ব্বাণি তীর্থানি তত স্ততো দ্রুবম্।। ৭
তোমার গুণকীর্ত্তন যেই স্থানে হয় পাপ তাপ নাই থাকে, সেই স্থান পবিত্র জ্যোতির্ময়ে পরিণত হয় অর্থাৎ মুক্তিরপথে পরিণত হয়, তোমার এক বিন্দু দয়ায় মুক্তি প্রাপ্তি হয়। হে নাথ তোমার গুণকীর্ত্তন যেই স্থানে হয় নিশ্চিত সেই স্থান সকল পূর্ণ উন্নতির পথে পরিণত তুমি সুন্দর তোমার তুলনা নাই, তুমি মন্ত্র দাতা তোমায় নমস্কার । (৭)
নমস্তুভ্যং নমস্তুভ্যং
নমস্তুভ্যং নমোনমঃ।
যস্ত্বং করুণয়া দেব
গুরুরূপেণ শিক্ষকঃ।। ৮
হে নাথ তোমার কাছে আমি অতি ক্ষুদ্র, প্রণতি তোমায়, বার বার প্রণাম করি, নমি প্রভু, হে দেবেশ্বর তোমার চরণে আমি আছি। যে করুণা গুণে তুমি শিক্ষক আমার, সকল বিষয়ে প্রধান তুমি সর্ব্বেশ্বর! তোমা নমি বারবার। (৮)
(বিশ্বব্রহ্মাণ্ড সকলই প্রেমশিক্ষা-ভান্ডার তাহা হইতে জ্ঞান-প্রেম সহযোগে, তাহা হইতে শব্দ করিতে পারি অফুরন্ত গুণ সমষ্টি। হে নাথ তুমি ধন্য তোমার অযাচিত করুণা ধন্য।)
নমস্তুভ্যং নমস্তুভ্যং
নমস্তুভ্যং নমোনমঃ।
যস্ত্বং করুণয়া দেব
মাতৃরূপেণ পালকঃ।। ৯
প্রাণের সহিত প্রণাম করি বার বার প্রণতি, হেদেবেশ্বরী তোমার চরণে আছি। তুমি মা মাতৃঈশ্বর (বিশ্ব জননী রূপী) মমতা গুণে আমাকে সর্ব্বক্ষণ কোলে করিয়া আছ এবং নিজ করুণাগুণে আমায় পালন করিতেছ। (৯)
(শত অন্যায় করিলেও তুমি ফেলিয়া দেও না, তোমায় না ডাকিয়া থাকিলেও তোমার মমতার তুলনা নাই।মহোন্নত সাধক ও নিকৃষ্ট মনুষ্য উভয়েই তোমার কাছে সমান।)
নমস্তুভ্যং নমস্তুভ্যং
নমস্তুভ্যং নমোনমঃ।
যস্ত্বং করুণয়া দেব
পিতৃরূপেণ সর্জ্জকঃ।। ১০
প্রাণের সহিত প্রণাম করি বার বার, প্রণতি, হে দেবেশ্বর তোমার চরণে আছি। পিতৃ স্নেহরূপে তুমি ধরিয়া আছ এবং নিজ করুণাগুণে সৃষ্টি করিয়াছ। তুমি মোর উন্নতির জন্য স্তরে স্তরে সাজাইয়া রাখিয়াছ সত্যধর্ম্মে অনন্ত প্রেমগুণ খনি, তাহা মোরে সাজাইবার নিমিত্ত। তুমি ধন্য তোমার অযাচিত করুণা ধন্য । (১০)
নমস্তুভ্যং নমস্তুভ্যং
নমস্তুভ্যং নমোনমঃ।
যস্ত্বং করুণয়া দেব
পত্নীরূপেণ মোহনঃ।। ১১
তোমার ঐ সুন্দর চরণে বার বার প্রণাম করিতেছি, হে দেবীশ্বর (স্ত্রীলোক দেবেশ্বর বলিবে) তোমার চরণে পড়ে আছি। তুমি পত্নীর (স্ত্রীলোক পতীর) রূপ ধারণ করিয়া প্রেমাকর্ষণে মহিত করিতেছ এবং নিজ করুণাগুণে সকল সুদুর্য্যয় কামনা প্রেমমনায় পরিনত করিতেছ। (১১)
(হে প্রেমরত্ন তুমি কি অপূর্ব্ব ধন, প্রেমনাথ রূপাতীত অরূপ দর্শন। তুমি প্রেম মধুরেণ অমৃত রতন, নিজগুণে প্রেমদানে জগমোহন। সুন্দর মিলন প্রভু মঙ্গল আলয়, প্রম শান্তি ভূমানন্দ ব্রহ্মাণ্ডময়। বহুরূপী প্রেমে মগ্ন অতুল আশ্রয়, আনন্দে গীতিছন্দে হৃদয় মলয়।)
নমস্তুভ্যং নমস্তুভ্যং
নমস্তুভ্যং নমোনমঃ।
যস্ত্বং করুণয়া দেব
পুত্ররূপেণ নন্দনঃ।। ১২
তোমার ঐ সুন্দর চরণে বার বার প্রণাম করিতেছি, হে দেবেশ্বর তোমার চরণে পড়ে আছি। তুমি পুত্র রূপে আমাকে ধরিয়া আছ এবং নিজ করুণাগুণে স্নেহ ছায়ে আনন্দ প্রদান করিতেছ। (১২)
নমস্তুভ্যং নমস্তুভ্যং
নমস্তুভ্যং নমোনমঃ।
যস্ত্বং করুণয়া দেব
কন্যারূপেণ শান্তিদঃ।। ১৩
তোমার ঐ সুন্দর চরণে (মঙ্গল রূপ চরণ) বার বার প্রণাম করিতেছি, হে দেবীশ্বরি তোমার চরণে পড়ে আছি। তুমি করুণাগুণে কন্যার রূপ ধরিয়া আছ আমার কাছে ও নিজ দয়াগুণে শান্তি প্রদান করিতেছ। (১৩)
নমস্তুভ্যং নমস্তুভ্যং
নমস্তুভ্যং নমোনমঃ।
যস্ত্বং করুণয়া দেব
বন্ধুরূপেণ সৌখ্যদঃ।। ১৪
তোমার ঐ সুন্দর চরণে বার বার প্রণাম করিতেছি, হে দেবেশ্বর তোমার চরণে পড়ে আছি। তুমি বন্ধুর রূপ ধারণ করিয়া আছ আমার কাছে ও নিজ দয়াগুণে সুখ দিয়া যাইতেছ। (১৪)
(বন্ধন সুখী করে আছ যেমন গুণে সাদৃশ্য রূপী সুখ।)
নমস্তুভ্যং নমস্তুভ্যং
নমস্তুভ্যং নমোনমঃ।
যস্ত্বং করুণয়া ব্রক্ষ্য-
ন্নভেদে ভেদ-ভাবদঃ।। ১৫
তোমার ঐ মঙ্গলরূপ সুন্দর চরণে বার বার প্রণাম করিতেছি, হে দেবেশ্বর তোমার চরণে পড়ে আছি। করুনাগুণে তুমি এই সুন্দর ভুবনে অভেদ (গুণের মধ্যে মিলেমিশে) থেকে ও নিজ দয়াগুণে অন্তরে ভেদভাব (গুণের মিলন) দান করিতেছি। (১৫)
নমস্তুভ্যং নমস্তুভ্যং
নমস্তুভ্যং নমোনমঃ।
যস্ত্বং করুণয়া দেব,
ভেদে চাভেদ-ভাবদঃ ।। ১৬
তোমার ঐ মঙ্গলরূপ সুন্দর চরণে বার বার প্রণাম করিতেছি, হে দেবেশ্বর তোমার চরণে ( আবার) পড়ে আছি। তুমি যে অভেদভাব (সর্ব্বময় যেমন অন্তরে ও বাহিরে) প্রদান করিতেছ তাহা এই পৃথিবীতে ভেদ ভাবময় (গুণের মিলন) অবস্থায় দেখিতে পাইতেছি। (১৬)
(গুণের সাদৃশ্য ও গুণের মিলন এবং গুণের আকর্ষণে তাহা অপূর্ব্ব, হে নাথ তুমি ধন্য।)
নমস্তুভ্যং নমস্তুভ্যং
ত্বাং নমামি পুনঃ পুনঃ।
অভেদস্ত্বং ময়া সার্দ্ধং
সর্ব্বৈশ্চাহং ত্বদর্চ্চয়া।। ১৭
তোমার ঐ মঙ্গলরূপ সুন্দর চরণে বার বার প্রণাম করিতেছি, হে দেবেশ্বর তোমার চরণে পড়ে আছি সদা আমি। তুমি এখন অভেদ হয়ে ( মিলেমিশে) আছ আমার সঙ্গে, আমি ধন্য, তোমার গুণকীর্ত্তন করি সকলের সন্মুখে। (১৭)
( তোমার গুণের খেলায় মাতাও মোরে হে নাথ তুমি কৃপা কর। )
ত্বদনুগ্রহ সামর্থ্যাৎ
পাপানি নিখিলানি মে।
বিদূরিতানি, নৈর্ম্মলং
জাতঞ্চাপি ত্বদর্চ্চয়া।। ১৮
হে দেবেশ্বর তুমি এত ভালবাসো তোমার সদাগ্রহে আমার সর্ব্ব পাপ-তাপ দূরে গিয়া নিশ্চয় ধ্বংস হইয়াছে। আমার হৃদয়ে নির্ম্মলভাব (প্রশান্তিভাব) জমা হইতেছে। কেবল তোমার করুণাগুণে তাহা সিদ্ধ হইল! তোমার গুণকীর্ত্তনের জন্যই ইহা প্রাপ্তি। (১৮)
নমস্তুভ্যং নমস্তুভ্যং
ত্বং নমামি পুনঃ পুনঃ।
ত্বং স্থিতে স্থিতং বিশ্ব
মৎস্থিতৌ চ তবার্চ্চয়া।। ১৯
তোমার ঐ মঙ্গলরূপ সুন্দর চরণে বার বার প্রণাম করিতেছি, হে দেবেশ্বর তোমার চরণে পড়ে আছি সদা আমি। হে দেবেশ্বর তুমি যেখানে থাক যদি চাহ এ বিশ্ব দাঁড়াইয়া যায়, আবার তোমার গুণকীর্ত্তন কালে এই ভৃত্যের-ও ঐ অবস্থায় পরিণত হয়। (১৯)
(ঈশ্বরধ্যানভামগ্নে উহা সম্ভবে, হে নাথ তুমি ধন্য।)
নমস্তুভ্যং নমস্তুভ্যং
ত্বং নমামি পুনঃ পুনঃ।
নির্ব্বিকারেণ বিকৃত-
রূপেণাত্মা প্রদর্শিতঃ।
নিস্কামশ্চ মহাকামি-
রূপেণ মোহনার্থকম্।। ২০
তোমার ঐ মঙ্গলরূপ চরণে বার বার প্রণাম করিতেছি, হে প্রাণেশ্বর তুমি অনন্ত বিকার শূন্য হইয়াও সকলেরে দেখাইতেছ মায়া রূপ বিকারাবস্থা। তোমার অনন্ত গুণাকর্ষণের কারণে নিস্পৃহ আত্মায়ও তুমি মহিত করিতেছ। হে দেবেশ্বর তোমার এই অপরূপ মহাকামিরূপের কারণে (মহাকর্ষীত রূপ) নমি তোমায় ঐ চরণে। (২০)
নমস্তুভ্যং নমস্তুভ্যং
প্রণমামি পুনঃ পুনঃ।
অনির্ব্বাচ্যা ! বিনির্দ্ধায্য !
ত্বাং নমামি পুনঃ পুনঃ।। ২১
তোমার ঐ মঙ্গলরূপ চরণে বার বার প্রণাম করিতেছি, হে দেবেশ্বর তোমার চরণে পড়ে আছি সদা আমি। বাক্যে যাহা প্রকাশ করা যায় না (বাক্যাতিতাবস্থা) ! এ অপরূপ অবস্থা যাহা অর্ণিরূপিত ভাব (রূপাতিতবস্থা) ! আমি বার বার নত হইয়া প্রণাম করিতেছি হে দেবেশ্বর। (২১)
এষা গীতা মহাভাবা
ভক্তি- মুক্-প্রদায়িনী।
পঠ্যতে যেন যত্নেন
চৈকাগ্রেণ মুমুক্ষুণা।
গুরুলোকে ময়া সার্দ্ধং
স্থাতব্যং তেন নিশ্চিতম্।। ২২
এই ঈশ্বরসঙ্গীত ঈশ্বরমগ্ন হইয়া পাঠ করিলে ভক্তি সহযোগে মক্তি হয় নিশ্চয় ইহা জিনিও। মুক্তি অভিচ্ছু ব্যক্তি একাগ্র হইয়া যদি গুণকীর্ত্তন করে ঈশ্বরলোকে সেই স্থানে একত্ব-এর সহিত থাকিতে পারিবে। (২২)
ঈশ্বরসঙ্গীত সমাপ্ত।
ব্যাখ্যা- আদিষ্ট নিরুপম।
0 মন্তব্যসমূহ