পরলোকে দীক্ষা কার্য্যের প্রয়োজন হয় না।


   পরলোকে দীক্ষা কার্য্যের প্রয়োজন হয় না।

   ভগ্নাংশের অখন্ড আকারে পরিবর্তন সাধনই, সৃষ্টি হইবার মূল বিষয়। সৃষ্টি হইতেই সমস্ত ইহামূত্রের জন্ম হইয়াছে। ইহলোক হইতে উন্নতি করিয়া পরোলোকে যাইতে হয়। প্রথম শ্রেণীতে অক্ষর জ্ঞান না করিয়া , কি করিয়া দ্বাদশ শ্রেণীর গ্রন্থ অধ্যায়ন করিবেন ? প্রথম শ্রেণী অর্থাৎ ইহজগৎ, ইহজগতে প্রেমের সীমাবদ্ধ ভাবের জ্ঞান (ভক্তি) না করিয়া পরলোকে যাইয়া দিশাহারা হইতে হয়। যেমন যেমন উন্নতি তেমন তেমন স্তরে তাহাদের জায়গা নির্ধারিত হয় । উন্নতি হইলেই যে পরলোকে গিয়া সত্যধর্ম্ম লাভ করিতে পারিবে, তাহা অসম্ভব । ৩৯৯ শ্রেণীস্থ আত্মারাও পরলোকে সত্যধর্ম্ম লাভ করিতে পারেন না । কোন একটি গুনে একত্ব হইলে ঐ গুনের প্রতি যে প্রেমের সীমাবদ্ধ ভাব রহিয়াছে অর্থাৎ তৎ গুনের প্রতি ভক্তির পরাকাষ্ঠা প্রাপ্ত হইলে  হইয়া থাকে । একটি  পরমপিতার প্রতি ভক্তির  কিঞ্চিৎ মাত্র প্রাপ্তি । ভক্তি গুনে  হইলেও পরমপিতার প্রতি অনন্ত ভক্তির  অসম্ভব, কেননা তিনি পূর্ণ আমরা অপূর্ণ ।  প্রাপ্ত বিনা সত্যধর্ম্মে প্রবেশ করিতে পারিতেন না । এক মাত্র উন্নতির পরাকাষ্ঠাই অর্থাৎ একটি মাত্র একত্ব প্রাপ্ত  হইলেই সাধক গনেরা পরলোকে সত্যধর্ম্মে প্রবেশ করিতেন । ইহাই প্রবেশের দ্বারা এবং ইহাই পরলোকের সাধারণ নিয়ম ছিল ।


       অন্যান্য ধর্ম্মের প্রয়োজন ছিল , না হইলে সত্যধর্ম্ম আসিতে পারিত না। উহাও প্রথম শ্রেণীর অক্ষর জ্ঞানের ন্যায়। প্রকৃতির নিয়মে ধর্ম্ম মন্থনের পর অমৃত স্বরূপ পরমপিতা একমাত্র অভিপ্রেত  পথ সত্যধর্ম্ম ১৮৮৫ সালের ২০শে অক্টোবর সর্ব্বপ্রথম সাধারণের জন্য অভিপ্রেত হইল ।

     ইহলোক সীমাবদ্ধ ভাবে আছে। আর ভক্তি সীমাবদ্ধ ভাব। পরলোকে ভক্তি গুণটি নাই। সুতরাং ভক্তি গুণ অর্জনের জন্যই ইহলোকে আসিতে হয়। অতএব ভক্তি বিনা দীক্ষা সম্ভব নহে।

    পরমপিতার  অমোঘ ইচ্ছায় জগতের মঙ্গল সাধন করিবার  জন্য স্বীয় পুত্রকে সত্যধর্ম্মের কান্ডারি করিয়া ইহলোকে পাঠাইলেন । তিনিই সাধারণ পাপী-তাপী আধমগণকে সর্ব্বপ্রথম প্রবেশের দ্বার  খুলিয়া দিলেন । পার্থিব ভক্তির পরাকাষ্ঠা লাভ করা ইহ জগৎ ভিন্ন অসম্ভব । ইহ  জগতের নিয়ম অনুযায়ী একবার এম এ পাশ করিলে , পরবত্তী বহু সংখ্যক এম এ পরীক্ষায় বসা যায় । তেমনই ইহ জগৎ হইতে ভক্তিগুনের মাধ্যমে সত্যধর্ম্মে প্রবেশ অর্থাৎ গুরুকে বরণ করিয়া তাহার কাছ হইতে দীক্ষা রূপ জন্মের মাধ্যম হইতেই যাইতে হয় । 



       মঙ্গলময়ের মঙ্গলরাজ্যে যাবতীয় মিশ্রগুনের মধ্যে ভক্তি অতি উৎকৃষ্ট গুন । প্রেমের হীনতাকে বা প্রেমের সীমাবদ্ধ ভাবকে ভক্তি দ্বারা উপকারী বা আপন অপেক্ষা উন্নত মহাত্মার প্রতি কৃতজ্ঞতা সহকারে মন আকৃষ্ট হয় , যে গুন দ্বারা সুখে সুখ, দুঃখে দুঃখ ইত্যাদি ভাবসকল "ইনি আমা অপেক্ষা উন্নত" এই জ্ঞান সহকারে সীমাবদ্ধ ভাব উপস্থিত হয়, যে গুনে ঐ গুনের ভাজনের দুঃখ নিবৃত্তি ও সুখ বৃদ্ধি করা জীবনের মহাব্রত বলিয়া প্রতীয়মান হয়, ফলতঃ যে গুন দ্বারা প্রেম প্রবন্ধে প্রেমের যে সকল লক্ষণ নিদ্দিষ্ট হইয়াছে, তাৎসমুদয়ের অধিকাংশ অপেক্ষাকৃত অল্পতর ভাবে উপস্থিত হয়, তাহাকে ভক্তি কহে।


 অথবা নিজের স্বার্থের জন্য নির্ভরতা অঙ্কুর হৃদয়ে উদিত হইয়া অন্যের প্রতি যে আসক্তি বা অনুরাগ উৎপাদন করে, তাহাকে ভক্তি কহে। মূলকথা ভয়ে ভয়ে ভালোবাসাকে ভক্তি কহে। ( সত্যধর্ম্ম ) ভক্তি গুন ইহ জগতে মিশ্রিত অবস্থায় উদিত হয় কিন্তু পরলোকে সুপ্ত অবস্থায় থাকে।  ভক্তি গুন অর্জনের জন্যই ইহলোকে বার বার আসিতে হয়, কেননা এই ধর্ম লাভ করিতে গেলে( ১) প্রেম,  (২) সরলতা ,  (৩)  পবিত্রতা , (৪) একাগ্রতা , (৫) ভক্তি ও ঈশ্বরজ্ঞান আছে এবং (৬)  যাহারা মন কুপথে গমন করে না, (৭)  সম্পত্তি বিষয়ে নিস্পৃহতা , (৮)  নিষ্পাপ অবস্থা বা মূত্তিমতী পবিত্রতা, (৯) অন্যদীয় পাপগ্রহণ ক্ষমতা,(১০) লোকের উপকার ভিন্ন অপকার করিব না,এই বিষয়ে দৃঢ়নিশ্চয়তা, (১১) সিদ্ধিসমূহ লাভের উপযুক্ত গুণ,(১২) কাম-ক্রোধহীনতা ও(১৩ )অন্ততঃ সমস্ত মনুষ্যকে সহোদরবৎ দর্শন ও তদনুরূপ আচরণ করা ইত্যাদি ইত্যাদি ইত্যাদি।" এই সকল গুণবিশিষ্ট হইলে পারলৌকিক মহাত্মাদিগের নিকট হইতে এই ধর্ম্ম লাভ করা যায়। কিন্তু ঐ সকল গুণ সাধারণের লাভ করা দূরে থাকুক, ভূমণ্ডলে কোটি কোটি বৎসরের মধ্যে কদাচিৎ ২/১ জনে লাভ করিতে পারেন।


 এজন্য কেবল পূর্ব্ব উপায়ে এই ধর্ম্ম সাধারণের সুপ্রাপ্য নহে। অথচ অনন্ত করুণাময় পরমপিতার ইচ্ছা এই যে, এই ধর্ম্ম সাধারণের সুপ্রাপ্য হয়। এজন্যই উপযুক্ত গুণসস্পন্ন সাধকের প্রয়োজন। পূর্ব্বোক্ত প্রচারকেরা ভারপ্রাপ্ত সাধকের নিকটভর্ত্তী হইয়া জনসমাজে প্রচার করিতে উদ্দ্যত হইয়াছেন। উল্লিখিত সাধকের নিকট হইতে যাঁহারা এই ধর্ম্ম গ্রহণ করিবেন, তাঁহাদিগের নিম্নলিখিত সাধকের নিকট হইতে যাঁহারা এই ধর্ম্ম গ্রহণ করিবেন, তাঁহাদিগের নিম্নলিখিত গুণগুলি থাকা আবশ্যক। ধর্ম্মার্থীর যথা- (১) সহজ জ্ঞান, (২) নির্ভরতা অর্থাৎ পরমপিতা যাহা করিতেছেন, তাহা আমার মঙ্গলের জন্যই হইতেছে। তিনি অনন্তকালেও কখনও অমঙ্গল বিধান করিবেন না ও (৩) বিশ্বাস অর্থাৎ তিনিই আমার সমুদায়। 




উল্লিখিত গুণবিশিষ্ট হইয়া, ( পারলৌকিক মহাত্মারা যাঁহাকে এই ধর্ম্মের যাবতীয় মম্ম জ্ঞাপিত করিয়াছেন এবং গুণরাশি দর্শনে যাঁহাকে প্রকৃত উপযুক্ত পাত্র বিবেচনা করিয়া, প্রথমে পারলৌকিক মহাত্মারা, পশ্চাৎ স্বয়ং পরমপিতা এই ধর্ম্ম প্রচারাথে অনুমতি করিয়াছেন, ) সেই সাধকের নিকটে দীক্ষিত হইলেই এই ধর্ম্ম অবলম্বন করা যায়। ইহাই সত্যধর্ম্মে ইহলোকের নিয়ম।

     গুরুতত্ত্বে গুরুদেব গুরু হইবার উপযুক্ত গুণ লিখিতে গিয়া মহাত্মা ভোলানাথের উল্লেখ করিয়াছেন তিনি মহানির্ব্বাণ তন্ত্রে বলিয়াছেন যে (১৬) নং আছে দেশবাসী - দেশ অর্থাৎ ভূমির অংশবিশেষে অবস্হানকারী অর্থাৎ স্হূলদেহধারী। তাহা হইলে পরলোকে স্হূলদেহধারী কি করিয়া সম্ভব?


      কেহ যদি মনে করেন সত্যধর্ম্মের সামান্য উপকার (কিছু দানাদি) করিলেই সে পরলোকে যাইয়া পরমপিতার রাজ্যে গমন করিতে পারিবে অর্থাৎ দীক্ষা পাইবে ইহা হইতে পারে না প্রকৃত ভক্তি গুণ অর্জন ছাড় কি করিয়া সম্ভব ? প্রকৃত উন্নতি বিনা প্রেম গুণের সীমাবদ্ধ ভাব বোঝা যাইবে কি করিয়া? তাহা হইলে উন্নতির দরকার হইত না,দানাদির মাধ্যমে সহজেই উন্নতি হইত। সত্যধর্ম্ম এত সহজ সাধ্য নয় ।মহৎ দানের বিষয়ে সমাজে ভুরি ভুরি উদাহরণ আছে। দান একটি মহান গুণ, প্রকৃত দান আত্মোন্নতী। মূল কথা উন্নতির চরম সীমা বিনা পরলোকে সত্যধর্ম্মে স্থান পাওয়া যায় না।

                -আদিষ্ট নিরুপম।


একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ