ষট্ চক্র-বিষয়ে।



    ষট্ চক্র

    মেরুদণ্ডের দুইদিকে গড়া ও পিঙ্গলা নামে দুইটী নাড়ী আছে। ঐ ইড়ার দক্ষিণে ও পিঙ্গলার বামভাগে সুষম্না নাড়ী আছে। ঐ সুষম্নার মধ্যে বজ্রাখ্যা নাড়ী ও তাহার মধ্যে চিত্রিণী নাড়ী অবস্থিতি করে। দেহে মধ্যে ৭টী স্থানে ৭টী পদ্ম সুষম্নায় গ্রথিত আছে। যথা, -মূলাধার, স্বাধিষ্ঠান, মণিপুর, অনাহত, বিশুদ্ধ, আজ্ঞা ও সহস্রদল। মূলাধার বা আধারপদ্ম পায়ুদেশের কিঞ্চিৎ উর্দ্ধভাগে, স্বাধিষ্ঠান লিঙ্গমূলে, মণিপুর নাভিমূলে, অনাহত হৃদয়ে, বিশুদ্ধপদ্ম কন্ঠদেশে, আজ্ঞাপদ্ম ভ্রূমধ্যে এবং সর্ব্বোপরি মস্তিষ্কে সহস্রদল পদ্ম বিদ্যমান আছে। এই সকল স্থানে যে সকল বীজ আছে, তাহা উপাসনা গ্রন্থে দেখ।

    ঐ সকল বীজগুলি বস্তুতঃ বাঙ্গালা অক্ষরে লিখিত নহে। উহারা বৈদিক ভাষার বর্ণমালা অনুসারে লিখিত। বৈদিক বর্ণমালা সাধারণ্যে প্রচারের অদ্যাপি অনুমতি প্রাপ্ত হওয়া যায় নাই বলিয়া এস্থলে লিখিত হইল না।

     ঐ গুলি বস্তুতঃ পদ্ম নহে, পদ্ম বলিয়া রূপক করা হইয়াছে মাত্র। শরীরাভ্যন্তরস্থ নাড়ীবিশেষের সংযোগে ঐ গুলি উৎপন্ন। সুতরাং কোন কোন পদ্ম লোহিত দলবিশিষ্ট, কেননা সে গুলি ধমনীর, কৈশিকার অথবা ফুসফুসীয় শিরার সংযোগে গঠিত; কোন কোনওটী কৃষ্ণদল বিশিষ্ট, কেননা সে গুলি শিরা সংযোগে বা ফুসফুসীয় ধমনী দ্বারা নির্মিত; কোন কোনওটীর কতিপয় দল কৃষ্ণবর্ণ ও কয়েকটী লোহিত বর্ণ, কেননা সেগুলি শিরা ও ধমনী উভয়ের সংযোগে রচিত এবং কোন কোনওগুলি শুভ্রবর্ণ, কেননা সে সকল, স্নায়ুযোগে বিরচিত। আর কোন কোনওটী মিশ্রবর্ণ দলশোভিত, কেননা সে সকল পূর্ব্বোক্ত ও অন্যান্য নাড়ীসমূহ সংযোগে উৎপন্ন।

     উল্লিখিত ৭টী পদ্ম যে সকল দলের সংখ্যার উল্লেখ করা হইয়াছে, ঐসমস্তও বৈজিক বর্ণমালার আকার অনুসারেই হইয়াছে। নতুবা চিত্রে যেরূপ আকার থাকে, ঐরূপ উহাদিগের আকৃতি নহে। প্রকৃত আকৃতি কি? তাহা বৈদিক বর্ণমালায় জ্ঞানলাভ করিলেই সৎ ও স্ত্রীরা অনায়াসে বুঝিতে পারিবেন।

     নাড়ী-সংযোগোৎপন্ন উল্লিখিত আকৃতির সংখ্যা ৬৮টীর অধিক হইলেও তন্মধ্যে ৫০টী প্রধান। এজন্য আর্য্যেরা বর্ণসংখ্যাও পঞ্চাশ নির্দ্দেশ করিয়াছেন। এবং এজন্যই 'ক্ষ' সংযুক্ত বর্ণ হইলেও উহাকে মূল বর্ণ-মধ্যে গণনা করা হইয়াছে। ঐ আকৃতি গুলিই বৈজিক ভাষার বর্ণের আকার।

     এক্ষণে বিবেচনা করিয়া দেখ, যদি উল্লিখিত বীজ-সমূহের মধ্যে কোনও বীজের কোনো পরিবর্ত্তন হইবার উপক্রম হয়, তবে পীড়া হইবার সম্ভাবনা কি না এবং পুনরায় পূর্ব্বাকারে স্থাপিত হইলে উহা আরাম হয় কি না? যদি হয়, তবে এক্ষণে দেখ, 'মা' বলিলেই বা ভক্তিভাব অধিক হয় কেন এবং 'মাতা' বলিলেই বা তত হয় না কেন? 'মা' এইটী ওষ্ঠ্য ও কন্ঠ্য বর্ণ, কিন্তু 'মাতা'এই পদে ওষ্ঠ্য ও কন্ঠ্য ভিন্ন দন্ত্য বর্ণও আছে, সুতরাং 'মা' উচ্চারণের পরে যে ভক্তি-স্রোত উর্দ্ধদিকে যাইতেছিল, 'তা' উচ্চারণে তাহা নিম্নস্থ হইল, সুতরাং ভক্তির আধিক্য হইতে পারিল না। আবার ব্যাকরণ-শাস্ত্রে বর্ণের যে সকল উচ্চারণ-স্থান নির্দ্দিষ্ট আছে, সংযোগাবস্থায় তদ্ব্যতীতও উহাদিগের উচ্চারণ-স্থান আছে। এসকল বিষয়ের যথাযথ বিবরণ অতি গুহ্য ও বিস্তৃত, এজন্য এস্থলে লিখিত হইল না। প্রচলিত সর্ব্বভাষাশ্রেষ্ঠ সংস্কৃত ভাষায় এ বিষয়ের কিছু কিছু অংশমাত্র আছে, যথা-

                    শিক্ষাশাস্ত্রে-
               হকারং পঞ্চমৈর্যুক্তম্
                     অন্তস্থাভিশ্চ সংযুতং।
               ঔরস্যং তং বিজানীয়াৎ
                      কন্ঠ্য মাহু রসংযুতং।।

 অর্থাৎ
     
      হকার পঞ্চমবর্ণ বা অন্তস্থাবর্ণ সংযুক্ত হইলে বক্ষঃপ্রদেশ হইতে উচ্চারিত হয়। আর অসংযুক্ত হকার কন্ঠদেশ হইতে উচ্চারিত হয়।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ