গুণ নিরাকার বলিয়াই উপাসনা করিতে পারি কেননা গুণকেই আত্মার আভরণ সম্ভব।
সত্যধর্ম্মানুসারে কল্পিত দেবদেবীর ছবি অথবা মূর্ত্তি রাখা ও তাঁহাকে প্রণাম পর্য্যন্ত করা যায় না।
এই বিষয় গুরুলিপিতে আছে, (২য় খণ্ড নং ৩৪ পৃষ্ঠা) মৃন্ময় বা পস্তরময় বিগ্রহকে প্রণাম করিবে না-বলায়- "দেবদেবীর প্রতি ভক্তি করিবে না"-ইহা বুঝিও না। দেব-দেবীর প্রতি প্রগাঢ় ভক্তি করিবে।
দেবদেবীদের প্রতি ভক্তি করিবে। দেবদেবীগণ অর্থাৎ হিন্দু-শাস্ত্রানুসারে, ব্রহ্মা, বিষ্ণু, মহাদেব, দুর্গা, কালী, মনসা, শীতলা প্রভৃতি এবং খ্রীষ্টানাদি শাস্ত্রানুসারে, পবিত্র আত্মার প্রতি ভক্তি করিবে। ইঁহারা সকলেই এই পৃথিবীতে জন্মগ্রহণ ও আত্মোন্নতি-সাধনপূর্ব্বক পরলোকে গমন করিয়াছেন, এবং পরমানন্দময় ধামে অদ্যাপি অবস্থিতি করিতেছেন করিতেছেন। -ধর্ম্মার্থীর কর্ত্তব্য।
"এই পূজা (দেব-দেবী) সূক্ষ্মভাবে কেবল মন্ত্রোচ্চারণ দ্বারা সম্পন্ন করাই সর্ব্বাপেক্ষা প্রধান......প্রতিভায়, ঘটে বা পটে ঐ পূজা করিতে পারে। কিন্তু ইহা অধমকল্প। আর এই প্রকার পূজার সময়ে যাহাতে দেবদেবীর আবির্ভাব হয়, এরূপ করিতে না পারিলে এ পূজায় বিশেষ কোনও ফল হয় না।" -ধর্ম্মার্থীর কর্ত্তব্য।
অন্যের একটি ছবিআপনার সম্মূখে রাখিলে কি আপনি আপনার ছবি বলিয়া মানিয়া লইতে পারিবেন? নিশ্চয়ই নহে। তাহা হইলে কি করিয়া ঐ দেব বা দেবীর ঐ মূর্তি বা ছবির প্রতি শ্রদ্ধা অথবা ভক্তি হইবে? আমরা সত্যের পূজারী মিথ্যাকে অবলম্বন করিবে কি করিয়া? ভক্তির আতিশয্যে প্রকৃত সত্য সম্মূখে উপস্থাপিত হইবার পর তিনিও পরিশেষে বুঝিতে পারেন প্রকৃত স্বরূপ। ইহাতে বহু জন্ম অতিবাহিত হইয়া যায়। সর্ব্বানন্দ বহু জন্ম অতিবাহিত করিয়াছিলেন ভগবতীর দর্শন লাভ করিতে। অতএব মিথ্যা পরিত্যাগ পূর্ব্বক সত্য অবলম্বনে মনোনিবেশ করিলে অতি শিঘ্রই প্রকৃত রূপে দেবদেবীর রূপ সম্মূখে উপস্থিত হইবে।
"গুরু যাহা যখন আদেশ করিবেন তখনই তাহা করিবে দোষগুণ বিচার করিওনা।
উন্নতি লাভের জন্য সমদর্শন সাধনা যদি প্রথম সোপান অথবা প্রথম সিঁড়ি হয়, তাহা হইলে সাধনার পর কি তাহা নিম্নমূখী ধাবিত হইবে সত্যধর্ম্ম একমাত্র আত্মোন্নতী লাভের ধর্ম্ম।
সঙ্গীত নং ১২৩ আছে যে "....বাহ্য পূজা অধমের অধম"। সঙ্গীত নং ৯ "উপপতিরতা প্রায় উপধর্ম্ম পাপময় ধর্ম্মবোধে অধর্ম্মেতে সাধু নাহি রত হয়।..." গুরুদেব আরও বলিয়াছেন যে গুরুকে সর্ব্বপরি রাখিতে হয়। পত্নী শতকম্ -এ আছে, মহাত্মা আদরমণি দেবীকে সমস্ত দেবদেবীগণ পূজা করেন। গুরু প্রণাম মন্ত্রে আছে, "দেবগীতগুণা সেই দেবীর চরণে, নমি নমি নমি আমি প্রণমি এক্ষণে।" অর্থাৎ দেবতাগণ তাঁহার গুণগান (পূজা) করেন। জীবনী গ্রন্থেও আছে দেবদেবীগণ আদরমণি দেবীকে বহু কর্ম্মেসাহায্যের কথা। ইহা কি? ইহাই পূজন। তাহা হইলে কাহাকে পূজা করিবেন? ভাবুন!
সাধকের নিকট গুরু হইতে প্রধান দেবদেবী নাই। সুতরাং প্রধানকে পরিত্যাগ করিয়া অপ্রধানকে কেন অবলম্বন করিবেন?
তাহা হইলে ঐ কাল্পনিক ছবি বা মূর্তির প্রয়োজন কি? গুরুদেব যাহা বলিয়াছেন, সেই মত অনুসারে সমস্ত দেবদেবীর শুধুমাত্র নাম ধরিয়া প্রগাঢ় ভক্তি করিতে আপত্তি কি? ইহাতে বিন্দুমাত্র পাপস্পর্শ হয় না। সত্যধর্ম্মীদের ইহাই একমাত্র পালনীয়।
আর ঐরূপ কাল্পনিক মূর্তি বা ছবি রেখে গুরুদেবের প্রতি ভক্তি ক্ষুণ্ন করিয়া সত্যধর্ম্মাবলম্বীদের অধঃপাতে যাইবার প্রয়োজন কি???

0 মন্তব্যসমূহ