পরমপিতার আর এক নাম গুরুনাথ।



             
       পরমপিতার অসীম কৃপায় সত্যধর্ম্মের আবির্ভাব হইয়াছে। আমাদের মতো পাপী-তাপীদের উদ্ধারের জন্যই হইয়াছে। কিন্তু আমরা নির্বোধের ন্যায় গুরুদেবকে পরমপিতার আসনে বসাইবার দরুণ যে ঘোর পাপে লিপ্ত হইবো তাহা কি একবাটিও কি ভাবিবো না। এই চরম কলুষিত অবস্থায় যদি নিয়া যাই তাহা হইলে গুরুদেবের এতো মূল্যবান জীবন আমাদের কারণে বৃথা হইয়া যাইবে। তাহা হইতে দিব না।

     অন্যান্য ধর্ম্মে গুরুকে মহান ও সর্ব্বাপেক্ষা উচ্চ স্থানে রাখিতে গিয়া পরমপিতার আসনে বসাইয়া দিয়াছে। ইহা প্রাচীন কাল হইতে চলিয়া আসিতেছে। এই দূর্ব্বিসহ অবস্থা প্রায় সর্ব্ব ধর্ম্মে দুই একটী ধর্ম্ম ছাড়া পৃথিবীময় একই রূপে ঐকদেশীকতা দেখা যায়।

     যেসব জায়গায় গুরুদেবের ছবি সম্মূখে রাখিয়া উপাসনা ও উৎসবাদি সম্পন্ন করিতেছেন তাহারা একটি বারও ভাবিতেছে না যে যখন গুরুদেব স্থূল শরীরে ছিলেন, তখন কি গুরুদেব বসিতেন আর সকলে তাহার মুখ মুখী বসিয়া উপাসনা বা উৎসব সম্পন্ন করিতেন? নিশ্চয়ই না? তাহা হইলে কেন আজ এই অবৈজ্ঞানিক কার্য্য অর্থাৎ মিথ্যা কার্য্য হইবে। কেননা তাহাতেও পরমপিতার আসনে বসাইবার সমান পাপ হইয়া বসে। যত শীঘ্র সম্ভব এইরূপ পাপকর কার্য্য যাহাতে বন্ধ হয়, ইহাই সবিনয় নিবেদন রইল। আশাকরি বিচক্ষণতার সহিত ভাবিবেন।

    উপাসনা চলাকালীন সময়ে গুরুর নাম ও স্মরণ দুই করা অনুচিত কারণ তাহাতে উপাসনায় ছেদ পড়িবার কারণে অপরাধ হইয়া বসে। আর উপাসনা কালে চক্ষু বন্ধ করিয়াই করিতে হয় তাহাতে ছবি থাকিল বা থাকিল না তাহাতে কি আইসে যায়? অতএব ইহা অবশ্যই বন্ধ হইবার প্রয়োজন কারণ আমরা নিরাকার বাদি। বাহিরের সাধারণ মানুষ উপাসনায় আসিয়া প্রথম দর্শনে বুঝিতেই না পারে আমরা নিরাকার বাদি তাহা হইলে মিথ্যায় প্রতিপন্ন হইতে হয়, কেননা গুরুদেবের ছবি সম্মূখে আছে তাহাতে তাহাদের মনে প্রথমেই উপস্থিত হয়, ইহারা ঐ মহাত্মার আরাধনা করিতেছে। কোনও এক জন ভক্তপ্রাণ বোবা আসিলে তিনিও একইরূপে ভাবীবে। কিন্তু সেই বোবা বেক্তি আমাদের পাপী বানাইয়া তিনি পুণ্য নিয়া গেলেন। কেননা ইহার কারণ ঐরূপ ব্যাবস্থা দেখিবার জন্যই ঐরূপ ভাবনা আসিল।

      সত্যধর্ম্মে সাকার উপাসনা নাই, কিন্তু অন্তরে ও বাহিরে দুই অবস্থায় প্রতিয়মান হইতেছে যে সাকারবাদ। ইহারই জন্য সত্যধর্ম্ম কলুষিত রূপ ধারণ করিয়াছে।


     উপাসনায় বসিবার পূর্ব্বেই গুরুদেবকে আহ্বান করিয়া বসিলাম এই মর্ম্মে যে তিনি না আসিলে আমার উপাসনায় একাগ্রতা ও উন্নতি কিছুই  হইবে না। অতএব গুরুদেবকে হৃদয় মন্দিরে স্থাপন করাইয়া এবং গুরুদেবের কোলে বসিয়া উপাসনা করিতেছি এই ভাব সহকারে করিতে হয়। তাহাতে একাগ্রতা অধিক হয়। কেননা সর্ব্বসময় স্মরণে রাখিতে হয় আমি গুরুর কোলে আছি, গুরু আমায় নিয়া উপাসনা করিতেছেন, ইহাতে অন্তরের অবস্থা পবিত্র থাকে এবং ঐ ঘোরতর পাপের কবলে পড়িতে হয় না।


                         -আদিষ্ট নিরুপম।