গুরু পূজা কেমনে হয়?




যাঁর সীমা আছে,আকার আছে,জন্ম এবং মৃত্যু আছে তার পূজা বা অর্চনা করা যায়। কিন্তু পরমেশ্বর যিঁনি সীমার মধ্যে অসীম, নিরাকার,অনন্ত গুণময় তাঁর উপাসনা করা যায়,আত্মায় পরমেশ্বর এঁর গুণের আভরণ করাকে উপাসনা বলা হয়।

গুরু পূজার মূল উদ্দেশ্য যদি বলতে হয় তাহলে গুরুদেব এঁর গুণকীর্তন এর মাধ্যমে তাঁর গুণাবলীকে বারংবার হৃদয়ে জাগিয়ে তোলার চেষ্টাকে একপ্রকার গুরু পূজা বলা হয়।


সেই গুণগুলি উপাসনা এবং সাধনা দ্বারা নিজের জীবনে প্রতিষ্ঠা করতে পারলে শিষ্যের যে পার্থিব এবং আধ্যাত্মিক উন্নতি সাধিত হয় তা গুরুদেব এঁর সন্তুষ্টির কারন। গুরুদেব প্রসন্ন হলে এই ভুবন প্রসন্ন হয় কারন এই সৃষ্টি জগৎকে তিঁনি নিজ গুণে অভেদ করে আছেন।


গুরু পূজা সুক্ষ্মই প্রধান, পার্থিব উপাচার ছাড়া ভক্তি ফুল,জ্ঞানরূপ বেলপাতা,প্রেম চন্দন সহযোগে চোখের জলে গুরু পূজায় নিজেকে সমর্পণ করাই উৎকৃষ্ট গুরু পূজা।


গুরুদেব গুরুপূজার গান এবং পদ্ধতি সমস্ত লিপিবদ্ধ করেছেন।জ্ঞানের অভাবে এতদিন পালন হয়নি, বর্তমান আদীষ্ট সাধক এসে এক একটি রত্ন আবিষ্কার করে আমাদের জীবনকে গুরুকৃপাময় করে তুলছেন।তিঁনি প্রকৃত গুরু পূজারী।


"গুরুতে অচলা ভক্তি এবং নিষ্ঠা" করতে পারা একজন সাধক সাধিকার কাছে স্বর্গ সুখ পাওয়া।হৃদয়কে গুরুভাবময় করতে পারলেই গুরুকৃপাময় জীবন উপভোগ করা যায়,প্রকৃত সুখের সন্ধান মেলে।পরমোন্নতির পথে ধাবিত হওয়া যায়।

সত্য ধর্ম্মে আদীষ্ট ভিন্ন কেউ গুরু হয়ে দীক্ষা কার্য সম্পন্ন করার গুণাবলী অর্জন করেন না। সত্য ধর্ম্মে গুরু,জন্ম জন্মান্তরের পাপ গ্রহন করে, অভেদ জ্ঞান করে দীক্ষারুপ পরম জন্ম দিয়ে থাকেন। আমারা যদি নিজেদের আত্মোন্নতির স্বার্থে গুরুর ওপর নির্ভরশীল হই, সত্য কে অবলম্বন করে তাঁর আদেশ পালনে যত্নশীল হই তবে আমাদের চরিত্রে নিষ্ঠা জন্ম নেবে । "গুরু বাক্য পালনই পুন্য , গুরু বাক্য লঙ্ঘনই পাপ,সাধক সাধিকার ইহা ভিন্ন পাপ পুণ্য নাই"।এই বাক্য অনুযায়ী ধীর স্থিরভাবে, বিচলিত না হয়ে কার্য করাকেই বলে গুরুতে অচলা ভক্তি।


*** সবাই যেটাকে পুন্য বলছে যেমন কল্পিত দেবদেবীর মূর্তিতে পূজা করা,সেই নরকের কার্য করতে ঈশ্বর গুরুনাথ নিষেধ করেছেন,তাঁর এই আদেশ আমরা যদি হাসি মুখে,অম্লান বদনে, প্রফুল্ল চিত্তে করতে পারি সেটা অবশ্যই গুরু ভক্তির অংশ এবং গুরু পূজা।যারা এটা জেনেও এখনও করছেন না,তারাই গুরুদেব এঁর যন্ত্রনার কারন। গুরু (কৃপাহি কেবলম, জয়গুরু)এসব বলে দেখানো ভক্তি করে তাতে লাভ কিছুই হবে না।


সত্য ধর্ম্মের সমস্ত নিয়ম যদি অক্ষরে অক্ষরে পালন করা যায় তাহলেই গুরু পূজার জন্য ধীরে ধীরে নিজেকে প্রস্তুত করা যায়। এক একটি একত্ব গুরুর চরনে সমর্পন করাই গুরু পূজা,যতক্ষণ না নিত্য ব্রহ্মদর্শন ঘটছে গুরু পূজা সম্পূর্ণ হয় না।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ